You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.27 | পৈলভাগ গণহত্যা (মৌলভীবাজার সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

পৈলভাগ গণহত্যা (মৌলভীবাজার সদর)

পৈলভাগ গণহত্যা (মৌলভীবাজার সদর) সংঘটিত হয় ২৭শে এপ্রিল। মৌলভীবাজার জেলার সদর থানার কামালপুর ইউনিয়নের পৈলভাগ গ্রামে সংঘটিত এ গণহত্যায় ৫০ থেকে ৬০ জন মানুষ নিহত হন।
পাকসেনারা শেরপুর যুদ্ধের পর সিলেটের সালুটিকর থেকে ২২শে এপ্রিল আবার শেরপুরে ঢোকে। শেরপুর হয়ে মৌলভীবাজার সদরে পৌঁছার পথে সড়কের দুপাশের গ্রামগুলোতে তারা অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যা চালায়। পাকসেনারা মৌলভীবাজারের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় ২৩শে এপ্রিল অন্য আরো কয়েকটি গ্রামের মতো উত্তর ও দক্ষিণ পৈলভাগ গ্রামে গণহত্যা চালায়। সঙ্গে থাকা স্বাধীনতাবিরোধী কালা মোল্লা, আরশদ আলী, ছিকন মিয়া, সাজিদ উল্লাহ, কাছিম মিয়া, ফুলরি মিয়া ও চেয়ারম্যান আকলু মিয়ার দেখিয়ে দেয়া পথে পাকসেনারা উত্তর ও দক্ষিণ পৈলভাগ গ্রামে ঢুকে গুলি ছুড়তে থাকে। প্রথমে তারা ৭৬ বছর বয়সী বৃদ্ধ সূর্যমণি দেব ও তার স্ত্রী মগ্নময়ী দেবীকে এবং পরে পাশের বাড়ির দিগেন্দ্র দেব (পিতা জগন্নাথ দেব) ও তার কাকাতো ভাই দিবেন্দ্র দেব (পিতা দীননাথ দেব)-কে গুলি করে হত্যা করে। হত্যার পর দুটি বাড়িতেই আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। আগুনে বাড়িঘরের সঙ্গে নিহত ৪ জনের দেহ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অন্য একটি বাড়িতে বৃদ্ধা ও বিধবা কামাখ্যা রাণী ধর ও মদন দাস নামের একজন বৈষ্ণবকে হত্যা করা হয়। পালাবার চেষ্টাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন সৌদামিনী দেব। গ্রামের দেবেন্দ্র দেব ও যামিনী মোহন ধরকে পাকসেনারা ধরে ঢাকা-সিলেট সড়কের পূর্বপাশে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের গুলি করে হত্যা করে। তাদের মৃতদেহ দালাল আরশদ আলী মনু নদীতে ভাসিয়ে দেয়। গ্রামের সুধীর রঞ্জন দেব ও রাসবিহারী দেবের বাড়ি এবং মদন দাসের আখড়া পুড়িয়ে দেয়া হয়। উত্তর পৈলভাগ গ্রামে পাকসেনারা সুধির লাল দে (পিতা মতুর চন্দ্র দে), তার দুই ছেলে হিমাংশু লাল দে ও শুধাংশু লাল দেকে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের সময় পাকসেনাদের নিবৃত্ত করতে এগিয়ে আসা ইব্রাহীম মিয়া ও ইয়াকুব আলীকে দালাল কালা মোল্লার প্ররোচনায় পাকসেনারা হত্যা করে। এখানে সব মিলে ৫০ থেকে ৬০ জন লোক নিহত হলেও সবার পরিচয় জানা যায়নি। যেসব হিন্দু পরিবারের লোক গণহত্যার শিকার হন, তাদের বেঁচে থাকা বংশধরদের অনেকে পরে ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করায় নিহতদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। [আবদুল হামিদ মাহবুব]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড