You dont have javascript enabled! Please enable it!

ফুলছড়ি গণহত্যা (সাঘাটা, গাইবান্ধা)

ফুলছড়ি গণহত্যা (সাঘাটা, গাইবান্ধা) সংঘটিত হয় ২রা জুন। এতে ২৩ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
২৩শে এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী ট্যাংক, কামান ও অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সাঘাটা উপজেলা ও ফুলছড়ি থানার নিয়ন্ত্রণ নেয়। তারা ফুলছড়ি থানার সার্কেল অফিস (উন্নয়ন)-এর টিটিডিসি ভবনে ক্যাম্প স্থাপন করে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। ২৬শে এপ্রিল বোনারপাড়ার ২ছাত্রলীগ- নেতা আমানত উল্যা, তৎকালীন জিআরপি থানার ওসি আব্দুল মান্নান, দারোগা আব্দুর সাত্তার, অছিম চেয়ারম্যান ও টিএক্সআর আব্দুর রাজ্জাককে বোনারপাড়া থেকে ধরে ফুলছড়ি ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে চরম নির্যাতনের পর ক্যাম্পের পার্শ্বে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে হত্যার মাধ্যমে ফুলছড়িতে গণহত্যা শুরু করে। নিহতদের লাশ তারা পাশের জমিতে পুঁতে রাখে। এটি গাইবান্ধার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত। ২৬শে এপ্রিলের ধারাবাহিকতায় ফুলছড়ি ও এর আশপাশের জনপদ থেকে স্বাধীনতাকামী মানুষদের ক্যাম্পে ধরে এনে চরম নির্যাতনের পর হত্যা করে বধ্যভূমিতে পুঁতে রাখা হতো। তাদের মধ্যে কাউকে গুলি করে, কাউকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে, কাউকে অর্ধমৃত অবস্থায় পুঁতে রাখত।
২রা জুন ঘটে ফুলছড়ির প্রধান গণহত্যা। পাকবাহিনী বোনারপাড়ার পার্শ্ববর্তী দলদলিয়া গ্রামের ভুবন মোহন সরকার, বসন্ত সরকার, বাচ্চা সরকার, শরৎ সরকার, নিশিকান্ত সরকার, কামিনী মোদক, মহেন্দ্র সরকার, শচীন সরকার, অশ্বিনী মোহন্ত, দেবক সরকার, শ্রীরাম মোহন্ত, ভিক্ষুরাম সরকার, গগন সরকার, নিবন্ধন সরকার, রতিকান্ত সরকার, রাজ চন্দ্র সরকার, বনবাস সরকার, রুহিনী সরকার, রাখাল সরকার, গজেন্দ্র সরকার, গজেন সরকার, দুর্গাপুর গ্রামের আকালুরাম চৌধুরী সহ ২৩ জনকে ফুলছড়িতে নিয়ে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়। ফুলছড়ি থানার সিংড়িয়া গ্রামের রুহিনী সরকার, প্রিয়নাথ সরকার, হরিদাস রাজভর, বরদা চরণ দাশ, হীরা লাল দাস ও বিজয় সরকারকে ৫ই মে ধরে এনে একইভাবে লাইন করে দাঁড় করিয়ে হত্যা করে। সাঘাটার মান্দুরা গ্রামের অশ্বিনী সরকার, চিথলীয়া গ্রামের জগমোহন সরকার, সিদ্ধেশ্বর সরকার, কামালেরপাড়া গ্রামের জয়মঙ্গল, রামপ্রসাদ দাশ, ঝাড়াবর্ষা গ্রামের গোকুলদাসকে হত্যা করা হয়। এছাড়া পাকিস্তানি বাহিনী, অবাঙালি ও রাজাকাররা রেল ও সড়ক পথে গাইবান্ধা মহকুমা ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে ধরে এনে চরম নির্যাতনের পর হত্যা করে। ফুলছড়ি থানা সদরের মানুষের রাতের বেলা পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক অত্যাচারিত মানুষের বুকফাটা কান্নায় ঘুম ভেঙ্গে যেত। স্বাধীনতার পর ফুলছড়ির মানুষ এ বধ্যভূমির চারপাশে বেড়া দেয় এবং পাশে একটি পাকা শহীদ মিনার নির্মাণ করে। [গৌতম চন্দ্ৰ মোদক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!