You dont have javascript enabled! Please enable it! পালরদী নদী যুদ্ধ (কালকিনি, মাদারীপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

পালরদী নদী যুদ্ধ (কালকিনি, মাদারীপুর)

পালরদী নদী যুদ্ধ (কালকিনি, মাদারীপুর) সংঘটিত হয় অক্টোবর মাসে। কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রামের পাশে পালরদী নদীতে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর রসদবাহী লঞ্চে আক্রমণ করলে পাকসেনাদের সঙ্গে তাঁদের এ-যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ১৮ জন পাকসেনা নিহত এবং প্রচুর রসদ ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। বরিশাল জেলার টর্কি ও গৌরনদী বন্দরে পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে নিয়মিত খাদ্য ও রসদ আসত ঢাকা ও বরিশাল থেকে নদীপথে। পাকবাহিনীর খাদ্য ও রসদ বোঝাই নৌবহর আসার সংবাদর পেয়ে গৌরনদী থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মিজান ও কালকিনি থানা মুজিব বাহিনী-র কমান্ডার মো. জালাল উদ্দিন যৌথ আক্রমণ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। তখন অক্টোবর মাস। মো. জালাল উদ্দিনের ক্যাম্প ছিল দক্ষিণ সাহেবরামপুর মাণিক ভূঁইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কমান্ডার জালাল উদ্দিন তাঁর সহযোগী রুহুল আমিন, শহিদুল (ঢাকা), দুদু মিয়া (টকি) ও আলমগীর-সহ ১০-১২ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কয়ারিয়া ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রামে পালরদী নদীর পূর্বপাড়ে এবং মিজান তাঁর বাহিনী নিয়ে পালরদী নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থান নেন। রাত ১২টার দিকে রসদ বোঝাই লঞ্চ নিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের উভয় দলের মধ্যবর্তী স্থানে আসামাত্র একযোগে দুদিক থেকে আক্রমণ শুরু হয়। মিজান গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা লঞ্চটির সামনের দিকে ছিলেন। তাঁদের এলএমজি-র ব্রাশফায়ারে লঞ্চটির ছাদ ও চিমনি উড়ে যায় এবং সারেং নিহত হয়। ফলে চালকবিহীন লঞ্চটি ঘুরতে-ঘুরতে পশ্চিম পাড়ে ধাক্কা খেয়ে থেমে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি আক্রমণে ১৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। প্রায় ২ ঘণ্টা যুদ্ধের পর লঞ্চটি মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও রেশন মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। এসব রসদ বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। দুজন বাঙালি সৈনিক ও দুজন রাজাকার নদী সাঁতরে পালাতে গেলে জালাল উদ্দিন গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এ দুই বাঙালি সৈনিকের একজনের নাম ছিল আবদুল কুদ্দুছ (বগুড়া)। এ দুই সৈনিককে স্বাধীনতার পর মুক্তি দেয়া হয়। [বেনজীর আহম্মদ টিপু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড