You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক ফকরুদ্দিন চৌধুরী

ফকরুদ্দিন চৌধুরী, বীর প্রতীক (১৯৪৬-২০১৪) ৫নং সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৬ সালের ১১ই নভেম্বর সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বোরহানউদ্দিন চৌধুরী এবং মাতার নাম ছাহেবা খাতুন চৌধুরী।
ফকরুদ্দিন চৌধুরী ছোটবেলা থেকেই ছিলেন প্রতিবাদী চরিত্রের। পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণে তিনি ভেতরে-ভেতরে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামে একটি ওষুধ কোম্পানিতে তিনি কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০ বালুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা চট্টগ্রাম শহরে গণহত্যাসহ ধ্বংসের তাণ্ডবলীলা চালাতে থাকে। এ-সময় চট্টগ্রামের ষোলশহরে অবস্থানরত ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ইপিআর বাহিনীর সদস্যরা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। প্রতিবাদী যুবক ফকরুদ্দিন চৌধুরী বিদ্রোহী বাঙালি সৈনিকদের সঙ্গে এ প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। চট্টগ্রাম শহরের পতন হলে তিনি নিজ এলাকা সিলেটের গোলাপগঞ্জে চলে আসেন। এলাকার কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে তিনি উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ভারতে চলে যান এবং মেঘালয়ের ইকো-১ যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এক মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তিনি জুন মাস থেকে ৫নং সেক্টরের বিভিন্ন এলাকায় সহমুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে পাকবাহিনীর অনেকগুলো ক্যাম্পে অপারেশন পরিচালনা করেন। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের এ দলটি ঝটিকা আক্রমণ, এম্বুশ, ফায়ার ডিমোলিশন চালিয়ে হানাদার পাকসেনাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলেন। এ- সময় তেলিখাল অপারেশনে পাকসেনাদের পাল্টা আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের এ দলটির কয়েকজন শহীদ হন। ১২ই অক্টোবর মেজর শাফায়াত জামিলের কমান্ডের অধীন ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ডেল্টা কোম্পানি সিলেট অভিমুখে অগ্রসর হলে ফকরুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের দলটিকে এর সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ডেল্টা কোম্পানির হয়ে ফকরুদ্দিন চৌধুরী ও তাঁর দলের মুক্তিযোদ্ধারা গোয়াইনঘাট, রাধানগর, ছাতক, লামাকাজি, গোবিন্দগঞ্জে বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। সেগুলোর মধ্যে গোবিন্দগঞ্জ টি জংশন এবং লামাকাজি যুদ্ধে ফকরুদ্দিন চৌধুরী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পাকিস্তানি বাহিনীর এদুটি ক্যাম্প ছিল সিলেট শহর রক্ষার প্রতিরক্ষাব্যূহ। মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে সুনামগঞ্জ এবং ছাতক থেকে পলাতক পাকিস্তানি সৈন্যরা এখানে অবস্থান নেয়। ১৪ই ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধা এবং যৌথবাহিনী সম্মিলিতভাবে গোবিন্দগঞ্জ টি জংশন আক্রমণ করে। প্রচণ্ড আক্রমণে সকালের মধ্যেই গোবিন্দগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ফকরুদ্দিন চৌধুরীকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে তিনি পৈতৃক বাড়ি সিলেটের গোলাগঞ্জের ফুলবাড়িতে স্ত্রী হোসনে শাহাদৎ চৌধুরী এবং ৩ কন্যাসহ বসবাস করছিলেন। ২০১৪ সালের ২১শে এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!