You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে পেকুয়া উপজেলা (কক্সবাজার)

পেকুয়া উপজেলা (কক্সবাজার) মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিল চকরিয়া থানার অন্তর্গত একটি ইউনিয়ন। ২০০২ সালে চকরিয়ার আরো দুটি ইউনিয়ন বারবাকিয়া ও মগনামা নিয়ে পেকুয়া উপজেলা গঠিত হয়। ১৯৭০ সালে নির্বাচনি প্রচারের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখানে এক জনসভায় ভাষণ দেন। তাঁর ভাষণ এলাকার জনগণকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে। ঐ বছর জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী যথাক্রমে এডভোকেট নূর আহমদ এবং এডভোকেট জহিরুল . ইসলাম বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু গণরায় অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্র শুরু করলে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ২রা মার্চ থেকে দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। এরূপ পরিস্থিতিতে ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ শুনে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো পেকুয়ার জনসাধারণও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিগ্রহণ শুরু করে।
অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে, বিশেষকরে ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর পেকুয়ার ছাত্র-যুবক যাঁরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছিল, তাদের অনেকেই গ্রামে ফিরে এসে সাধারণ জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠিত করতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী পেকুয়ার প্রশাসনিক কেন্দ্র চকরিয়ায় ১০ই মার্চ সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এস কে শামসুল হুদাকে সভাপতি এবং ডা. শামসুদ্দিন চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত এ পরিষদে পেকুয়া থেকে সদস্য হিসেবে ছিলেন কামাল হোসেন এবং টৈটং এলাকার নুরুল ইসলাম চৌধুরী (নাবালক মিয়া)। ছাত্র, জনতা ও রাজনীতিকদের যৌথ প্রচেষ্টায় পেকুয়ায়ও একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। শিলখালির জসীম উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে বারবাকিয়া বাজারের একটি দোকানঘরে সংগ্ৰাম পরিষদের কার্যালয় স্থাপন করা হয়। এখান থেকে স্বাধীনতাকামীদের সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। ঢাকার ছাত্রনেতাদের অনুকরণে বারবাকিয়া বাজারের বটতলায় পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
সীতাকুণ্ডের শামসুল হক এমপিএ-র উপস্থিতিতে বারবাকিয়া বাজারে অনুষ্ঠিত এক সভায় বারবাকিয়া ইউনিয়ন স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এ পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন জসিমউদ্দিন আহমদ মাস্টার। এর সদস্যরা ছিলেন- শিলখালির কামাল উদ্দিন মাস্টার, নুরুল কবির, জাফর আহমদ, আবুল হাসেম, আবদুল মালেক মাস্টার, বারবাকিয়ার কবির হোসেন মাস্টার, শামসুল আলম মাস্টার, ফাসিয়াখালির মোহাম্মদ আলম, মোহাম্মদ ইউসুফ মাস্টার, জাহাঙ্গীর আলম, আলেকদিয়ার আবু তালেব, হাজিরঘোনার রশিদ আহমদ, কামাল হোসেন, সোনাইছড়ির সাহাব উদ্দিন ফরাজী, বারবাকিয়া কাছারিমুরার আলতাজ মিয়া প্রমুখ। ৮ই এপ্রিল বারবাকিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় উপকূলীয় এলাকায় স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। নুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও এডভোকেট কামাল হোসেনকে যুগ্ম- আহ্বায়ক করে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট এ পরিষদ গঠিত হয়।
উপজেলায় সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের নানা কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। সে-সবের মধ্যে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ পরিচালনা, তাঁদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা, প্রশিক্ষণরত ও যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবার ও অস্ত্র-গোলাবারুদের সংস্থান করা ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এডভোকেট নূর আহমদ এমএনএ, এডভোকেট জহিরুল ইসলাম এমপিএ, জসীম উদ্দিন আহমদ, কামাল – উদ্দিন মাস্টার এবং তাঁদের সহযোগীরা বিভিন্ন দফায় পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া রাস্তার মোড় এবং লোহাগাড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে খাদ্য ও অন্যান্য রসদ-সামগ্রী পৌঁছে দেন। মার্চের শেষ সপ্তাহে এডভোকেট কামাল হোসেন বেশ কিছু খাদ্যসামগ্রী ও প্রায় দুহাজার টাকা কালুরঘাট ব্রিজে মুক্তিযোদ্ধা-ক্যাম্পে প্রদান করেন।
এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধারা প্রফেসর শামসুল হক এমপিএ-কে সঙ্গে নিয়ে চকরিয়া থানা থেকে প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করেন। প্রফেসর শামসুল হকের সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের ছাত্র মোহাম্মদ রফিক এবং চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ছাত্র আবুল কালাম। তাদের উপস্থিতিতে থানা থেকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সহযোগিতায় থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে এ রাইফেলগুলো প্রশিক্ষণের জন্য শিলখালির জসীম উদ্দিন আহমদ ও নুরুল কবির, পেকুয়ার এডভোকেট কামাল হোসেন এবং রাজাখালির মাহমুদ কবির চৌধুরীকে প্রদান করা হয়। কিছুদিন পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্ণফুলী নদী পার হয়ে কক্সবাজারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে জানতে পেরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য দেয়া অস্ত্রগুলো আবার ফেরত নিয়ে নেন৷
সংগ্রাম পরিষদের তত্ত্বাবধানে চকরিয়া হাইস্কুল মাঠ, ফাসিয়াখালি প্রাইমারি স্কুল মাঠ, ডুলাহাজরা হাইস্কুল মাঠ, বিএমচর হাইস্কুল মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা হয়। বিএমচর নিবাসী ইপিআর নায়েক কমান্ডার বদিউল আলমের নেতৃত্বে চকরিয়া হাইস্কুল মাঠে পেকুয়ার মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তাঁদের সঙ্গে চকরিয়ার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩০০ মুক্তিযোদ্ধাও প্রশিক্ষণ নেন। এখানে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর চকরিয়া থানা থেকে সংগৃহীত অস্ত্র ব্যবহার করে বারবাকিয়া কমিউনিটি সেন্টার মাঠে ২০ জনের একটি দলকে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এতে নেতৃত্ব দেন জসীম উদ্দিন আহমদ। তিনি পাকিস্তান এয়ারফোর্সে একবছর মেয়াদি বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীতে পেকুয়ার কবির আহমদ চৌধুরী বাজার মাঠেও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বারবাকিয়ার অনিল কুমার নাথ, ধনঞ্জয় নাথ, সুশীল বিকাশ নাথসহ কয়েকজন ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পেকুয়ায় মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন ইপিআর নায়েক বদিউল আলম ও মাহবুবুর রহমান (কাকারার, চকরিয়া)।
পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতার অভিযোগে ২২শে জুলাই তিনশতাধিক মুক্তিকামী মানুষের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় একটি মামলা করে। এতে ৫২ জন আসামির নাম- ঠিকানা উল্লেখ করা হয়। মামলার আসামিদের মধ্যে বর্তমান পেকুয়া উপজেলাধীন ছিলেন- মগনামার এডভোকেট জহিরুল ইসলাম এমপিএ (পিতা আশরাফ আলী), মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম (পিতা আশরাফ আলী), বারবাকিয়ার নুরুল আজিম (পিতা দলিলুর রহমান), সাদেকুর রহমান (পিতা সৈয়দুর রহমান), আবদুল মতলব (পিতা আহমদ আলী), সৈয়দ নুর (পিতা আবদুল কাদের), এমদাদ মিয়া (পিতা অছিয়র রহমান) এবং পেকুয়ার আবু শামা (পিতা ছিদ্দিক আহমদ)। মুক্তিযুদ্ধের সময় পেকুয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল খুবই নাজুক। সড়কপথে যোগাযোগের কোনো সুযোগ ছিল না বললেই চলে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ অন্যান্য স্থান থেকে নদীপথে যাতায়াত করা যেত। তাই পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে। কালুরঘাট ব্রিজের কাছে ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআর-এর সদস্যরা এবং ভারতে ও দেশের অভ্যন্তরে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের পাহারা বসানো হয়। জনগণও নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এ প্রতিরোধ কর্মসূচিতে পেকুয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারাও অংশগ্রহণ করেন। চকরিয়া ও পেকুয়ার মুক্তিযোদ্ধারা আজিজনগর, মাতামুহুরি ব্রিজ (চিরিঙ্গা), ফাসিয়াখালি, মালুমঘাটসহ আরো কয়েকটি স্থানে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। যোগাযোগের অব্যবস্থার কারণে পাকবাহিনী পেকুয়া উপজেলায় স্থায়ী কোনো ক্যাম্প স্থাপন করেনি। তাদের মূল ক্যাম্প ছিল কক্সবাজার শহরে। সেখান থেকে মাঝে-মধ্যে স্টিমারযোগে সমুদ্র ও নদীপথে পেকুয়ায় টহলে এসে আবার কক্সবাজারে ফিরে যেত। কালুরঘাট প্রতিরোধযুদ্ধ-এ মুক্তিযোদ্ধাদের সাময়িক পরাজয়ের পর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কপথে ২৭শে এপ্রিল পাকবাহিনী চকরিয়ায় প্রবেশ করে। প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও গোলাবারুদের অভাবে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিরোধ করতে পারেননি। এ অবস্থায় চকরিয়ার মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে আত্মগোপনে চলে যান এবং রাজনৈতিক নেতারা ভারত ও বার্মায় (মিয়ানমার) আশ্রয় নেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কক্সবাজারে ঘাঁটি স্থাপন করার বেশ কয়েকদিন পর পেকুয়া অঞ্চলে প্রথম অনুপ্রবেশ করে।
পাকবাহিনীর সহায়তার জন্য কক্সবাজার মহকুমায় মইদুর রহমান চৌধুরী (পিতা সৈয়দুর রহমান চৌধুরী, বারবাকিয়ার সাবেক জমিদার)-কে প্রধান করে শান্তি কমিটি গঠিত হয়। সে সাধারণত কক্সবাজার শহরেই অবস্থান করত। তবে পাকবাহিনী পেকুয়ায় টহলে এলে সেও তাদের সঙ্গে আসত এবং তাদের সঙ্গেই আবার কক্সবাজার ফিরে যেত। কক্সবাজারসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারসমূহ তার অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়।
চকরিয়া থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। চকরিয়া থানার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিল চিরিঙ্গা ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, আর সদস্য ছিল বাকি এগারোটি ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যানরা। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদাধিকারবলে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিল এবং মেম্বররা ছিল এর সদস্য। পেকুয়া উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিল চকরিয়া থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান এবং সদস্য ছিল পেকুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাবেক জমিদার কবির আহমদ চৌধুরী, বারবাকিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডা. মোক্তার আহমদ এবং মগনামা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাহেরুল হক চৌধুরী।
পেকুয়ায় রাজাকার বাহিনীও গঠিত হয়েছিল। ৪ঠা আগস্ট চকরিয়া ও পেকুয়ার ৬৬ জনকে নিয়ে এ বাহিনী গঠিত হয়। তাদের মধ্যে পেকুয়া উপজেলার ১৩ জন হলো- পেকুয়ার আমির হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, সাইফুল হক, মগনামার ওসমান গনি, শামসুল আলম, বারবাকিয়ার কামাল উদ্দিন, করিমদাদ, মোহাম্মদ হোসেন, বদিউল আলম, আকবর আহমদ, মেহেরনামার আবুল হাসেম, আবুল হোসেন এবং উজানঠিয়ার জাফর আহমদ। পেকুয়াতে পাকবাহিনীর কোনো স্থায়ী ক্যাম্প, নির্যাতনকেন্দ্র বা বন্দিশিবির ছিল না।
পেকুয়ায় পাকবাহনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখি সংঘর্ষের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এর কারণ প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা ও অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্থা। এজন্য পাকবাহিনী এ এলাকায় খুব কমই আসত। মুক্তিযোদ্ধারাও পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্রের অভাবে পাকবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলেছেন। তাছাড়া এলাকার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার আশঙ্কায়ও তাঁরা জনবসতিতে পাকবাহিনীর মুখোমুখি হননি। তবে পেকুয়ার মুক্তিযোদ্ধারা দেশের অন্যত্র পাকবাহিনীর মোকাবেলা করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি গেরিলা গ্রুপ ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ দলে ছিলেন বারবাকিয়ার অনিল কান্তি নাথ, অনিল কুমার নাথ, সুশীল বিকাশ নাথ ও ধনঞ্জয় নাথ। চকরিয়া আসার পথে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি এলাকায় পাকবাহিনী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে এ গ্রুপ সাতটি অভিযান চালিয়ে সফল হয়। এরপর পটিয়া এলাকায় একটি সশস্ত্র যুদ্ধে তিনজন রাজাকারকে হত্যা করে। চট্টগ্রামের দোহাজারীর জামিজুরি এলাকায় অপ্রস্তুত অবস্থায় এ দলটিকে পাকিস্তানি সৈন্যরা ঘেরাও করে ফেলে। তখন কমান্ডার মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে ১৩ জন পাকিস্তানি হানাদারকে হত্যা করে বিজয়ী হন। এ-যুদ্ধে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এমন আরো অনেক যুদ্ধে এ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সাহসের সঙ্গে লড়েছেন।
১৩ই ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী কক্সবাজারে বিমান আক্রমণ চালায়। এতে মহকুমা শান্তি কমিটির প্রধান মইদুর রহমান চৌধুরী নিহত হয়। চূড়ান্ত পরাজয়ের প্রাক্কালে মিত্রবাহিনীকে প্রতিরোধ করার মতো শক্তি পাকবাহিনীর ছিল না। তাই এদিনই কক্সবাজারের পতন ঘটে এবং একই সঙ্গে পেকুয়া উপজেলাও হানাদারমুক্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে ১৯৯৪ সালে শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজ এবং ১৯৯৫ সালে শহীদ জিয়া বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। [ইবরাহীম মুহাম্মদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!