পিরোজপুর যুদ্ধ (কালীগঞ্জ, সাতক্ষীরা)
পিরোজপুর যুদ্ধ (কালীগঞ্জ, সাতক্ষীরা) সংঘটিত হয় ২৪শে সেপ্টেম্বর। এতে ১০-১৫ জন পাকসেনা ও রাজাকার হতাহত হয় এবং রাজাকারদের ৩টি রাইফেল মুক্তিযোদ্ধারা হস্তগত করেন।
বংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে ৪৫ কিমি পূর্বে এবং কালীগঞ্জ ক্যাম্প থেকে ৩-৪ কিমি দক্ষিণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের পশ্চিম পাশে পাকবাহিনীর একটি ঘাঁটি ছিল। এখান থেকে পাকসেনারা পার্শ্ববর্তী উপজেলা শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ সদরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করত। তাদের এ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে দেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জরুরি ছিল। ঘটনার দিন ক্যাপ্টেন হুদার নির্দেশে কমান্ডার শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের নেতৃত্বে থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল, এলএমজি, এসএলআর, স্টেনগান, ২ ইঞ্চি মর্টার আর পর্যাপ্ত গ্রেনেডসহ লিয়াকত আলী, মোকাররম হোসেন, আব্দুল গফুর, ওজিহার রহমান, আকবর হোসেন, আক্কাস উদ্দীন, আলী মোর্তজা, ফজর আলী, আবদুস সামাদ, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ ৫০-৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। রাতে পাকসেনাদের শ্যামনগর দখলে যাবার খবর নিশ্চিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সিএন্ডবি (সওজ) রাস্তার পূর্ব পাশে এলএমজি, এসএমজিসহ আর পশ্চিম দিকে আক্কাস উদ্দীন এলএমজি এবং মোকাররম ২ ইঞ্চি মর্টারসহ অবস্থান নেন। অধিনায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বাকিদের নিয়ে পিরোজপুর ব্রিজের নিকট অবস্থান নেন। রাত ১১টার দিকে কিছু সংখ্যক রাজাকারসহ পাকসেনাদের দলটি রেঞ্জের মধ্যে আসতেই আক্রমণ শুরু হয়। প্রথমে ৫-৭ জন রাজাকার আহত হয়। বাকিরা পালিয়ে যায়। এরপর পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ পাল্টা- আক্রমণ চলতে থাকে। এভাবে রাতভর এবং পরের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত যুদ্ধ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ ফুরিয়ে গেলে তাঁরা পিছু হটে পশ্চিম পাশের ধানক্ষেতের মধ্য দিয়ে গিয়ে নদী পার হয়ে হিঙ্গলগঞ্জ ক্যাম্পে পৌঁছান।
পিরোজপুর যুদ্ধে রাজাকার ও পাকসেনা মিলে ১০-১৫ জন হতাহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একজন আহত হন। মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের ৩টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল হস্তগত করেন। এই আক্রোশে রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা আলী মোর্তজার পিতা হারান সরদারকে হত্যা করে। [এম এম নজমুল হক]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড