You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর বিক্রম ফরিদউদ্দিন আহমেদ

ফরিদউদ্দিন আহমেদ, বীর বিক্রম (১৯৪১-১৯৭১) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪১ সালে ত্রিপুরার বাগমা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আসাদ আলী ভূঁইয়া এবং মাতার নাম আমেনা বেগম।
তিনি ত্রিপুরার বাগমা ও জানজুরিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯৪৭ সালে তাঁদের পরিবার ত্রিপুরা থেকে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার পাগৈ গ্রামে স্থায়ীভাবে চলে আসে। ফরিদউদ্দিন আহমেদ কুমিল্লায় আইএ পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।
ফরিদউদ্দিন আহমেদের কর্মজীবন শুরু হয় পাকিস্তান নৌবাহিনীত চাকরির মধ্য দিয়ে। ১৯৬২ সালে তিনি নৌবাহিনীতে যোগ দেন। তাঁর প্রথম কর্মস্থল ছিল চট্টগ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম ও পশ্চিম পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পাকিস্তান নৌবাহিনীর সদস্য হিসেবে তিনি ইন্দোনেশিয়া যান। ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে ছুটিতে তিনি দেশের বাড়ি আসেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি পশ্চিম পাকিস্তান না গিয়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে যোগ দেন। তিনি মুক্তিবাহিনীর নৌ-উইং-এ যোগদান করেন।
বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর নৌ-উইং-এ ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ” নামে দুটি গানবোট ছিল। ৩রা ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায় শুরু হলে মুক্তিযোদ্ধারা চালনা বন্দর ও খুলনা নৌঘাঁটি দখলের সিদ্ধান্ত নেন। এ লক্ষ্যে একটি নৌ-অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করা হয়। এ অভিযানে অফিসার ইন টেকনিকাল ছিলেন ভারতীয় কমান্ডার এম এন সামন্ত। অভিযানে গানবোট পদ্মা ও পলাশ-এর সঙ্গে ভারতীয় গানবোট পানভেল ও চিত্রাঙ্গদা-ও যোগ দেয়। ৬ই ডিসেম্বর ভারতের হলদিয়া নৌঘাঁটি থেকে যাত্রা করে ৯ই ডিসেম্বর গানবোটগুলো মংলা বন্দরে পৌঁছে। ১০ই ডিসেম্বর চিত্রাঙ্গদা- কে মংলায় রেখে পানভেল, পদ্মা ও পলাশ লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সামনে পানভেল এবং পেছনে পদ্মা ও পলাশ। গানবোট পদ্মায় অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ফরিদউদ্দিন আহমেদও ছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গানবোটগুলো খুলনা শিপিয়ার্ডের কাছাকাছি এলে পদ্মার নাবিকরা ২টি জঙ্গি বিমান দেখতে পান। তাঁরা শত্রুপক্ষের বিমান ভেবে এগুলোর ওপর গুলি করার অনুমতি চান। কিন্তু কমান্ডার এম এন সামন্ত এগুলোকে ভারতীয় বিমান বলে গুলি না করার নির্দেশ প্রদান করেন। একটু পর এ বিমান দুটি ফিরে এসে প্রথমে পদ্মায় এবং পরে পলাশ-এর ওপর গোলাবর্ষণ করে। ফলে গানবোট দুটিতে আগুন ধরে যায়। এতে ফরিদউদ্দিন-সহ ভারতীয় ও বাংলাদেশের নাবিক ও যোদ্ধাদের কয়েকজন শহীদ ও অনেকে আহত হন। ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ ঘটনা ঘটেI
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা ও আত্মদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ফরিদউদ্দিন আহমেদকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ২০৫, খেতাবের সনদ নম্বর ১৩০)। ফরদউদ্দিন আহমেদ খুবই নিৰ্ভীক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম রুপিয়া বেগম। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!