পেয়ার আলী বেপারীর চর যুদ্ধ (চরফ্যাশন, ভোলা)
পেয়ার আলী বেপারীর চর যুদ্ধ (চরফ্যাশন, ভোলা) সংঘটিত হয় ৩০শে সেপ্টেম্বর। চরফ্যাশন থানার আমিনাবাদ ও ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্যবর্তী সীমানায় বাংলাবাজার পেয়ার আলী বেপারীর চরের বাসাবাড়ির নিকট এ-যুদ্ধ সংঘটিত হয়। একদিকে ছিল চরফ্যাশন থানার রাজাকার কমান্ডার আবু তাহের দফাদার ও ডেপুটি কমান্ডার বেলায়েতের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী, আর অপরদিকে ছিলেন ভোলা, দৌলতখান, বাংলাবাজার, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন ও চরফ্যাশনের মুক্তিযোদ্ধারা। এতে ১৩ জন রাজাকার নিহত হয় এবং অত্র অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ডাকে বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছিল, তখন চরফ্যাশন থানার মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন মো. মোতাহার উদ্দিন মাস্টার এমপিএ। অন্যদিকে পাকহানাদারদের দোসর রাজাকার বাহিনী হিন্দু ও স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন এবং তাদের বাড়িঘর ও দোকান-পাট লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ নানা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল। তাদের অত্যাচারে জনগণ যখন অতিষ্ঠ, তখন রাজাকারদের প্রতিরোধ করতে সেপ্টেম্বর মাসে হাইকমান্ড মো. সিদ্দিকুর রহমান-এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা পেয়ার আলী বেপারীর চরের বাসাবাড়িতে স্থাপিত ঘাঁটিতে অবস্থান করছিলেন। ২৮শে সেপ্টেম্বর রাজাকারদের ডেপুটি কমান্ডার বেলায়েতের ছোটভাই দেলোয়ারের ষড়যন্ত্রে মুক্তিযোদ্ধা নুর সোলাইমানকে হত্যা করা হয়। এ-কথা জানতে পেরে মুক্তিযোদ্ধারা দেলোয়ারকে হত্যা করেন। ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতে কমান্ডার বেলায়েত ও কমান্ডার আবু তাহের দফাদার ৩০শে সেপ্টেম্বর চরফ্যাশন থানার কিছু পুলিশ নিয়ে আমিনাবাদ ইউনিয়নের দালাল বাজার (মাঝির হাট)-এর রাস্তা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হয়। তারা যখন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে অবস্থান করছিল, তখন ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। তাঁরা রাজাকার বাহিনীর খবর শোনার পর তড়িৎ গতিতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। মুহূর্তের মধ্যে উভয় পক্ষে তুমুল গোলাগুলি শুরু হয়। চতুর্দিক থেকে মুক্তিকামী জনতা ও মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে আসেন। রাজাকার ও পুলিশ বাহিনী মুক্তিযোদ্ধা-জনতার প্রবল প্রতিরোধ ও আক্রমণের মধ্যে পড়ে যায়। এ-যুদ্ধে কমান্ডার বেলায়েতসহ ১৩ জন রাজাকার নিহত হয় এটি ছিল এ অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম সফল অপারেশন। যুদ্ধে বিজয়ের পর অত্র অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। [মো. সিরাজুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড