বীর প্রতীক ফারুক ই আজম
ফারুক ই আজম, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫০) নৌকমান্ডো ও অপারেশন জ্যাকপট-এর একটিতে উপ- অধিনায়কের দায়িত্ব পালনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫০ সালে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মনির আহাম্মদ চৌধুরী এবং মাতার নাম জান্নাতুল ফেরদৌস। এ দম্পতির ৪ ছেলে ও ৫ কন্যার মধ্যে তিনি জ্যেষ্ঠ। তিনি ১৯৬৬ সালে কাটির হাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি চাকরি নিয়ে খুলনায় যান এবং একটি জলপরিবহন কোম্পানিতে সুপারভাইজারের চাকরি করেন।
ফারুক ই আজম ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ৬ই এপ্রিল তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চট্টগ্রামে যান। ৭ই মে তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ১নং সেক্টরের হরিণা ক্যাম্পে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। হরিণা থেকে রিক্রুট হয়ে তিনি ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার পলাশীতে স্থাপিত নৌকমান্ডো প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যান। সেখানে জুন ও জুলাই মাস নিবিড় কমান্ডো প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। ১৫ই আগস্ট রাতে সমন্বিত নৌকমান্ডো অপারেশন জ্যাকপট-এর উপ-অধিনায়ক হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেন। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে তিনি চট্টগ্রাম বহির্নোঙ্গর, সল্টগোলা ও গুপ্তখাল বন্দরে ৩টি সফল অপারেশনে কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব প্রদান করেন। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তাঁর নেতৃত্বাধীন কমান্ডোরা শীতলক্ষ্যায় সাইলো গুদামের জেটি ও নদীতে ৩টি জাহাজ ডুবিয়ে দেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ফারুক ই আজমকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের কমান্ডার ও কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের ডেপুটি সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। এ-সময় চট্টগ্রাম অঞ্চলের অনেক মুক্তিযোদ্ধা সেনাবাহিনী, বিডিআর (বর্তমান বিজিবি), ব্যাটালিয়ন আর্মড পুলিশ ও আনসার বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানে পুনর্বাসিত হন। ১৯৮৩ সাল থেকে তিনি দেশী কাপড় ও পোশাকের মান উন্নয়নের জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের তাঁতিদের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। তিনি পোশাক ডিজাইন করে জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হন। ১৯৮৯ সালে তিনি চট্টগ্রামে ‘বিজয়মেলা’ প্রতিষ্ঠা করেন। এ বিজয়মেলা দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ ছাড়াও স্থানীয় কারুশিল্পীদের পণ্য বাজারজাতের মাধ্যমে তাঁদের আর্থিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন সাধিত হয়। বর্তমানে তিনি মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর চট্টগ্রামের ট্রাস্টির দায়িত্ব পালন করছেন। সামাজিক ব্যবসা কেন্দ্র, চট্টগ্রাম-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে তিনি তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। তিনি ৪ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম শামীমা ফারুক। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড