প্রসাদপুর গণহত্যা (গফরগাঁও, ময়মনসিংহ)
প্রসাদপুর গণহত্যা (গফরগাঁও, ময়মনসিংহ) ২১শে অক্টোবর সংঘটিত হয়। হানাদার বাহিনীর এ গণহত্যায় ২০ জনের বেশি মানুষ শহীদ হন।
গফরগাঁও থানার মশাখালী রেলস্টেশনের ৪ কিমি পশ্চিমে সুতার নদীর তীরে অবস্থিত প্রসাদপুর হিন্দু-অধ্যুষিত এলাকা। প্রসাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ওমর আলী তাঁর বাড়িতে ৩০০/৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে আশ্রয় দেন। গ্রামবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে। রাজনৈতিকভাবে সচেতন ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী হিসেবে তাদের সম্বন্ধে এ খবর রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে পৌঁছে দেয়। এ খবর পেয়ে ২১শে অক্টোবর ভোরে পাকিস্তানি বাহিনী প্রসাদপুর গ্রামে ত্রিমুখী আক্রমণ চালায়। পাকবাহিনীর সুপরিকল্পিত এ আক্রমণে দিশেহারা গ্রামবাসীর অনেকেই পালাতে সক্ষম হলেও নারী, শিশু এবং বৃদ্ধরা পালাতে না পেরে নৃশংসতার শিকার হন।
রমেশ চন্দ্র সাহা ও প্রভা রানী অশ্রু সুতার নদী পাড় হওয়ার সময় হানাদাররা তাদের গুলি করে হত্যা করে। সুভাষ চন্দ্র আচার্য তার ৫ বছরের ছেলে সন্তান টুলুকে কোলে নিয়ে পালাতে গেলে শিশু সন্তানসহ তাকে হানাদাররা হত্যা করে। এছাড়া ১০ জনকে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে যায়, পরে তাদের হত্যা করা হয়। প্রসাদপুর গণহত্যায় ২০ জনের অধিক গ্রামবাসী শহীদ হন। মোবারক শেখ, মাখন আশ্চার্য, পূর্ণ চন্দ্র সাহা ও মোসলেম উদ্দিন শেখ গুলিবিদ্ধ হয়ে বেঁচে যান। প্রসাদপুর গণহত্যায় শহীদদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা যায়, তারা হলেন— লক্ষ্মীকান্ত নাথ, সুভাষ চন্দ্র আচার্য, টুলু, হেমন্ত চন্দ্ৰ আচার্য, সাধন কুমার আচার্য, হীরেন্দ্র সাহা, সুধীর চন্দ্র সাহা, তিলক দাস অশ্রু, রমেশ চন্দ্র সাহা, প্রভা রানী অশ্রু, দুলাল শেখ, রবীন্দ্র চন্দ্র সাহা, হেলাল শেখ, সুবোধ চন্দ্র আচার্য, সদয় চন্দ্র পাল, অমূল্য চন্দ্র পাল, আবদুল মান্নান, আরব আলী ও নুরুল ইসলাম। এদের অধিকাংশের লাশই পাওয়া যায়নি। [নিপা জাহান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড