You dont have javascript enabled! Please enable it! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের কবি ও সাংবাদিক ফয়েজ আহমাদ ফয়েজ - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের কবি ও সাংবাদিক ফয়েজ আহমাদ ফয়েজ

ফয়েজ আহমাদ ফয়েজ (১৯১১-১৯৮৪) পাকিস্তানের কবি ও সাংবাদিক। তিনি ১৯১১ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের (বর্তমান পাকিস্তানের) পাঞ্জাব প্রদেশের নারওয়াল জেলার কালা কাদের
(বর্তমান ফয়েজ নগর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শিয়ালকোটের চার্চ মিশন বিদ্যালয় থেকে ১৯২১ সালে আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করার পর তিনি ১৯২৭ সালে শিয়ালকোটের সরকারি মুরে কলেজ থেকে আরবিতে স্নাতক ও ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর এবং লাহোরের ওরিয়েন্টাল কলেজ থেকে ১৯৩৩ সালে আরবিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৩৫-৪০ সময়ে বেশ কয়েকটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৩৬ সালে তিনি প্রগতিশীল লেখক আন্দোলনে যোগ দেন এবং ১৯৩৮-৪৬ সময়ে মাসিক উর্দু ম্যাগাজিন আদাব-ই-লতিফ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ক্যাপ্টেন পদে যোগদান করেন এবং লে. কর্নেল হিসেবে ইস্তফা দিয়ে সে বছরই (১৯৪৭ সালে) দি পাকিস্তান টাইমস পত্রিকায় যোগদান করেন। পরবর্তীকালে তিনি আরো বেশ কয়েকটি পত্রিকায় কাজ করেন। তিনি পাকিস্তান আর্ট কাউন্সিলে যোগদান করে সম্পাদক (১৯৫৯- ৬২) ও সহ-সভাপতির (১৯৬৪) দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৪ সালে হাজি আবদুল্লাহ হারুন সরকারি কলেজে রেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একাধিক পুস্তক রচনা করেন। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৬২ সালে লেনিন শান্তি পুরস্কার ও পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ১৯৯০ সালে নিশান-ই-ইমতিয়াজ খেতাব লাভ করেন। এছাড়াও অনেক পুরস্কারপ্রাপ্ত হন। তিনি ১৯৮৪ সালের ২০শে নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে ফয়েজ আহমাদ ফয়েজ গণহত্যা ও নিপীড়িত মানুষের দুঃখ-বেদনার ওপর কবিতা ও নিবন্ধ রচনা করেন এবং গণহত্যার প্রতিবাদ করে বিবৃতিতে স্বাক্ষর প্রদান করেন। তাঁর এ ভূমিকার জন্য পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাঁকে প্রায়শ ভয়ভীতি প্রদর্শন করত, কিন্তু তিনি তাঁর সত্যনিষ্ঠ কার্যসম্পাদনে অটল ছিলেন। গণহত্যার প্রতিবাদে তিনি ২টি কবিতা (১৯৭১) ও বাংলাদেশ সফর শেষে পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে আরেকটি | কবিতা লেখেন (১৯৭৪)। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের পক্ষ অবলম্বন করলে পাকিস্তান সরকার তাঁকে লেনিন শান্তি পুরস্কার প্রত্যাখান করতে বললে তিনি তাতে সম্মত হননি এবং বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেন। তাঁর রচিত বিখ্যাত হাম কে ঠহরে আজনবী কবিতাটি তিনি বঙ্গবন্ধুকে উপহার দিয়েছিলেন (১৯৭৪)। পাকিস্তানি হয়েও তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে সংঘটিত নৃশংসতার জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমা প্রার্থনার তিনি দৃঢ় সমর্থক ছিলেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২৪শে মার্চ ২০১৩ ফয়েজ আহমাদ ফয়েজ-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড