পিলজঙ্গ যুদ্ধ (ফকিরহাট, বাগেরহাট)
পিলজঙ্গ যুদ্ধ (ফকিরহাট, বাগেরহাট) সংঘটিত হয় ৪ঠা অক্টোবর। এ-যুদ্ধে ১৪ জন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ৫ জন আহত হন।
জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে নরসিংহপুর গ্রামের শরীফ আবু তালেবের নেতৃত্বে মোল্লারহাট থানার অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা কালীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতের বশিরহাটে যান। সেখান থেকে এক মাসের ট্রেনিংয়ের জন্য তাঁদের বিহারের চাকুলিয়া ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। ট্রেনিংশেষে বশিরহাটের নিকট বাগুনদিয়া ক্যাম্পে তাঁদের রাখা হয়। এরপর পথপ্রদর্শক মুক্তিযোদ্ধা প্রফুল্ল কুমার ঢালী ওরফে মরু ঢালী এবং সোহরাব হোসেনের মাধ্যমে উত্তর-খুলনা সাব-সেক্টরে আসার জন্য তাঁরা হিঙ্গলগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করেন। অতঃপর তাঁরা শমসেরনগর হয়ে চালনা বন্দর দিয়ে এসে বাজুয়া বাজারে অবস্থান নেন। বাজুয়ায় তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন যে, তাঁরা উত্তর-খুলনা সাব-সেক্টরে না গিয়ে মোল্লারহাটের কোথাও গিয়ে আলাদা ক্যাম্প করবেন। অতঃপর শরীফ আবু তালেব কয়েকটি নৌকা ভাড়া করে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বাজুয়া থেকে ৪ঠা অক্টোবর ফকিরহাটের নওয়াপাড়া হয়ে পায়ে হেঁটে মোল্লারহাটের দিকে রওনা হন। পথিমধ্যে সোলায়মান নামের এক দালাল খাবার সরবরাহ করার কথা বলে দলটিকে পিলজঙ্গের কাছে নিয়ে আসে এবং এক ফাঁকে রাজাকারদের খবর দেয়। পিলজঙ্গ গ্রামে তখন রাজাকারদের একটি ক্যাম্প ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা তা জানতেন না। রাত ১২টার দিকে তাঁরা পিলজঙ্গ পৌঁছানোমাত্র একদল রাজাকার চারদিক থেকে তাঁদের আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এ আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকেন।
প্রায় দুঘণ্টা মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারদের মধ্যে যুদ্ধ হয়। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এমতাবস্থায় রাত ২টার দিকে ২২ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কমান্ডার শরীফ আবু তালেব পশ্চাদপসরণ করলে অন্য প্রান্তে যুদ্ধরত ৩৩ জন মুক্তিযোদ্ধা বেকায়দায় পড়ে যান। রাজাকাররা তাঁদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। রাতভর উভয় পক্ষে গুলি বিনিময় হয়। এ-যুদ্ধে ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাঁরা হলেন- মোল্লারহাট থানার সরদার লিয়াকত আলী (চরকুলিয়া), অমিতোষ মণ্ডল (মেহেরপুর), মো. মুকিত (কামারগ্রাম), রত্তন আলী মোল্লা (কুলিয়া), মো. ওহাব আলী মোল্লা (কুলিয়া), মো. জালাল উদ্দিন মোল্লা (কুলিয়া), আছাদুজ্জামান বিশ্বাস (নগরকান্দি), প্রভাষ চন্দ্র সাহা (নগরকান্দি), মো. জাহিদ হোসেন ওরফে জালাল (নগরকান্দি), মো. গাউস উল হক (সরসপুর), মো. তৈয়ব আলী (ঘোষগাতি), চিতলমারী থানার লিয়াকত হোসেন (কলাতলা), মো. জাবেদ মিয়া তারা (শৈলদহ) এবং স ম শহীদুল আলম (কলাতলা)। ঐদিনের যুদ্ধে মারাত্মকভাবে আহত হন- আলী রেজা মৃধা, আ. কালাম আজাদ, মো. কওসর আলী, আ. সবুর শিকদার ও কালাম। [জগন্নাথ বড়ুয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড