পোনরা গ্রাম যুদ্ধ (দেবীদ্বার, কুমিল্লা)
পোনরা গ্রাম যুদ্ধ (দেবীদ্বার, কুমিল্লা) সংঘটিত হয় ১৭ই সেপ্টেম্বর। এতে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ৩ জন আহত হন।
মুক্তিযুদ্ধে দেবীদ্বারবাসীর অবদান অবিস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম থেকেই জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ডাকে যুদ্ধজয়ের নেশা দেবীদ্বারবাসীর মনে দানা বাঁধতে শুরু করে। এ কারণে দেবীদ্বারবাসীকে অনেক ক্ষয়ক্ষতিরও সম্মুখীন হতে হয়। যুদ্ধচলাকালীন সময়ে প্রায় প্রতিটি গ্রামই প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দেবীদ্বার উপজেলার একটি গ্রামের নাম পোনরা। ১৭ই সেপ্টেম্বর নী-কমান্ডো লেফটেন্যান্ট মো. ফজলুল হক (দাউদকান্দি)-এর নেতৃত্বে পোনরা গ্রামে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এর পূর্বে লেফটেন্যান্ট মো. ফজলুল হকের নেতৃত্বে নৌ-কমান্ডোর ৫ সদস্যের একটি দল বাগিরতি নদীর তীরে প্রশিক্ষণ নেয়। প্রশিক্ষণ শেষে দলটি ১৫ই সেপ্টেম্বর ২নং সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তমএর কাছে রিপোর্ট করে। কমান্ডার খালেদ মোশাররফ তাঁদের জাহাজ ডুবির মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ বন্দর অকেজো করার নির্দেশ দেন এবং এ দলকে লিমপেট মাইন ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামাদি দিয়ে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে প্রেরণ করেন। ১৭ই সেপ্টেম্বর রাতে লেফটেন্যান্ট মো. ফজলুল হকের নেতৃত্বে নৌ-কমান্ডোর ৫ সদস্যসহ মোট ৮ সদস্যের একটি দল দেবীদ্বার উপজেলার পোনরা হয়ে নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দরে হামলার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। যাত্রপথে তাঁরা পাকিস্তানি সেনাদের এম্বুশের মুখোমুখি হন। এক্ষেত্রে পোনরা গ্রামের স্থানীয় রাজাকাররা পাকসেনাদের সহযোগিতা করে। এখানে উভয় পক্ষে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের গুলি ও বেয়নেটের আঘাতে আবু বকর (নারায়ণগঞ্জ) ও সৈয়দ আলী (খলিলপুর) শহীদ হন। এ-সময় গ্রুপ কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মো. ফজলুল হক ও নৌ-কমান্ডো মো. আবুল হোসেন (দেবীদ্বার) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। স্থানীয়রা আবু বকরকে পোনরা চৌরাস্তার মোড়ে দাফন করে। সৈয়দ আলীর লাশ তাঁর স্বজনরা নিয়ে যান। আবু বকরের কবরটি তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে পাকা করা হয়। [নাহিদ মিয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড