ফুলছড়ি থানা অপারেশন (ফুলছড়ি, গাইবান্ধা)
ফুলছড়ি থানা অপারেশন (ফুলছড়ি, গাইবান্ধা) পরিচালিত হয় ৪ঠা ডিসেম্বর। এতে মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় বিনাযুদ্ধে থানা দখল ও ২২টি রাইফেল হস্তগত করেন। এর পরের যুদ্ধে ২৩ জন পাকসেনা নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়। অপরপক্ষে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ২৫ জন আহত হন।
কোম্পানি কমান্ডার রোস্তম আলী খোন্দকার সাব-সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স মানকারচরে জরুরি প্রযোজনে অবস্থান করায় সেকেন্ড-ইন-কমান্ড (টু-আই-সি) গৌতম চন্দ্র মোদকের নেতৃত্বে এ অপারেশন পরিচালিত হয়। অপারেশনে ৬ জন প্লাটুন কমান্ডার ছিলেন। তাঁরা হলেন- সামছুল আলম, মহসিন আলী, নাজিমউদ্দিন, হাবিলদার তছলিম উদ্দিন, এনামুল হক ও ময়েজউদ্দিন। এই ৬ প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধার সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন আব্দুল জলিল তোতা, আবু বক্কর সিদ্দিক ও হামিদুল হক কাদেরী ঘটনার দিন ভোরবেলা প্লাটুন কমান্ডার সামছুল আলমের নেতৃত্বে ৩০ সদস্যের একটি মুক্তিযোদ্ধা দল ফুলছড়ি থানা আক্রমণ করে। তাঁরা প্রায় বিনাযুদ্ধে থানার পাকসেনা ও পুলিশদের পরাজিত এবং ২২টি রাইফেল হস্তগত করেন। এদিকে পাকিস্তানি সেনারা এ ঘটনার পর ফুলছড়ি ছেড়ে ওয়াপদা বাঁধ দিয়ে পাখিমারার দিকে পিছু হটে। এ-সময় সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার সীমানা সংলগ্ন ঘাঘট রেল ব্রিজ ও রোড ব্রিজে তাঁদের সঙ্গে হাবিলদার তছলিম উদ্দিন ও ময়েজউদ্দিন প্লাটুনের যুদ্ধ হয়। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলগত কারণে কিছুটা পিছিয়ে অন্য ৪ প্লাটুনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে চারদিক থেকে পাকিস্তানিদের ওপর আক্রমণ করেন। সাঘাটার গোবিন্দী নামক স্থানে সন্ধ্যার পর দুপক্ষের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে পাকিস্তানি বাহিনীর ২৩ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়। অপরপক্ষে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ২৫ জন আহত হন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন— কবেজ আলী (পিতা কমরউদ্দিন, কালাপানি, সাঘাটা), আফজাল হোসেন (পিতা করিমউদ্দিন মণ্ডল, খৈকরের পাড়া, সাঘাটা), আব্দুস সোবাহান (পিতা ইয়াছিন আলী ব্যাপারী, আমদির পাড়া, সাঘাটা), ওসমান গণি (পিতা বাহাদুর শেখ, খামার পবনতাইড়, সাঘাটা) এবং জাহেদুর রহমান বাদল (পিতা মোস্তাফিজুর রহমান দুদু মিয়া, উনচরখি, গাবতলী, বগুড়া)। এ-যুদ্ধের পর ফুলছড়ি উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। [জহুরুল কাইয়ুম ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড