You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর উত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার - সংগ্রামের নোটবুক

বীর উত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার

ফজলুর রহমান খন্দকার, বীর উত্তম (শহীদ ১৯৭১) শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হোসেন আলী খন্দকার এবং মাতার নাম আমিরুন নেছা। তিনি তিন কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মমতাজ বেগম। ফজলুর রহমানের শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে। এরপর বাকেরগঞ্জ হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি ইপিআর বাহিনীতে যোগদান করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে ফজলুর রহমান ইপিআর-এর রংপুর সেক্টরে সুবেদার পদে কর্মরত ছিলেন। এ-সময় তিনি ছুটি কাটাচ্ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক গণহত্যা আর নির্যাতন শুরু করলে তিনি কর্মক্ষেত্রে যোগদান না করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে রংপুর ও লালমনিরহাটে মুক্তাঞ্চলে তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকগুলো ট্রেনিং ক্যাম্প গড়ে ওঠে। সহযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে বেশ কয়েকটি প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে তিনি ৬নং সেক্টরে প্রথমে সাহেবগঞ্জ এবং পরে পাটগ্রাম সাব-সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন।
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধায় ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর একটি শক্ত প্রতিরক্ষা ঘাঁটি। এ ঘাঁটিতে ৪ কোম্পানি পাকিস্তানি সৈন্য ও প্রায় দেড় হাজার রাজাকার অবস্থান করছিল। পাটগ্রাম সাব-সেক্টরে অধিনায়ক ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান, বীর বিক্রম-এর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ২৭শে সেপ্টেম্বর ভোররাতে হাতীবান্ধা কলেজ, সিও অফিস এবং নদীর পাড়ে পাকিস্তানিদের অবস্থানের ওপর ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করেন। এ-যুদ্ধে সুবেদার ফজলুর রহমান ছিলেন একটি কোম্পানির নেতৃত্বে। সারাদিন প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। সন্ধ্যার দিকে দুপক্ষের গোলাগুলির তীব্রতা একটু কমে এলে এক পর্যায়ে ফজলুর রহমান তাঁর কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে পাকিস্তানিদের ঘাঁটির একেবারে কাছে গিয়ে অতর্কিতে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর তীব্র আক্রমণ করেন। এতে পাকিস্তানি সেনারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি গোলন্দাজ বাহিনী অগ্রসরমাণ মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ব্যাপকভাবে ভারী গোলাবর্ষণ শুরু করে। রাত ৮টার দিকে পাকিস্তানি সেনাদের গোলার আঘাতে ফজলুর রহমান গুরুতরভাবে আহত হয়ে ৩০শে সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তবে তাঁর সহযোদ্ধারা আক্রমণ অব্যাহত রাখেন এবং ৩০শে সেপ্টেম্বর হাতীবান্ধা মুক্ত হয়। এ-যুদ্ধে শত্রুসেনাদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। হাতীবাবান্ধা যুদ্ধ-এ ফজলুর রহমানসহ ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং ৩০ জন আহত হন। তাঁকেসহ অন্যান্য শহীদদের হাতীবান্ধা হাইস্কুল প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।
স্বাধীনতা যুদ্ধে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার শহীদ সুবেদার ফজলুর রহমান খন্দকারকে ‘বীর উত্তম’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৫০, খেতাবের সনদ নং ৪৩)। এছাড়াও এ বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য ঢাকার পিলখানা বিজিবি সদর দফতরের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয় “শহীদ সুবেদার খন্দকার ফজলুর রহমান সড়ক’ ও এখানকার পুরাতন দরবার হলের নামকরণ করা হয় “শহীদ সুবেদার খন্দকার ফজলুর রহমান দরবার হল’। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড