ফুলছড়ি বধ্যভূমি ও গণকবর (ফুলছড়ি, গাইবান্ধা)
ফুলছড়ি বধ্যভূমি ও গণকবর (ফুলছড়ি, গাইবান্ধা) গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে সহস্রাধিক মানুষকে হতা করে কবর দেয়া হয় ফুলছড়ি থানা সদরে তিস্তামুখ ঘাটের নিকটবর্তী টিটিডিসি কমপ্লেক্স ও সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন)-এর কার্যালয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে। তার পাশেই ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে এ বধ্যভূমি ও গণকবরের অবস্থান। একাত্তরে এর আয়তন যা ছিল, নদীভাঙ্গনে বর্তমানে তা কমে গেছে। গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে বধ্যভূমি ও গণকবরের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৮ই এপ্রিল ফুলছড়িতে প্রবেশ করার পর থেকেই এ বধ্যভূমিতে হত্যাকাণ্ড শুরু করে। ২৬শে এপ্রিল পাকিস্তানি সেনারা পার্শ্ববর্তী সাঘাটা থানার বোনারপাড়া থেকে ছাত্রলীগ নেতা আমানউল্লা, জিআরপি থানার ওসি আব্দুল মান্নান, দারোগা আব্দুস সাত্তার, অছিমউদ্দিন চেয়ারম্যান ও রেলের টিএক্সআর আব্দুর রাজ্জাককে ধরে ফুলছড়ি ক্যাম্পে নিয়ে আসে। সেখানে তাঁদের ওপর নির্মম নির্যাতনের পর এ বধ্যভূমিতে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এখানে হত্যাকাণ্ড চলে ২রা ডিসেম্বর পর্যন্ত। সহস্রাধিক মানুষকে এখানে হত্যা করা হয়। ফুলছড়ি ছাড়াও পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা সদর থানা ও সাঘাটা থানার বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে আনা মানুষ এবং ট্রেনে ভ্রমণকারী যাত্রীরা এখানে হত্যার শিকার হন। এ কারণে শহীদদের অধিকাংশের পরিচয় পাওয়া যায়নি। যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে, তারা হলেন— গৌর চন্দ্র সরকার (পিতা গোবিন্দ চন্দ্র সরকার, দলদলিয়া, বোনারপাড়া, সাঘাটা), বসন্ত কুমার সরকার (পিতা বোচারাম সরকার, ঐ), ভুবন মোহন সরকার (পিতা রূপচান সরকার, ঐ), শরৎ চন্দ্র সরকার (পিতা রূপদাস সরকার, ঐ), বাচ্চা চন্দ্র সরকার (পিতা বোচারাম সরকার, ঐ), নিশিকান্ত সরকার (পিতা রামমোহন সরকার, ঐ), শচীন্দ্র চন্দ্র সরকার (পিতা হরচন্দ্র সরকার, ঐ), অশ্বিনী কুমার মোহন্ত (পিতা ভরসারাম মোহন্ত, ঐ), দেবক চন্দ্র সরকার (পিতা কমল চন্দ্র সরকার, ঐ), শ্রীদাম চন্দ্র মোহন্ত (পিতা পবনরাম মোহন্ত, ঐ), ভিক্ষু রাম সরকার (পিতা রামমোহন সরকার, ঐ), গগন চন্দ্র সরকার (পিতা গদাধর সরকার, ঐ), আকালু রাম চৌধুরী (পিতা রামমোহন চৌধুরী, দুর্গাপুর, বোনারপাড়া, সাঘাটা), কামিনী কান্ত মোদক (পিতা উমাকান্ত মোদক, ঐ), মহেন্দ্র নাথ সরকার (পিতা রাম কুমার সরকার, দলদলিয়া, বোনারপাড়া, সাঘাটা), নিরঞ্জন সরকার (পিতা রামেন্দ্র নাথ সরকার, ঐ), রতি চন্দ্র সরকার (পিতা উদ্ধব কান্ত সরকার, ঐ), রাজচন্দ্র সরকার (পিতা কাশীনাথ সরকার, ঐ), বনবাসী সরকার (পিতা বোদারাম সরকার, ঐ), রুহিনী কান্ত সরকার (পিতা গেন্দুরাম সরকার, ঐ), রাখাল চন্দ্র সরকার (পিতা গদাধর সরকার, ঐ), আমানত উল্ল্যা (পিতা শাহাবুউদ্দিন, বোনারপাড়া, সাঘাটা), আবুল হোসেন (পিতা মানিকউল্লা শেখ, ঐ), জহর আলী (পিতা জরিপ শেখ, রাঘবপুর, বোনারপাড়া, সাঘাটাed কছিমউদ্দিন ব্যাপারী (পিতা শরিয়তউল্লা ব্যাপারী, ডিমলাপদুম শহর, সাঘাটা), অশ্বিনী কুমার সরকার (পিতা লক্ষ্মীকান্ত সরকার, মান্দুরা, ভরতখালী, সাঘাটা), বিশ্বেশ্বর সরকার (পিতা জগমোহন সরকার, চিথুলিয়া, ভরতখালী, সাঘাটা), জগমোহন সরকার (পিতা নবীন চন্দ্র সরকার, ঐ), শেখ রজ্জব আলী (পিতা ওসমান আলী, ভরতখালী, সাঘাটা), জয়মঙ্গল (পিতা কিনু কবিরাজ, কামালেরপাড়া, সাঘাটা), গোকুল চন্দ্ৰ দাশ (পিতা দীপুরাম দাশ, ঝাড়াবর্ষা, ঘুড়িদহ, সাঘাটা), মহেন্দ্ৰ নাথ সরকার (পিতা রামকুমার সরকার, হরিরামপুর, গোবিন্দগঞ্জ), রোহিণীকান্ত সরকার (পিতা কৈলাশ চন্দ্ৰ সরকার, সিংড়িয়া, উদাখালী, ফুলছড়ি), প্রিয়নাথ সরকার (পিতা মদন মোহন সরকার, ঐ), হরিদাস রাজভর (পিতা দুখনা রাজভর, ঐ), বরদাচরণ দাশ (পিতা ইন্দ্ৰমোহন দাশ, ঐ), হীরালাল দাশ (পিতা শীতল চন্দ্র দাশ, ঐ), বিজয় কুমার সরকার (পিতা রজনীকান্ত সরকার, ঐ), সুরুজ্জামান (পিতা ইউসুফ আলী, গজারিয়া, ফুলছড়ি), আফসার (পিতা পচু বেপারী, ঐ), মফিজল (পিতা মেছের সরকার, ঐ), নারায়ণ (গজারিয়া, ফুলছড়ি), জগমোহন সরকার (কাতলামারি, গজারিয়া, ফুলছড়ি), গেন্দু মিয়া (ফুলছড়ি, গজারিয়া, ফুলছড়ি), বাদশা মিয়া (পিতা তরষা আলী, বাউসি, গজারিয়া, ফুলছড়ি), মোজাম্মেল (পিতা মফেল আকন্দ, ঐ), লিজার (পিতা গেদলা, ঐ), কবেজ আলী (পিতা করিম, ঐ), আব্দুল মান্নান (ওসি) (রেলওয়ে থানা, বোনারপাড়া, সাঘাটা), আব্দুস সাত্তার (দারোগা) (ঐ), আব্দুর রাজ্জাক (টিএক্সআর) (রেলওয়ে জংশন, বোনারপাড়া, সাঘাটা), নুর বক্স (ভাঙামোড়, বোনারপাড়া, সাঘাটা), আবু আলী (ঐ), পচা মিয়া (ঐ), রহিমউদ্দিন (ঐ), কাশেম (বানাতিপাড়া, বোনারপাড়া, সাঘাটা) ও বছির উদ্দিন (রাঘবপুর, বোনারপাড়া, সাঘাটা)। পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করে বোনারপাড়া রেল জংশন ও ফুলছড়ি রেলওয়ে ঘাটে কর্মরত অবাঙালি কর্মচারীরা। [জহুরুল কাইয়ুম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড