বীর উত্তম ফয়েজ আহমেদ
ফয়েজ আহমেদ, বীর উত্তম (১৯৪০-১৯৭১) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪০ সালে ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার পশ্চিম অলকা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জাবেদ আলী এবং মাতার নাম আয়েশা খাতুন। তিনি ছিলেন এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম জাহানারা বেগম৷
১৯৭১ সালে ফয়েজ আহমেদ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সুবেদার পদে যশোর সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ৩০শে মার্চ পাকিস্তানি সৈন্যদের দ্বারা যশোর সেনানিবাসের বাঙালি সৈন্যরা আক্রান্ত হলে ফয়েজ আহমেদ বাঙালি স্যৈদের সঙ্গে মিলে প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করেন। প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে তিনি যশোর জেলার চৌগাছায় মেজর মো. হাফিজ উদ্দিনের নেতৃতে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেন এবং অনেকগুলো সফল এম্বুশ ও গেরিলা অপারেশনে অংশ নেন। জুন মাসে ব্রিগেড ফোর্স গঠন করা হলে ফয়েজ আহমেদ প্রায় ৮০০ সহযোদ্ধাসহ তেলঢালায় ‘জেড’ ফোর্সের প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে সুবেদার হিসেবে যুক্ত হন। তিনি বৃহত্তর সিলেট জেলার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে অসাধারণ বীরত্বের পরিচয় দেন।
মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৩ই ডিসেম্বর ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের চারটি কোম্পানি ব্রাভো, ডেলটা, আলফা ও চার্লি এবং গণবাহিনীর বেশকিছু সদস্য সিলেট শহরের উপকণ্ঠে এম সি কলেজ সংলগ্ন পাকিস্তানি বাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষা ঘাঁটি আক্রমণ করেন। ফয়েজ আহমেদ ছিলেন ব্রাভো কোম্পানির সঙ্গে। পাকিস্তানি সৈন্যরা ভারী অস্ত্রের সাহায্যে পাল্টা আক্রমণ চালায়। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের গোলার আঘাতে ফয়েজ আহমেদ শহীদ হন। উল্লেখ্য, ভারতীয় মিত্রবাহিনীর বিমান আকাশ থেকে পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানে হামলা চালালে তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ- যুদ্ধে প্রায় শতাধিক পাকিস্তানি সৈন্য নিহত এবং বহু সংখ্যক আহত হয়। অন্যদিকে ব্রাভো ও ডেল্টা কোম্পনির ২০জন “সৈন্য শহীদ এবং বেশ কয়েকজন আহত হন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ সুবেদার ফয়েজ আহমদের অপরিসীম বীরত্ব ও জীবন উৎসর্গের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে “বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৩৭, খেতাবের সনদ নং ৬২)। [সাজাহান মিয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড