You dont have javascript enabled! Please enable it!

ফটিকছড়ি থানা অপারেশন (ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম)

ফটিকছড়ি থানা অপারেশন (ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম) পরিচালিত হয় ৮ই ডিসেম্বর। এর ফলে হানাদারদের ফেলে যাওয়া প্রচুর অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয় এবং তাঁদের হাতে বেশ কয়েকজন বাঙালি পুলিশ ও আনসার বন্দি হয়। মুক্তিযোদ্ধারা গোপন সূত্রে খবর পান যে, ফটিকছড়ি থানায় প্রচুর অস্ত্র আছে, যা পাকিস্তানি সৈনিকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এ খবর পাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে জোনাল কমান্ডার মীর্জা আবুল মনসুরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা জরুরি সভায় মিলিত হন। সভায় সিদ্ধান্ত হয় ৮ই ডিসেম্বর রাতে থানায় অপারেশন পরিচালনা করা হবে। এ মর্মে কমান্ডার মীর্জা সকল মুক্তিযোদ্ধাকে অপারেশনের জন্য তৈরি থাকার নির্দেশ দেন। অপারেশনের নেতৃত্বে থাকবেন কমান্ডার মীর্জা স্বয়ং। তাঁর সহযোগিতায় থাকবে ক্যাপ্টেন ভূঁইয়া, ক্যাপ্টেন এনাম, ক্যাপ্টেন মাহফুজ, সিইনসি আবদুল হালিম, এস এম ফারুক, গৌরীশঙ্কর, আহমদ ছফা, জয়নাল আবেদীন, নুরুল গণি, আজিম, রফিক প্রমুখ গ্রুপ। মুক্তিযোদ্ধারা তিন গ্রুপে ভাগ হবেন। এই তিন গ্রুপের নাম দেয়া হয় রেকি গ্রুপ, অপারেশন গ্রুপ ও কাভারিং গ্রুপ। অপারেশন গ্রুপের দায়িত্বে ছিল ক্যাপ্টেন শওকতের গ্রুপ। এ গ্রুপ কর্ণফুলী চা-বাগানে অবস্থান নেবে। আর কভারিং গ্রুপ থানার উত্তর পার্শ্বে ধুরুং ব্রিজ এবং কলেজের উত্তর পার্শ্বে অবস্থান নেবে। এছাড়া কমান্ডার আহমদ ছফা গ্রুপ ও কমান্ডার মাহবুবুল আলম চৌধুরী গ্রুপসহ অধ্যাপক শওকত হোসেন, আবদুল মাবুদ, রফিক, রণধীর, আবু বকর প্রমুখ চারদিকে ফায়ার করবেন, যাতে অপারেশনের খবর পেয়ে অন্যান্য স্থান থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা এদিকে না আসতে পারে। এটি ছিল তাঁদের যুদ্ধ পরিকল্পনা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা হিরাম পাহাড় থেকে পায়ে হেঁটে ফটিকছড়ি থানার উদ্দেশে যাত্রা করেন এবং সন্ধ্যা ৭টার দিকে থানার অনতিদূরে হামযার টিলায় পৌঁছান। সেখানে পৌঁছে তাঁরা দেখতে পান হামযার টিলার জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে ফেলা হয়েছে। তাই তাঁরা কৌশল পরিবর্তন করে নিকটস্থ স্কুল মাঠের ওপর দিয়ে ক্রলিং করে পশ্চিম পার্শ্বে স্কুল-মসজিদের কাছে অবস্থান নেন। এখান থেকে মুক্তিযোদ্ধারা
দুটি দলে ভাগ হয়ে একদল পূর্বপাশে ছড়ার ভেতর এবং অন্যদল কাঠের ব্রিজের পাশে খেজুর গাছের নিচে অবস্থান নেয়। রাত ১২টার দিকে একজন মুক্তিযোদ্ধা রকেট লঞ্চার দিয়ে ফায়ার শুরু করেন। অন্য মুক্তিযোদ্ধারাও একযোগে ফায়ার করেন। কাপর্নের ঘাটারপুল, হাইদছকিয়া পুল ও হাডিপুল উড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু থানা থেকে শত্রুবাহিনীর কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে একদল মুক্তিযোদ্ধা থানার দিকে এগিয়ে যান। তাঁরা সামনের ও আশপাশের বাঙ্কারে কয়েকজন বাঙালি আনসারকে দেখতে পান। তাদের হাতে অস্ত্র ছিল।। কিন্তু তারা ভয়ে নিষ্ক্রিয়। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বন্দি করেন। তাদের কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা জানতে পারেন যে, প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শুনে পাকিস্তানি হানাদাররা পালিয়ে গেছে। শতাধিক পুলিশ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে ছিল। তারাও এক পর্যায়ে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। পাকিস্তানি হানাদাররা পালিয়ে যাবার সময় থানার স্ট্রং রুমের সামনে ৩টি এলএমজি, ৬০টি রাইফেল ও প্রায় ৫ হাজার গুলি ফেলে যায়। এগুলোসহ মুক্তিযোদ্ধারা স্ট্রং রুমের দরজা ভেঙ্গে আরো অনেক অস্ত্র দখল করেন। অতঃপর বন্দি পুলিশ ও আনসারদের সাহায্যে অস্ত্রগুলো নিয়ে তাঁরা তাঁদের আস্তানা হিরাম পাহাড়ের দিকে রওনা হন। সেখানে বন্দিদের আটক করে রাখা হয়। [জামাল উদ্দিন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!