প্রতাপগঞ্জ হাইস্কুল আক্রমণ (লক্ষ্মীপুর সদর)
প্রতাপগঞ্জ হাইস্কুল আক্রমণ (লক্ষ্মীপুর সদর) পরিচালিত হয় ২২শে জুলাই ও ২৫শে আগস্ট। এতে বহু রাজাকার ও মিলিশিয়া হতাহত হয়।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ বাজারের প্রধান সড়কের উত্তর পাশে অবস্থিত প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকারদের ক্যাম্প ছিল। চন্দ্রগঞ্জ বাজারের ওপর মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিজ-নিজ দখল প্রতিষ্ঠার জন্য সবসময় সচেষ্ট ছিল। মুক্তিবাহিনী যাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ না পায় সেজন্য পাকবাহিনী প্রতাপগঞ্জ হাইস্কুলে একটি শক্তিশালী রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করে। এ ক্যাম্পের রাজাকারদের সSavedকরার জন্য সেখানে পাকিস্তানি মিলিশিয়া পুলিশও ছিল। ক্যাম্প স্থাপনের পর হানাদার বাহিনী বাজারের চারপাশের বাড়িঘরে, বিশেষ করে হিন্দু পরিবার ও আওয়ামী লীগ-এর সমর্থকদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে অতর্কিতে হামলা, লুট, অগ্নিসংযোগ ও অত্যাচার- নির্যাতন চালাতে থাকে।
কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে ২২শে জুলাই সুবেদার ওয়ালী উল্যা, সুবেদার শামছল হক ও হাবিলদার নুর মোহাম্মদের প্লাটুন প্রতাপগঞ্জ হাইস্কুলের রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে। সুবেদার লুৎফর রহমান মর্টারের সাহায্যে ক্যাম্পের ওপর গোলাবর্ষণ করেন। ত্রিমুখী আক্রমণের ফলে পাকিস্তানি মিলিশিয়া ও রাজাকার বাহিনী সেখান থেকে পলায়ন করতে বাধ্য হয়। পালিয়ে যাওয়ার সময় ৩ জন রাজাকার অস্ত্রসহ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে ও নিহত হয়। এ-যুদ্ধে পরাস্ত হলেও কিছুদিন পর রাজাকার ও মিলিশিয়ারা এখানে আরো শক্তি সঞ্চয় করে ক্যাম্প স্থাপন করে। নতুন ক্যাম্প ও অতিরিক্ত শক্তি নিয়ে রাজাকাররা এলাকার মানুষের ওপর নির্যাতন আরো বাড়িয়ে দেয়। ২৫শে আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে এ ক্যাম্পের ওপর পুনরায় আক্রমণ করেন। এ-সময় তাঁদের হাতে আরো আধুনিক অস্ত্র ও বর্ধিত জনশক্তি ছিল। সুবেদার লুৎফর রহমান, সুবেদার ওয়ালী উল্যা, সুবেদার সামছল হক তিন প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে তিনদিক থেকে আক্রমণ করেন। মুক্তিবাহিনী মর্টার, এলএমজি, এসএলআর ও অন্য ভারী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। গভীর রাতে পরিচালিত এ আক্রমণে ৫০-৬০ জন রাজাকার ও মিলিশিয়া হতাহত হয়। এখান থেকে মুক্তিবাহিনী ১০টি রাইফেল হস্তগত করে। এ আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর সফলতা লক্ষ্মীপুরের মুক্তিযুদ্ধে একটি স্মরণীয় ঘটনা। [মো. ফখরুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড