বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মযাজক, সমাজ ও মানব সেবী ফাদার উইলিয়াম পি ইভান্স সিএসসি
ফাদার উইলিয়াম পি ইভান্স সিএসসি (১৯১৯-১৯৭১) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মযাজক, সমাজ ও মানব সেবী, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে বাংলাদেশে বিভিন্ন চার্চে পুরোহিতের দায়িত্ব পালনকারী, মুক্তিযুদ্ধকালে বিপন্ন মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও চিকিৎসা সেবাদাতা এবং বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে ৭১-এ শহীদ।
উইলিয়াম পি ইভান্স ১৯১৯ সালের ১৫ই জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের পিটসফিল্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পিটসফিল্ড হাইস্কুলে অধ্যয়ন করেন। ১৯৪১ সালে তিনি নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া তিনি ওয়াশিংটন ডিসির হলিক্রস ফরেন মিশন সেমিনারি থেকে ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ১৯৪১ সালে হলিক্রস মিশনে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৪৫ সালে তিনি পুরোহিত হিসেবে অভিষিক্ত হন। মানব সেবায় ব্রতী হয়ে তিনি ১৯৪৫ সালে অবিভক্ত ভারতের তৎকালীন পূর্ববঙ্গে (বর্তমান বাংলাদেশ) আগমন করেন। তিনি প্রথমে ঢাকার তুইতাল হলি স্পিরিট চার্চে যোগদান করেন। অতঃপর তিনি ময়মনসিংহের বিডুইডাকুনি ও বালুচড়া ক্যাথলিক চার্চ, সিলেটের শ্রীমঙ্গল, ঢাকার হলিক্রস ক্যাথেড্রাল, ঢাকার বান্দুরা ইত্যাদি ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি গির্জায় দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৭ সাল থেকে শহীদ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ঢাকার নবাবগঞ্জের গোল্লার সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার গির্জায় পুরোহিত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবাদী ধর্মযাজক ফাদার উইলিয়াম পি ইভান্স বিপন্ন মানুষদের খাদ্য, আশ্রয় ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে সহায়তা করেন। এছাড়া আহত মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও চিকিৎসা সেবা প্ৰদান করেন। ৭১-এর ১৩ই নভেম্বর ইছামতী নদীর পাড়ে নবাবগঞ্জ ঘাটে সিএসসি পাকিস্তানি সৈন্যরা তাঁকে অমানবিক নির্যাতন করে নির্মমভাবে হত্যা করে।
মানবতার সেবায় আত্মনিবেদন, মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান ও প্রাণোৎসর্গের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০১২ সালের ২৭শে মার্চ শহীদ ফাদার উইলিয়াম পি ইভান্স-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড