You dont have javascript enabled! Please enable it!

পিটিআই পুকুরপাড় গণকবর (মানিকগঞ্জ সদর)

পিটিআই পুকুরপাড় গণকবর (মানিকগঞ্জ সদর) মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে ১২-১৪ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করে কবর দেয়া হয়।
মানিকগঞ্জ জেলার প্রাইমারি ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (পিটিআই) ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত। ৮ই এপ্রিল পাকবাহিনী মানিকগঞ্জ শহর দখল করে পিটিআই-এ ক্যাম্প স্থাপন করে। প্রথমদিকে ক্যাম্পে ৩০- ৩৫ জন পাকসেনা অবস্থান করত। রাজাকার বাহিনী গঠনের পর কিছু রাজাকারকে তারা পিটিআই-র গেটে পাহারায় বসায়। প্রতিদিন পাকসেনারা লোকজনকে ধরে এনে এ ক্যাম্পে তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করত। এখানে নারীদের ওপর তারা পাশবিক নির্যাতনও চালাত। বাস থেকে নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে নামিয়ে ক্যাম্পে আটক ও নির্যাতন করত।
১৩ই ডিসেম্বর সকালে পাকবাহিনী, রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যদের আচরণে পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। দুপুরের দিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, পাকবাহিনী, রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যরা জেলার পিটিআই, ডাকবাংলো ও ক্রীড়া সংস্থা থেকে ঢাকার দিকে পালিয়ে গেছে। মানিকগঞ্জ শহর ও আশপাশে তাদের কোথাও দেখা যাচ্ছিল না। খবর পেয়ে শতশত মুক্তিযোদ্ধা মানিকগঞ্জ ঢুকে শহরের দখল নেন। তাঁরা শহরের বিভিন্ন স্থানে পাকসেনাদের দ্বারা সংঘটিত নির্যাতন-লুণ্ঠন-অগ্নিসংযোগ-হত্যার নানা স্থান ও ঘটনার খবর নিতে থাকেন। এক পর্যায়ে পুকুরপাড়ের বিল্ডিং- এর খুব কাছে একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। গণকবর দেখে বোঝা যায় এটি কয়েক ঘণ্টা আগে খোঁড়া হয়। মাটি দিয়ে চাপা পর্যন্ত দেয়া হয়নি। যারা প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের মতে এ গণকবরে কমপক্ষে ১২-১৪টি লাশ ছিল এবং তখনো লাশগুলোতে পঁচন ধরেনি। ধারণা করা হয়, নিহতদের ১২ তারিখ রাতে অথবা ১৩ তারিখ সকালে হত্যা করা হয়। নিহত মহিলাদের গায়ে কাপড় ছিল না। যারা এ গণকবর দেখতে গিয়েছিলেন তারা প্রত্যেকেই পরিচিত বা আপনজন পাওয়া যায় কি-না সে চেষ্টা করছিলেন। শহরের লোকজন পরিচিত কাউকে পাননি। ফলে ধারণা করা হয় নিহতরা অন্য এলাকার মানুষ ছিলেন হয়তো তারা বাসের হতভাগ্য যাত্রী ছিলেন। পিটিআই-এর খুব কাছাকাছি ভ্রাম্যমাণ ফলের দোকান, চায়ের দোকানদার ও বাসের হেলপারদের কাছ থেকে জানা যায়, এ-রকম গণকবর পিটিআই ভবনের ভেতরে আরো থাকতে পারে।
মুক্তিবাহিনী শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর সাধারণ মানুষ নিখোঁজ আত্মীয়-স্বজনদের খুঁজতে শুরু করে। অনেকে পিটিআই-এর বিভিন্ন রুমে খুঁজতে থাকেন। এসব রুমে রক্তমাখা জামা, শাড়ি, ব্লাউজ ও অন্যান্য কাপড়-চোপড় দেখা যায়। মৃত্যুর আগে কেউ কেউ দেয়ালে রক্ত দিয়ে শেষ আকুতি লিখে গেছেন। ৮×১০ ফুট আকারের গর্তের ভেতর এত নারী-পুরুষের লাশ এক সঙ্গে পড়ে থাকার দৃশ্য দেখে মানুষের দুঃখ ও ক্রোধের ভাষা বর্ণনার অযোগ্য হয়। সমস্ত ক্রোধ গিয়ে পড়ে শান্তি কমিটি, রাজাকার ও দালালদের ওপর। এসব দেখে মুক্তিবাহিনীর জওয়ানরা রাজাকার ও দালালদের খোঁজ করতে শুরু করেন। হাতের কাছে যাদের পাওয়া যায় তাদের উপযুক্ত শাস্তিও দেয়া হয়। এ অবস্থায় অন্য রাজাকার ও দালালরা মানিকগঞ্জ থেকে পালিয়ে যায়। [মো. শহীদুল ইসলাম ফারুক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!