You dont have javascript enabled! Please enable it! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ইটালীয় বংশোদ্ভূত খ্রিষ্টধর্ম প্রচারক ফাদার মারিনো রিগন - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ইটালীয় বংশোদ্ভূত খ্রিষ্টধর্ম প্রচারক ফাদার মারিনো রিগন

ফাদার মারিনো রিগন (১৯২৫-২০১৭) ইটালীয় বংশোদ্ভূত খ্রিষ্টধর্ম প্রচারক, মানবদরদী, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বন্ধু ও সম্মানসূচক নাগরিক। ১৯২৫ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি ইটালির ভেনিসের অদূরে ভিচেঞ্জায় তাঁর জন্ম। ১৯৫৩ সালে ধর্ম প্রচার ও মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে সুন্দরবন সংলগ্ন মংলার শেলাবনিয়া গ্রামে তিনি তাঁর স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন। সেখানে তিনি সেন্ট পলস চার্চ, সেন্ট পলস হাসপাতাল, সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয়সহ একাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। অত্র অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান ও তাদের শিক্ষা বিস্তারে তিনি অশেষ অবদান রাখেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যর প্রতি তাঁর ছিল গভীর অনুরাগ। তিনি নিজে বাংলা ভাষা শেখেন এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসিমউদ্দীন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, লালন প্রমুখের একাধিক কাব্য গ্রন্থ, বই ও গান ইটালি ভাষায় অনুবাদ করেন।
৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের গোপনে আশ্রয়দান, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠিত চার্চে চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করে সেখানে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলা ইত্যাদিসহ নানাভাবে তিনি অবদান রাখেন। উল্লেখ্য, ফরিদপুর অঞ্চলের হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত উদ্দীন, বীর বিক্রম- মুক্তিযুদ্ধকালে আহত হয়ে তাঁর চিকিৎসা ক্যাম্পে সেবা-শুশ্রূষা নিয়ে সুস্থ হয়ে পুনরায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করে। এছাড়া ২০১২ সালে সরকার কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার’ এওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়।
ফাদার রিগন ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। তাঁর অন্তিম ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর পর যেন বাংলাদেশে তাঁকে সমাহিত করা হয়। ২০১৭ সালের ২০শে অক্টোবর ৯২ বছর বয়সে তিনি ইটালিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়ে এক বছর পর ইটালি থেকে তাঁর মৃতদেহ বাংলাদেশে এনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ২১শে অক্টোবর শেলাবনিয়া গ্রামে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সেন্ট পলস গির্জার পাশে সমাহিত করা হয়। তাঁর শবযাত্রায় অত্র অঞ্চলের সর্বস্তরের কয়েক হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে এবং তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে। [হারুন-অর-রশিদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড