You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধে পীরগাছা উপজেলা (রংপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযুদ্ধে পীরগাছা উপজেলা (রংপুর)

পীরগাছা উপজেলা (রংপুর) পাকিস্তানি শাষকগোষ্ঠীর শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পীরগাছার সংগ্রামী জনতা –আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল আউয়ালকে বিপুল ভোটে এমএনএ এবং শাহ আব্দুর রাজ্জাককে এমপিএ নির্বাচিত করে। সেই নির্বাচনে সারা বাংলায় আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্র শুরু করলে বাঙালিদের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ অসহযোগ আন্দোলন-এর ডাক দেন। পীরগাছার মানুষ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে সে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়। ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু তাঁর দিক নির্দেশনামূলক ভাষণে সারা বাংলায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। তাঁর ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে আব্দুল হান্নান মণ্ডল (পীরগাছা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি) ও মোসলেম উদ্দিন মতি মিয়া (পীরগাছা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক)-এর নেতৃত্বে পীরগাছা থানায় গঠিত হয় সংগ্রাম কমিটি। এ কমিটির সদস্যদের মধ্যে শাহ আব্দুর রাজ্জাক এমপিএ, আব্দুল মজিদ মাস্টার (পীরগাছা), আব্দুস সাত্তার (ইটাকুমারী), মাহবুবার রহমান ভেণ্ডার (পাওটানা), আমান উল্লাহ মাস্টার (তাম্বুলপুর), আজিজার রহমান (পারুল), মফিল উদ্দিন (তাম্বুলপুর), রওশন আলী খান (কান্দি), মোহাম্মদ আলী (পাওটানা), সতীশ চন্দ্র বর্মণ (কল্যাণী), আব্দুল মজিদ (মোংলাকুটি) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। একই সঙ্গে আব্দুর রহমান আলতাফ (পীরগাছা থানা ছাত্রলীগ-এর সভাপতি) ও আব্দুল হাকিম সরদার (পীরগাছা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক)-এর নেতৃত্বে পীরগাছা থানা ছাত্র সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটির সদস্যদের মধ্যে রেজাউল করিম শোভা (রংপুর জেলা ছাত্র ইউনিয়ন-এর সভাপতি), ছাত্র ইউনিয়নের শাহ মিজানুর রহমান, মোখতার হোসেন, আব্দুল বাতেন, মোসলেম উদ্দিন, রাজা মিয়া, আজাদুল ইসলাম, ছাত্রলীগের সাইফুল ইসলাম সাবু (রংপুর কলেজ ছাত্রলীগের নেতা), ওয়াজেদ আলী সরকার, শাহ আব্দুল হামিদ, তোফাজ্জল হোসেন, আব্দুল মতিন, আবু বকর, আবুল কাশেম, আব্দুল ওয়াজেদ প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে পীরগাছার পশ্চিমদেবু গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্ৰ স্থাপিত হয়। প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন ছুটিতে আসা বীরনারায়ণ গ্রামের বাঙালি সেনা সদস্য শমসের আলী। পরবর্তীতে এ অঞ্চলের যুবকরা ভারতে গিয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
সংগ্রাম কমিটির সহযোগিতায় এলাকাবাসী পীরগাছায় পাকবাহিনীর অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করে। ২৮শে মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাওয়ে রংপুরবাসীর সঙ্গে পীরগাছার সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দও অংশগ্রহণ করেন। পাকবাহিনী ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেয়া শতশত মুক্তিকামী মানুষের ওপর ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড চালায়। কয়েকদিনে পরে পীরগাছার নেতৃবৃন্দ রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিদ্রোহ করে বেরিয়ে আসা বাঙালি ক্যাপ্টেন নওয়াজেশের সঙ্গে তাম্বুলপুর- পাওটানা হয়ে ভারতে চলে যান। ফলে, পীরগাছায় পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি।
৩রা এপ্রিল পাকবাহিনী পীরগাছায় অনুপ্রবেশ করে এবং ডাকবাংলোতে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। পরবর্তীতে পীরগাছা ছায়াবীথি ক্লাব ও পাঠাগারে একটি রাজাকার ক্যাম্প স্থাপিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই অবাঙালি রুহুল আমীন মাস্টার(সৈয়দপুর)-এর নেতৃত্বে পীরগাছায় শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। শান্তি কমিটির সভাপতি হয় আব্দুল গফুর সরকার (অনন্তরাম)। এ কমিটির উল্লেখযোগ্য সদস্যরা হলো- ডা. আহাদ সরকার (অনন্তরাম), মতিয়ার রহমান সরদার (ঘগোয়া), আব্দুল মান্নান মিয়া (চেয়ারম্যান, ছাওলা ইউনিয়ন পরিষদ), শাহাবুদ্দিন প্রামানিক (চেয়ারম্যান, তাম্বুলপুর ইউনিয়ন পরিষদ), সোলায়মান (চেয়ারম্যান, পারুল ইউনিয়ন পরিষদ), আজিজুল হক (চেয়ারম্যান, ইটাকুমরী ইউনিয়ন পরিষদ), তাহারতউল্লা (সাবেক চেয়ারম্যান, পারুল ইউনিয়ন পরিষদ), মোজা চেয়ারম্যান (গোবরাপাড়া), জোনাব আলম (রামচন্দ্রপাড়া), রব্বানী মওলানা (রামচন্দ্রপাড়া), লুৎফর রহমান (মকরমপুর), আইয়ুব আলী (জামিরজান), আব্দুল মান্নান (দাদন), রজমান আলী সরকার (মনিরামপুর), হাবিবুর রহমান (অন্নদানগর)। এছাড়া উপজেলার স্বাধীনতাবিরোধীরা হলো- কফিল উদ্দিন (চণ্ডীপুর), আবু বকর (পবিত্রঝাড়), আনছার আলী (বীরবিরিয়া), ফেরদৌস (পবিত্রঝাড়), গোলাম মোস্তফা ওরফে দরবেশ আবদুর, রাজ্জাক (ইটাকুমারী), হযরত আলী (পশুয়া), জাফর আলী (তালুক পশুয়া), আব্দুল জব্বার (ফতা), আব্দুল হক চৌধুরী (মনুরছড়া), কিসমত (মনুরছড়া), আব্দুল বাকী (সেচ্চাকান্দি), জালাল উদ্দিন মেম্বর (পারুল), আজির মিয়া (চালুনিয়া), আলাউদ্দিন (কামদেব), আবদুল খালেক (গোব্বাপাড়া), আব্দুল হক (গোবরাপাড়া), জয়নাল আবেদীন (গোবরাপাড়া), আব্দুল খালেক (গোবরাপাড়া), সৈয়দ আলী (হাশিমগ্রাম), আফতাব উদ্দিন (হাশিমগ্রাম) মেহের আলী (ব্রাহ্মণীকুণ্ডা), মোরতাজ ওরফে বছির ক্বারী (জিগাবাড়ী), সৈয়দ আহম্মদ (আদমগ্রাম), আবু বকর সিদ্দিক (নারায়ণপুর), ছামাদ কমান্ডার (তাম্বুলপুর), করিম মওলানা (পূর্বদেবু), ইদ্রিস আলী (গোপালমৌজা), আব্দুল খালেক (নটাবাড়ি), ফরমান আলী (গোপালগ্রাম), আজির উদ্দিন, আইজ্জা রাজাকার (রামগোপাল), আবুল খাঁ (পবিত্রঝাড়), শমসের দফাদার (বালাপাড়া) প্রমুখ।
পীরগাছা উপজেলার আটটি ইউনিয়নেও স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে কমিটি গঠিত হয়। সেসব কমিটির সদস্যরা হলো- ১নং কল্যাণী ইউনিয়ন: পীর বকস (স্বচাষ), বিহারি আবু সাইদ, আবুল কাসেম (কলাবাড়ী), রুহুল আমিন মুন্সি (তালুক কল্যাণী), আবুল হোসেন (তালুক কল্যাণী), মকবুল হোসেন (বড়হাজরা), আ. মতিন জিহাদি (ছোট কল্যাণী) প্রমুখ; ২নং পারুল ইউনিয়ন: রুহুল আমিন (সৈয়দপুর), তার দুই ভাই মাহবুবার রহমান ও মো. সালেহ আহমেদ, মো. হাছেন মওলানা (মনুরছড়া), হাফিজ উদ্দিন মেম্বর (দেউতি), বাহার উদ্দিন (দেউতি), মো. আবুল খায়ের (বিরাহিম), মো. বাবলু মিয়া (চালুনিয়া) প্রমুখ; ৩নং ইটাকুমারী ইউনিয়ন: মো. মোসলেম উদ্দিন (জগদীশ), মোহম্মদ মৌলভী (কালীগঞ্জ), আব্দুল কাদের ক্বারী (হাসনা), আব্দুল হামিদ (হাসনা), আবুল কালাম (বড় হায়াত খাঁ), আব্দুস সালাম বাকী (নরসিং), মো. হাসমত আলী (ইটাকুমারী), মজিবর রহমান (কামদেব), মোশরাশরফ হোসেন (কিসামত ঝিনিয়া) প্রমুখ; ৪নং অন্নদানগর ইউনিয়ন: আব্দুল হক (অন্নদানগর), তার ভাই জয়নাল মিয়া, হারুন মিয়া (বামন সরদার), সাহেব মিয়া (বামন সরদার) প্রমুখ; ৫নং ছাওলা ইউনিয়ন: আলী আহম্মদ (আদম), আ. জলিল (আদম), আব্দুল বারী (পূর্ব ব্রাহ্মণীকুণ্ডা), আ. রহিম (আফতাব উদ্দিন), মফিজল মিয়া (কিশামত ছাওয়া), ময়জুল হক (চর ছাওলা), সাইদুজ্জামান (তাজতালুক), মোতরাজ ওরফে বছির ক্বারী (জিগাবাড়ি) প্রমুখ; ৬নং তাম্বুলপুর ইউনিয়ন: মাওলানা আব্দুল করিম (পূর্বদেবু), আব্দুল মালেক হুক্কা (পূর্বদেবু), ইদ্রিস মিয়া (বেকাটারী গোপাল), মো. ফরমান আলী (গোপাল), কর্নেল (অব.) আ. বাতেন (নটাবাড়ি), আব্দুল মজিদ মুহুরী (রামগোপাল), খোরশেদ আলী (ঘগোয়া), আমজাদ আলী (তাম্বুলপুর), আব্দুর রহমান (তাম্বুলপুর), মো. হানিফ (পূর্বদেবু), রওশন আলী (পূর্বদেবু), মো. আজিজর উদ্দিন (পূর্বদেবু), আবুল কালাম আজাদ (পূর্বদেবু) প্রমুখ; ৭নং পীরগাছা ইউনিয়ন: আব্দুল খালেক (অনন্তরাম উচাপাড়া), আজাহার আলী (চণ্ডীপুর), ক্বারী আব্দুল হাদি (কদমতলা), মোসলেম (পবিত্রঝাড়), ফেরদৌস (পবিত্রঝাড়), তোফাজ্জল হক (নগরজিৎপুর), আব্দুল মান্নান (মাছুয়াপাড়া), আবদুল হামিদ (দশগাঁও) প্রমুখ এবং ৮নং কৈকুড়ী ইউনিয়ন: মাওলানা আ. জব্বার বরানী (রামচন্দ্রপাড়া), আব্দুস সোবহান (নয়াপাড়া), লুৎফর রহমান (সুবিদ), মাওলানা গোলজার হোসেন (নজরমামুদ), আব্দুল আজিজ মিয়া (কুতুব্বাস), লাল মিয়া (মকসুদ খাঁ), জামাল মিয়া (রামচন্দ্রপাড়া), সাজু মিয়া (সুল্লিপাড়া), আমির উদ্দিন (চৌধুরাণী) প্রমুখ।
শান্তি কমিটির সহায়তায় উপজেলায় রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। উপজেলার উল্লেখযোগ্য রাজাকাররা হলো- দেওয়ান আব্দুল হাই (দেউতি), আব্দুল গফুর খাঁন (দেউতি), আব্দুল মুন্নাফ (দেউতি), খলিলুর রহমান (দেউতি), নুর মোহাম্মদ (দেউতি), নুরজামান (দেউতি), হাফিজুর রহমান (দেউতি), মনির উদ্দিন (দেউতি), বাহার উদ্দিন (দেউতি), আবুল কাশেম (অনন্তরাম), মুসলিম আলী (সুখানপুকুর), মফিজুর রহমান (নগরজীৎপুর), মজিবুর রহমান (নগরজীৎপুর), সামছুল হক (নগরজীৎপুর), আব্দুল কুদ্দুস ( নটাবাড়ী), সিদ্দিক উল্লাহ (নটাবাড়ী), গিয়াস উদ্দিন (শুখান পুকুর), আব্দুল হালিম (গুয়াবাড়ী), আব্দুল মজিদ (অনন্তরাম), জয়নাল আবেদীন (শুখান পুকুর), খায়রুজ্জামান (শুখান পুকুর), আব্দুর রহমান (দেউতি), নুরুল ইসলাম (পবিত্রঝার), কাজী ফজলুল হক (কিসামত কালা), আব্দুল খালেক (গোপাল), আব্দুল কাদের (গোপাল), ইদ্রিস আলী (গোপাল), আব্দুর রহিম (আত্তাফ উদ্দিন হাসিম), আব্দুল গফুর (নটাবাড়ী), ময়জুল হক (চর ছাওলা), মোহাম্মদ আলী (চাপড়া), আব্দুস সালাম (কুতুববাস), জামাল উদ্দিন (রামচন্দ্রপাড়া), সাহজাহান (সুল্লিপাড়া), সাইদুজ্জামান (তাজতালুক), মেহের আলী (পুব বাহ্মনীকুন্ডা), সোলিমান আলী (পাঠক শিখর), আব্দুল মজিদ (পুবদেবু), হযরত আলী (বড়হাজড়া), আবুল কাশেম (কলাবাড়ী), মজিবুলহক (কলাবাড়ী), মকবুল আহমেদ (বড় হাজড়া), আবুল হোসেন (দিলালপাড়া), মোজাম্মেল হোসেন (দিলালপাড়া), সামছুল হক (দিলালপাড়া), শেখ আলম (হাসনা), আবুল কালাম (হাসনা), তছলিম উদ্দিন (হাসনা), আব্দুল সিদ্দিক (হাসনা), মোফাজ্জল হোসেন (হাসনা), মোজম্মেল হক (হাসনা), আব্দুল হক (অন্নদানগর), আরমান আলী (অন্নদানগর), আব্দুল বাতেন (অন্নদানগর), জয়নুল আবেদিন (অন্নদানগর), আব্দুল খালেক (বামন সদ্দার), হারুন অর রসীদ (বামন সদ্দার), তোফাজ্জল হোসেন (অনন্তরাম), আব্দুস সালাম (অনন্তরাম), মজিবর রহমান (কালিগঞ্জ), লিয়াকত আলী আলী (পীরগাছা), গোলাম সরোয়ার (রামচন্দ্রপাড়া), জয়নুল আবদীন (জামিরজান), আব্দুল কালাম (রামচন্দ্রপাড়া), নুর নবী (দিলালপাড়া), আব্দুল হামিদ (দিলালপাড়া), আব্দুল কাদের (দাদন), আব্দুল ওয়াহেদ (পাঠকসিকর), নুরুল ইসলাম (জামিরজান), আব্দুল রফিক (জামিরজান), আলমগীর (বড়পানসিয়া), সোহরাব আলী (নটাবাড়ী), মোজম্মেল হক (পুবদেবু), আলী আহমেদ (আদম), আজিজার রহমান (দাদন), সোহরাব আলী (কিসামত ঝিনিয়া), ওমর আলী (মনুরছরা), ইনতাজ আলী (পুবদেবু), আবু জাফর (তালুকইসাদ), সফিউল ইসলাম (কৈকুড়ী), মমতাজ উদ্দিন (দাদন), বাদশা মিয়া (দাদন), ইসহাক আলী (দাদন), নজিবুদ্দিন (দাদন), এটিএম নুরুল্লাহ (পাঠকসিকড়), এটিএম রহিউল্লাহ (পাঠকসিকড়), আবেদ আলী (হাসনা), আব্দুল খলেক (হাসনা), মোশারফ হোসেন (হাসনা), দারিজুল ইসলাম (তাম্বুলপুর), আব্দুস সামাদ (তাম্বুলপুর), মেসের উদ্দিন (তাম্বুলপুর), আবু তালেব (হাসনা), আব্দুস সালাম (অনন্তরাম), আব্দুল মান্নান (অনন্তরাম), আজিজার রহমান (গুয়াবাড়ী), আবুল হোসেন (তালুক কল্যাণী), মোজাম্মেল হক (শুখানপুকুর), হযরত আলী (গুয়াবাড়ী), বদিউজ্জামান (দেউতি), আব্দুর রউফ (পবিত্রঝার), আব্দুর রফিক (রামচন্দ্রপাড়া), তোফাজ্জল হোসেন (সৈয়দপুর), নুরুল ইসলাম (চন্ডিপুর ), ফজলুল হক (জামিরজান), কালা মিয়া (চন্ডিপুর), মোহাম্মদ আলী (চন্ডিপুর), মারফত উল্লাহ (ফকির টারী), আব্দুল করিম (আরাজীচালনীয়া), ফজলার রহমান (আরাজীচালনীয়া), আব্দুল জলিল (বিরাহীম), শছির উদ্দিন (চালনীয়া), ফজলুল হক (চালনীয়া), আব্দুর রহমান (তাম্বুলপুর), আমজাদ আলী (গোবরাপাড়া), আব্দুর রহমান (তাম্বুলপুর), মজিবুর রহমান (তাম্বুলপুর), খোরশেদ আলী (ঘগেয়া), আব্দুল হক (নটাবাড়ী), সামছুল হক (নটাবাড়ী), কফিল উদ্দিন (রামচন্দ্রপাড়া), মোহাম্মদ আলী (নটাবাড়ী), আতাউর রহমান (সুল্লিপাড়া), মোহাম্মদ আলী (সুবিদ), আব্দুর রহমান (কৈকুড়ী), আব্দুল বারী (নটাবাড়ী), মোমতাজ উদ্দিন (হাসনা), মতিয়ার রহমান (ছোট কল্যানী), আব্দুল হামিদ (হাসনা)।
পীরগাছা বাজারের ছায়াবীথি ক্লাব ও পাঠাগারে স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্প ও এর পাশে পাটের গুদামটি নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবির হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এ-দুটি স্থানে স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের ধরে এনে নির্যাতন শেষে হত্যা করা হতো। ৩রা এপ্রিল পাকবাহিনী পীরগাছায় অনুপ্রবেশ করলে রাজাকার কমান্ডার অবাঙালি রুহুল আমিন মাস্টার (সৈয়দপুর) তার সহযোগী কফিল উদ্দিন (চণ্ডীপুর), আবু বকর (পবিত্রঝাড়), আনছার আলী (বীরবিরিয়া), ফেরদৌস (পবিত্রঝাড়) ও রাজ্জাক (ইটাকুমারী)- এর সহযোগিতায় পীরগাছা বাজারে হিন্দুদের দোকানে লুটপাট করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কলাবাড়ি মৌজার মোমেছা খাতুন ও অপর একজন নারী তাদের দ্বারা ধর্ষিত হয়। অন্নদানগর ইউনিয়নের পাজিরজান এলাকার একজন নারীকে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে সম্ভ্রমহানী করে। দেশ স্বাধীনের পর তাঁকে ঐ ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করা হয়। পীরগাছা বাজারের পাশে পাকবাহিনী আরো একজন নারীর সম্ভ্রমহানি করে। রামচন্দ্রপাড়া গ্রামের রাজাকার জোনাব আলম, রব্বানী মওলানা, লুৎফর রহমান ও জমিরজান গ্রামের রাজাকার আইয়ুব আলী চৌধুরাণী স্টেশনের পাশে মোনা বাবুর বাড়িতে লুটপাট চালায় এবং এলাকার এক তহসিলদারের কন্যার সম্ভ্রমহানি করে।
মুক্তিযোদ্ধা ভবেশ চন্দ্র বর্মণ কাউনিয়া থেকে পীরগাছায় আসার পথে রাজাকাররা তাঁকে হত্যা করে। পীরগাছা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংগ্রাম কমিটির নেতা মোসলেম উদ্দিন ওরফে মতি মিয়াকে রাজাকার কমান্ডার রুহুল আমিনের নেতৃত্বে তার সহযোগিরা বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। এ-সময় তারা শচীন নামে একজন পত্রিকা বিক্রেতাকেও হত্যা করে। পাঁচ-ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা পীরগাছা থেকে মিঠাপুকুর এলাকায় যাওয়ার পথে নেকমামুদ এলাকার রাজাকার করিম মওলানার নেতৃত্বে তার সহযোগীরা তাঁদের হত্যা করে।
পীরগাছা উপজেলার নব্দীগঞ্জ ও পীরগাছা বাজারের পাটগুদামের পাশে বধ্যভূমি ও গণকবর রয়েছে। ১৩ই এপ্রিল পাকবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে ১১ জন ইপিআর মুক্তিযোদ্ধাকে রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়কের পাশে নব্দীগঞ্জে ধরে এনে হত্যা করে এবং সেখানেই গণকবর দেয়। এছাড়া, পীরগাছা বাজারের পাট গুদামের পাশে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়। এ-দুটি ঘটনা যথাক্রমে নব্দীগঞ্জ গণহত্যা ও পীরগাছা বাজার গণহত্যা নামে পরিচিত।
২৩ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি গ্রুপ পীরগাছার ওকড়াবাড়ি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা কাজেম মাস্টারের বাড়িতে অবস্থান নেন। ৩০শে নভেম্বর পাকবাহিনীর একটি গ্রুপ তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ করেন এতে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও একজন আহত হন। যুদ্ধটি ওকড়াবাড়ি যুদ্ধ নামে পরিচিত। ১৬ই ডিসেম্বর পীরগাছা উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
পীরগাছা উপজেলার পাঁচজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম জানা যায়। তাঁরা হলেন— ভবেশ চন্দ্র বর্মণ (পিতা মহেন্দ্ৰ চন্দ্ৰ বর্মন, পূর্বদেবু), নজির হোসেন আকন্দ (পিতা নকিব আকন্দ, পাওটানা হাট), সুরুজ আলী (পিতা আব্দুর রহিম মণ্ডল, পারুল), আবু বকর সিদ্দিক (পিতা সাহাব উদ্দিন, পুটিয়ালপাড়া) ও মোসলেম উদ্দিন মতি মিয়া (পিতা নছির উদ্দিন সরকার, পূর্বদেব)
১৩ই এপ্রিল নব্দীগঞ্জ গণহত্যায় শহীদ ১১ জন ইপিআর মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে নব্দীগঞ্জ বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। মকরমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মুক্তিযুদ্ধের একটি ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ছাওলা ইউনিয়নের দামুশ্বর মৌজায় মুক্তিযোদ্ধা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পীরগাছা উপজেলা পরিষদের বটতলা থেকে রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত সড়কটি শহীদ ভবেশ চন্দ্র রায়ের নামে, পীরগাছা বাজার থেকে কালিগঞ্জ বাজার পর্যন্ত সড়কটি শহীদ সুরুজ আলীর নামে, পীরগাছা সদর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বাজারের চৌরাস্তার মোড় পর্যন্ত সড়কটি শহীদ আবু বকর সিদ্দিকের নামে এবং পীরগাছা উপজেলা পরিষদ থেকে সোনালী ব্যাংক পর্যন্ত সড়কটি শহীদ নজির হোসেন আকন্দের নামে নামকরণ করা হয়েছে। [ওয়াজেদ আলী সরকার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড