বীর প্রতীক ফারুক আহমেদ পাটোয়ারী
ফারুক আহমেদ পাটোয়ারী, বীর প্রতীক সিপাহি ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার সিংহেরগাঁও ইউনিয়নের হুগলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সোনামিয়া পাটোয়ারী এবং মাতার নাম রতুননেছা।
ফারুক আহমেদ পাটোয়ারী পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ২ মাসের ছুটি নিয়ে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। চাকরিকালে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বাঙালিদের প্রতি বৈষম্য ও শোষণ তিনি প্রত্যক্ষ করেন।
২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু এবং ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর তিনি চাকরিতে যোগদান না করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রথমে তিনি নিজ এলাকার ছাত্র-যুবকদের সঙ্গে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ২নং সেক্টরের নির্ভয়পুর সাব- সেক্টরে যুদ্ধ করেন। এখানে অনেগুলো গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দেন।
মুক্তিযুদ্ধকালে এক সময় ফারুক আহমেদ পাটোয়ারী সহযোদ্ধাদের নিয়ে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাশিয়ালীর হাজী বাড়িতে ক্যাম্প স্থাপন করেন। ক্যাম্পে অবস্থানকালে গোপন সূত্রে খবর পান যে, হানাদার বাহিনীর একটি দল ১৫-১৬টি নৌকাযোগে শাশিয়ালীর দিকে এগিয়ে আসছে। সঙ্গে-সঙ্গে তিনি শত্রুদের এম্বুশ করার সিদ্ধান্ত নেন। ফায়ারিং রেঞ্জের মধ্যে আসামাত্রই মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে তাদের ওপর আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আকস্মিক আক্রমণে বহুসংখ্যক পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকার নিহত হয় এবং তাদের ৪-৫টি নৌকা ডুবে যায়। এ-সময় কয়েকজন হানাদার সদস্য পার্শ্ববর্তী আখক্ষেতে আশ্রয় নেয়। সেখানে ফারুক আহমেদ পাটোয়ারী তাদের ওপর আক্রমণ চালান। হানাদার সদস্যরা পাল্টা আক্রমণ না করে চুপচাপ থাকে। কয়েক মিনিট নীরবে কেটে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা ধারণা করেছিলেন আর কোনো শত্রুসেনা অবশিষ্ট নেই। ফারুক আহমেদ পাটোয়ারী পজিশন থেকে উঠে দাঁড়ানোমাত্র পাকিস্তানি সৈন্যরা তাঁকে লক্ষ করে গুলি চালায়। তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। সহযোদ্ধারা তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু যথাসাধ্য চেষ্টার পরও ফারুক আহমেদ পাটোয়ারীকে প্রাণে বাঁচানো যায়নি। তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তাঁকে নিজ বাড়ি হুগলিতে সমাহিত করা হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে ফারুক আহমেদ পাটোয়ারীর বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাঁকে ‘বীর প্রতীক’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করা হয়। তাঁর স্ত্রীর নাম জাহানারা বেগম। এ দম্পতি ১ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক-জননী। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড