You dont have javascript enabled! Please enable it! পৈরতলা বধ্যভূমি ও গণকবর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

পৈরতলা বধ্যভূমি ও গণকবর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর)

পৈরতলা বধ্যভূমি ও গণকবর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে অবস্থিত। পৈরতলা গ্রামটি শহরের পশ্চিম প্রান্তে একটি রেল সেতুর পাশে অবস্থিত। তখন এলাকাটি অনেকটা নির্জন ছিল। স্বাধীনতার পর এ গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে তিনটি বিরাট গর্ত আবিষ্কৃত হয়। প্রতিটি গর্তে অসংখ্য মানুষের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডে বাংলার মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত ছিল। এরই মাঝে আসে ঈদুল ফিতর (২০শে নভেম্বর), যা উদযাপনের কোনো অবস্থাই ছিল না এ দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের। ঈদের দিন মানবতার শত্রু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এক নরমেধ যজ্ঞের আয়োজন করে। বাংলাদেশের শতসহস্র বধ্যভূমির আরেকটি তৈরি হয় পৈরতলায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের প্রান্তসীমায় অবস্থিত এ গ্রামে ঈদুল ফিতরের দিন সন্ধ্যার সামান্য আগে সামরিক কনভয় নিয়ে বহুসংখ্যক পাঞ্জাবি সৈন্য এলাকাটি ঘিরে ফেলে এবং কারফিউ দিয়ে পার্শ্ববর্তী সকল বাড়ি থেকে নারী-পুরুষ ও শিশুদের তাড়িয়ে নিয়ে যায় বেশকিছু দূরে। গ্রাম থেকে ৬-৭ জন লোককে ধরে নিয়ে আসে গর্ত খোঁড়ার জন্য। গর্ত খোঁড়া শেষ হলে তাদের সকলকে হত্যা করে সেই গর্তে ফেলে দেয়া হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে এখানে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়। রাতের অন্ধকারে বাসভর্তি লোক এনে এখানে হত্যা করা হতো। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগার থেকে কয়েক শত বন্দিকে ধরে এনে এখানে গুলি করে মাটিচাপা দেয়া হয়। গুলিবিদ্ধদের অনেককে আহত অবস্থায়ই মাটিচাপা দেয়া হয়। নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকেও এখানে গুলি করে হত্যা করা হয়। এখানে যারা হত্যার শিকার হন, তাদের বেশির ভাগই দেশের বিভিন্ন এলাকার। তাদের পরিচয় সংগ্রহ করা যায়নি। [জয়দুল হোসেন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড