ফারাংপাড়া যুদ্ধ (দুর্গাপুর, নেত্রকোনা)
ফারাংপাড়া যুদ্ধ (দুর্গাপুর, নেত্রকোনা) সংঘটিত হয় ২৮শে জুন। এতে ৬৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। অপরপক্ষে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও কয়েকজন আহত হন।
নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর থানার ফারাংপাড়া নোম্যান্স ল্যান্ডে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ক্যাম্প ছিল। শুরুতে কোম্পানি কমান্ডার আলতাব হোসেন এ ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন। জুলাই মাসের শেষে এ ক্যাম্পের দায়িত্ব পান কোম্পানি কমান্ডার শামসুজ্জোহা। দুর্গাপুর থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর সৈন্যরা সীমান্তবর্তী রাস্তা দিয়ে কলমাকান্দায় যাতায়াত করত। তাদের প্রতিরোধ করার জন্য প্রায় প্রতিদিন পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের খণ্ডযুদ্ধ হতো। মূলত বিজয়পুরস্থ পাকিস্তানিদের ক্যাম্প ও দুর্গাপুর-কলমাকান্দা রাস্তায় পাকিস্তানি বাহিনীকে আঘাত করতে ফারাংপাড়াকে মুক্তিযোদ্ধারা ব্যবহার করতেন।
জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে দুর্গাপুর থানার টাঙ্গাটি, ফারাংপাড়া ও ফান্দাসহ নেত্রকোনা মহকুমা (বর্তমান জেলা) সীমান্তে পাকবাহিনীর ক্যাম্পগুলোর ওপর মুক্তিযোদ্ধারা ক্রমাগতভাবে আক্রমণ শুরু করেন। প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা কম থাকায় আক্রমণের মাত্রা তেমন তীব্র ছিল না। মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। জুন মাসের শেষে বাঘমারায় থাকা তোফাজ্জল হোসেন চুন্নুর কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়পুরস্থ পাকহানাদার বাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৮শে জুন ইপিআর হাবিলদার হারুন-অর-রশিদের নেতৃত্বে ৯৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল বিজয়পুরস্থ পাকবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলা এ আক্রমণে পাকসেনারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এ-যুদ্ধে পাকবাহিনীর ৬৫ জন সৈন্য নিহত হয়। হানাদাররা নৌকাযোগে তাদের লাশ প্রথমে জারিয়া, পরে সেখান থেকে বিশেষ ট্রেনে ময়মনসিংহে প্রেরণ করে। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ চন্দ্র বিশ্বাস (কুড়ালিয়া, দুর্গাপুর) মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ ও অন্য কয়েকজন আহত হন। শহীদ সন্তোষের নামে দুর্গাপুর পার্কের নামাকরণ করা হয়েছে। আগস্ট মাসের শেষের দিকে নোয়াপাড়া গ্রামে পাকবাহিনীর ওপর মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করেন। এতে ৭ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। [জুলফিকার আলী শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড