পালপাড়া গণহত্যা (হাকিমপুর, দিনাজপুর)
পালপাড়া গণহত্যা (হাকিমপুর, দিনাজপুর) সংঘটিত হয় ১৮ই এপ্রিল। এতে ৭ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান এবং ৪ জন আহত হন।
হাকিমপুর পৌরসভার বর্তমান কার্যালয় সংলগ্ন একটি পাড়ার নাম পালপাড়া। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে কয়েকটি পাল পরিবার বসবাস করত যারা মাটির তৈজসপত্র বানাত। ১৮ই এপ্রিল এখানে গণহত্যা সংঘটিত হয়। গণহত্যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে ৭ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান এবং ৪ জন আহত হন।
ঘটনার দিন সকালে পাকসেনাদের একটি দল পূর্বদিক থেকে ফায়ার করতে-করতে পালপাড়ায় প্রবেশ করে। তবে তারা কাউকে হত্যা করেনি। ১৮ তারিখ সকালে তারা চলে যাওয়ার পর আরেক দল পাকসেনা আসে এবং নূর মোহাম্মদ মণ্ডল নামে একজনের বাড়িতে কয়েকজন গ্রামবাসীকে বেঁধে রাখে। তারপর তাদের বিরুদ্ধে বিহারি হত্যার অভিযোগ তুলে তারা তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে ৭ জন শহীদ হন। শহীদরা হলেন— নূর মোহাম্মদ মণ্ডল (৬৫) (পিতা তরিকুল মণ্ডল), গোলাম রহমান মণ্ডল (৬৩) (পিতা তরিকুল মণ্ডল), তনছের আলী মণ্ডল (৬১) (পিতা শের আলী মণ্ডল), নিয়ামত আলী ওরফে নিমাই (৬২) (পিতা জয়নাল আবেদীন), মো. নেজামউদ্দিন (১৩) (পিতা নিয়ামত আলী নিমাই), বীরেন চন্দ্র পাল (৫৪) (পিতা রামচন্দ্র পাল) এবং আফজাল হোসেন মীর (২২) (পিতা রিয়াজউদ্দিন মীর)। নূর মোহাম্মদ মণ্ডল ও গোলাম রহমান মণ্ডল ছিলেন আপন সহদোর। নিয়ামত আলী ওরফে নিমাই ও মো. নেজামউদ্দিন ছিলেন পিতা-পুত্র।
এ গণহত্যার সময় ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণে বেঁচে যান। তারা এক প্রকার পঙ্গু জীবন যাপন করে দীর্ঘদিন পর মৃত্যুবরণ করেন। তারা হলেন- তমিরউদ্দিন মণ্ডল (৬৮) (পিতা শথিল সর্দার), রিয়াজউদ্দিন মীর (৬৯) (পিতা কহরউদ্দিন মীর), হাবিলউদ্দিন আনসারী (৬৬) ও আকতার হোসেন (৩০)। গণহত্যার সময় দুজন নারী পাকিস্তানি সেনাদের হাতে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। তাদের একজন নিহত নিয়ামত আলীর স্ত্রী খুকিমন বেওয়া (৪৯) এবং অপর জন তার পুত্রবধূ সালেহা খাতুন (২১) (স্বামী মো. জামালউদ্দিন। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড