ফতুল্লা থানা অপারেশন (নারায়ণগঞ্জ সদর)
ফতুল্লা থানা অপারেশন (নারায়ণগঞ্জ সদর) পরিচালিত হয় সেপ্টেম্বর মাসে। নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী ফতুল্লা থানার পুলিশ বাহিনীর তৎপরতা বন্ধ করার জন্য থানায় অপারেশন চালান। এ অপারেশনে থানার পুলিশ সদস্যরা আত্মসমর্পণ করে এবং থানার অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
ফতুল্লা থানা অপারেশনে নেতৃত্ব দেন মুক্তিবাহিনী-র গ্রুপ কমান্ডার আমিনুল ইসলাম (ফাজিলপুর, এনায়েতনগর)। অপারেশনের ২ দিন আগে আলীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল্লাহ ফতুল্লা থানা রেকি করে সহমুক্তিযোদ্ধাদের অবহিত করেন। মুক্তিযোদ্ধারা নৌকাযোগে জাজিরা থেকে পানগাঁও হয়ে আলীগঞ্জ মোমিন হাজীর বাড়িতে অবস্থান নেন। সেখান থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি ময়দান হয়ে সেহাচারের ভেতর দিয়ে তখনকার পাকিস্তান মাঠ হয়ে লালপুরে পৌঁছান। এরপর লালপুর চৌধুরী বাড়ির ওপর দিয়ে রাত ১২টার দিকে ফতুল্লা থানা এলাকায় প্রবেশ করে থানার চতুর্দিক ঘিরে ফেলেন। ডিফেন্স পার্টি নারায়ণগঞ্জের রাস্তার দিকে কভার দেয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা থানায় ঢুকে আক্রমণ চালান। অতর্কিত আক্রমণে পুলিশ সদস্যরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় এবং থানার ১৭টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল ও ৫০০ রাউন্ড গুলি তাঁদের হস্তগত হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা থানার চতুর্দিকে তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। ন্যাশনাল অয়েল ডিপো (যমুনা অয়েল), পঞ্চবটী ইলেকট্রিক সাপ্লাই, চাষাঢ়া রেলস্টেশন, ফতুল্লা রেলস্টেশন ও করিম রাবার ইন্ডাস্ট্রিজে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা তখন ক্যাম্প থেকে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা চাষাঢ়া অভিমুখে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে যে পথ দিয়ে অপারেশন স্থলে গিয়েছিলেন, সে পথেই আলীগঞ্জে কমর আলীর বাড়িতে ফিরে আসেন। ফতুল্লা থানা অপারেশনে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- গ্রুপ কমান্ডার আমিনুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, এ কে এম ফজলুল হক, মো. আলী, কাশেম, লতিফ, শাহজাহান, মোমিন (আলীগঞ্জ), ফজল, নাসির, কমর আলী (আলীগঞ্জ), আমিন, মমিনুল ইসলাম, অনিল কুমার দে, আউয়াল প্রমুখ। [রীতা ভৌমিক]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড