পূর্ব মুড়িয়া গণহত্যা (বিয়ানীবাজার, সিলেট)
পূর্ব মুড়িয়া গণহত্যা (বিয়ানীবাজার, সিলেট) সংঘটিত হয় ২৬শে সেপ্টেম্বর। এতে ৭ জন মানুষ নিষ্ঠুর হত্যার শিকার হন এবং তাদের গণকবর দেয়া হয়।
বিয়ানীবাজার থানার পূর্বদিকে মুড়িয়া হাওরের পূর্ব পাড়টি পূর্ব মুড়িয়া হিসেবে পরিচিত। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত এলাকাটি মুড়িয়া ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড। এর পূর্বদিকে ভারত সীমান্ত, দক্ষিণে সুনাই নদী এবং নদীর অপর পাড়ে মৌলভীবাজারের বড়লেখার শাহবাজপর-লাতু এলাকা। উত্তরে হাওরের পর দুবাগ ইউনিয়ন। মুক্তিযুদ্ধকালে এলাকাটি ছিল একটি বিচ্ছিন্ন জনপদ। বিশেষ করে বর্ষাকালে এটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়। এ এলাকার কেন্দ্রস্থল সারপার বাজার। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পাঁচ মাস এটি ছিল মুক্ত অঞ্চল। মুক্তিবাহিনী-র ৪ নম্বর সেক্টরের বারপুঞ্জি সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা সারপার বাজারে ক্যাম্প স্থাপন করে এখান থেকে বিভিন্ন অপারেশন চালাতেন। আগস্ট মাসের শুরু থেকে প্রায় দুসপ্তাহের বিরামহীন যুদ্ধের (সারপার যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত) পর পাকিস্তানি বাহিনী এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সারপার বাজারসহ কয়েকটি স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে। এরপর মুসলিম লীগ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে শান্তি কমিটি গঠন করে তাদের সহযোগিতায় নির্যাতন ও গণহত্যা চালায়।
পূর্ব মুড়িয়া এলাকার দখল নেয়ার পর পাকিস্তানি বাহিনী স্থানীয় দালালদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন ধরে ক্যাম্পে এনে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়। কয়েকদিন নির্যাতনের পর ২৬শে সেপ্টেম্বর রাতে ৭ জনকে একসঙ্গে হত্যা করে নয়াগ্রামের আবদুন নুর জমাদারের পুকুরপাড়ে গণকবর দেয়। স্বাধীনতার পর রাজাকারদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে লাশগুলো কবর থেকে তুলে সিলেট হাসপাতালে নিয়ে পোস্টমর্টেম করা হয়। এরপর তাদের পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়।
পূর্ব মুড়িয়া গণহত্যায় নিহতরা হলেন- স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা মকদ্দস আলী ওরফে ময়না মিয়া (৫৫), আবদুর রউফ কুটি মিয়া (৫৫) (মাইজকাপন-ইনামপুর, ইপিআর-এর অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার), আবদুল মুহিত তফাদার কনাই মিয়া (৫০) (মাইজকাপন-ইনামপুর, কৃষক), আবদুস সত্তার (২২) (বাড়ুদা), আবদুল গফুর (৩০) (বাড়ুদা, ব্যবসায়ী), ইরশাদ আলী (৩৫) (পিতা আবদুল গণি, সারপার, আওয়ামী লীগ কর্মী) ও আইয়ুব আলী (সাতলপার, দুবাগ)। [আজিজুল পারভেজ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড