You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.27 | ফকিরাখালী যুদ্ধ (বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম) - সংগ্রামের নোটবুক

ফকিরাখালী যুদ্ধ (বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম)

ফকিরাখালী যুদ্ধ (বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় ২৭শে নভেম্বর। এতে কাগজবাহী পন্টুনের সারেংসহ ৩ জন পাকসেনা নিহত হয়।
ফকিরাখালী গ্রামটি কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত। নদীর তীর বেয়ে চলে গেছে চলাচলের কাঁচা রাস্তা। যানবাহন চলাচলের জন্য তা ছিল অনুপযোগী। কর্ণফুলী রেল সেতুর নিচ ছিল কধুরখীল চরণদ্বীপ ও খরণদ্বীপের জনসাধারণের যাতায়াতের মূল পথ৷
কর্ণফুলী নদীর উজানে কাপ্তাইয়ের দাউদ কোম্পানির কর্ণফুলী পেপার মিলস অবস্থিত। এ পেপার মিলস পাকিস্তানের কাগজের চাহিদা মেটাতে সক্ষম ছিল। মিলের উৎপাদিত কাগজ সড়ক ও নৌপথে চট্টগ্রাম শহরে আনা হতো। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সৈন্যদের পাহারায় লঞ্চ বা পন্টুনে করে উৎপাদিত পণ্য নদীপথে আনা হতো। কারণ সড়কপথে আনতে হলে রাঙ্গুনীয়া, রাউজান ও হাটহাজারী এই তিনটি থানার মুক্তিযোদ্ধাদের মোকাবিলা করে চট্টগ্রাম শহরে পৌছাতে হতো। বোয়ালখালী থানার কোম্পানি কমান্ডার আবুল বশর এবং প্লাটুন কমান্ডার মো. লতিফের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা এক সপ্তাহ ধরে নদীপথে পন্টুন আসার সময় পন্টুনে পাকিস্তানি সৈন্যদের সংখ্যা ও পন্টুনের গতি-প্রকৃতি রেকি করেন। এই দুই গ্রুপ জৈষ্ঠ্যপুরা সেনের বাড়ি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে আলোচনা করে যৌথভাবে অপারেশন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেন। অপারেশনের জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়। দুই গ্রুপের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়। এক গ্রুপ মেইন ফায়ারের দায়িত্বে এবং অন্য গ্রুপ ফ্রন্ট কাট আপ ও রিয়ার কাট আপ-এর জন্য নিয়োজিত থাকার সিদ্ধান্ত হয়। দুপুর ১২টায় কাগজ বোঝাই পন্টুনটি ফকিরাখালী পৌঁছামাত্র মুক্তিযোদ্ধারা পন্টুনের দিকে দ্বিমুখী আক্রমণ শুরু করেন। পন্টুন থেকে পাকবাহিনীও অবিরাম গুলি বর্ষণের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের জবাব দেয়। মুক্তিবাহিনী নিরাপদ অবস্থান থেকে আক্রমণ চালাতে থাকে। ২ ঘণ্টার অধিক সময়ব্যাপী এ-যুদ্ধ চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পরাস্ত হয়ে পাকসেনারা পিছু হটে কর্ণফুলী নদীর অপর পারে গিয়ে পন্টুনটি ভেড়ায়। পন্টুনটিকে অনুসরণ করে মুক্তিযোদ্ধারাও ইঞ্জিন বোট নিয়ে পুনরায় আক্রমণ করেন। এ-সময় পন্টুন নদীর তীরে ভিড়িয়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা পালিয়ে যায়। যুদ্ধে পন্টুনের সারেংসহ ৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। এর ফলে বোয়ালখালী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অধিকতর সাহস ও আত্মবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়। [উদয়ন নাগ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড