পালপাড়া গণহত্যা (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম)
পালপাড়া গণহত্যা (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় ৩০শে এপ্রিল (১৬ই বৈশাখ, ১৩৭৮) শুক্রবার। চন্দনাইশ উপজেলার দক্ষিণ গাছবাড়িয়ার পালপাড়ায় পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা এ গণহত্যা চালায়। সেদিন সকাল ৯টার দিকে দক্ষিণ গাছবাড়িয়ার দেয়াঙপাড়ার মোহাম্মদ হোসেন নামে এক কুখ্যাত ব্যক্তি দোহাজারী ক্যাম্প থেকে পাকবাহিনীকে নিয়ে আসে। তার সঙ্গে আরো ছিল- শুক্কুর ফকির (দেয়াঙপাড়া), মফজল মেম্বার (বুলারতালুকস্থ ভূঁইঞাপাড়া), আমিন শরীফ (পূর্ব দোহাজারী), ইসরাইল হাজি (জামিজুরী), তাজর মুলুক (দোহাজারী), আহমদ শফি (দোহাজারী), আনু চৌকিদার (হাশিমপুর), ইদ্রিস চৌকিদার (হাশিমপুর), আবদুল অদুদ ওরফে লেদু (হাশিমপুর), নুরুচ্ছাফা (হাশিমপুর), মাহমদ ছফা (হাশিমপুর), আজিজুল ইসলাম (হাশিমপুর), আছরোচ্ছাফা (হাশিমপুর) প্রমুখ।
হানাদাররা হঠাৎ এসে কয়েক ঘণ্টা ধরে ভয়াবহ বর্বরতা ও তাণ্ডব চালিয়ে ১৪জনকে হত্যা করে। এ-সময় লুটপাটের পর তারা ৮৬টি ঘরে আগুন দেয় এবং অনেক নারীকে ধর্ষণ করে। পাকসেনারা মাস্টার ক্ষেত্রমোহন পালের ঘরে আগুন দিয়ে তাঁর স্ত্রী আলো রাণী পালকে ধর্ষণ করতে উদ্যত হলে তিনি কোলে থাকা তিন মাসের শিশুপুত্র প্রদেশ পালকে শাশুড়ির দিকে ছুঁড়ে দিয়ে নিজে জ্বলন্ত ঘরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি ছিলেন দুই পুত্র স্বদেশ পাল ও প্রদেশ পাল এবং এক কন্যা প্রীতি রাণী পালের জননী। প্রদেশ পালের বয়স ছিল মাত্র তিন মাস।
পালপাড়া গণহত্যায় শহীদরা হলেন- সাধন পাল (পিতা রমেশ পাল), উত্তরা পাল সওদাগর, রাজকিশোর পাল (পিতা শরৎচন্দ্র পাল), সুবল পাল, পেঠান পাল, খিরোদবাসী পাল, ধনরাম পাল, টুনু পাল, চান্দু পাল (পিতা গোবিন্দ পাল), কৃষ্ণ পাল ওরফে সাধু, খগেন্দ্র পাল ফইরা, নিশি সওদাগর, নিকুঞ্জ পাল এবং সুমন্ত পাল। এঁদের যেখানে সমাহিত করা হয়, সে স্থানটি এখন গণকবর হিসেবে পরিচিত। এখানে শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। স্থানটি গাছবাড়িয়া মৌজায় অবস্থিত। [শামসুল আরেফীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড