You dont have javascript enabled! Please enable it!

ফয়’স লেক অপারেশন (চট্টগ্রাম)

ফয়’স লেক অপারেশন (চট্টগ্রাম) পরিচালিত হয় ৩০শে আগস্ট। চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম উল্লেখযোগ্য নিদর্শন ফয়’স লেককে পাকবাহিনী বধ্যভূমি হিসেবে ব্যবহার করত। তারা বাঙালিদের ধরে এনে এখানে নির্মমভাবে হত্যা করত এবং নিহতদের রক্তাক্ত লাশ লেকে ভাসিয়ে দিত। ফলে লেকের নীল জল রক্তে লাল হয়ে যেত।
পাকবাহিনী এ হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য এখানে পাথর, ছুরি ও গাছ দিয়ে একটি মৃত্যুফাঁদ তৈরি করেছিল। তারা মাঝারি ও ছোট সাইজের দুটি পাথর, ছোট-বড় ধারালো ছুরি এবং দুটি শক্ত গাছ মাটিতে পুঁতে এ ফাঁদ তৈরি করেছিল। গাছদুটির সঙ্গে হুকে বাঁধা থাকত কয়েকটি রশি এবং প্রতিটি রশির মাথায় লাগানো হুক মাটিতে পোঁতা হুকের সঙ্গে লাগিয়ে রাখা হতো। বাঙালিদের ধরে এনে প্রথমে পাথরের ওপর চিৎ করে শুইয়ে দেয়া হতো। তারপর হুকওয়ালা রশি দিয়ে দেহের বিভিন্ন অংশ বেঁধে দিত। এরপর খুনিরা ছোট ছুরি দিয়ে বন্দিদের পেট চিরে দিত, আর বড় ছুরি দিয়ে তাদের জবাই করত। এভাবে অসহায় বাঙালিদের হত্যা করার এক ভয়ঙ্কর কৌশল পাকবাহিনী এখানে ব্যবহার করত।
পাকবাহিনীর এরূপ নির্মম হত্যার প্রতিশোধ নিতে মুক্তিযোদ্ধারা ফয়’স লেকে অপারেশন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেন। অপারেশনের মূল পরিকল্পনা করেন ডা. মাহফুজুর রহমান। তাঁর সঙ্গে অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন আব্দুল্লাহ আল হারুন, ডা. জাহাঙ্গীর কবির, ডা. আলাউদ্দিন, ফয়েজুর রহমান, আবদুল আজিজ খান, মনছুর ও মফিজসহ ২৫-৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা।
ফয়’স লেক এলাকায় পাহাড়ের ওপর ছিল একটি বিদ্যুৎ ট্রান্সমিটার। এখান থেকেই পাকসেনারা বিদ্যুৎ পেত। সিদ্ধান্ত হয় এ ট্রান্সমিটারটি ধ্বংস করা হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অপারেশনের দিন গভীর রাতে পাকবাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ট্রান্সমিটারে বিস্ফোরক স্থাপন করেন। তারপর জ্বলন্ত মশার কয়েলের সঙ্গে কর্ডের সংযোগ ঘটিয়ে বিস্ফোরণ ঘটান। ফলে সমগ্র এলাকা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। কয়েকদিন পাকসেনাদের ক্যাম্পে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। এ অপারেশনের সাফল্য ফয়’স লেক এলাকায় পাকবাহিনী ও রাজাকারদের তৎপরতাকে সাঙ্ঘাতিকভাবে বাধাগ্রস্ত করে। [সাখাওয়াত হোসেন মজনু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!