You dont have javascript enabled! Please enable it!

পাল্টাপুর গণহত্যা (বীরগঞ্জ, দিনাজপুর)

পাল্টাপুর গণহত্যা (বীরগঞ্জ, দিনাজপুর) সংঘটিত হয় ২৩শে জুন। এতে বহু সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়। পাল্টাপুর বীরগঞ্জ উপজেলার আত্রাই নদী সংলগ্ন একটি ইউনিয়ন। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ ইউনিয়নের একাধিক স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা গণহত্যা চালায়। পাল্টাপুর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ঢেপা নদীর ভাতগাঁ ব্রিজের নিচে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প ছিল। ব্রিজের নিচে ও নদীর দক্ষিণ কিনারে তাদের একাধিক বাংকার ছিল। পাকিস্তানি সেনারা এসব বাংকারে লুকিয়ে থাকত এবং মুক্তিবাহিনীর হাত থেকে রক্ষার জন্য ব্রিজ পাহারা দিত। হানাদাররা রাজাকারদের সহায়তায় মাঝে- মাঝেই আশপাশের গ্রামগুলোতে হামলা চালিয়ে লুটতরাজ, নির্যাতন ও নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন করত।
২৩শে জুন বিকেল ৩টার দিকে পাকিস্তানি সেনারা কয়েকজন রাজাকারকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ পাল্টাপুরের বানিয়াপাড়ায় যায়। তারা হরি বর্মণ (৫৮) ও তার জামাতা উপেন্দ্রনাথ বর্মণকে (৩৫) আটক করে এবং দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর পাশের বাড়ি গিয়ে ঐ বাড়ি থেকে চিকারাম বর্মণ (৬১) ও তার ভাগ্নে হেমবাবু রায়কে (৪৭) আটক করে এবং তাদেরও দড়ি দিয়ে বাঁধে। এ ৪ জনকে বাড়ির পাশেই একটি আইলের ধারে গুলি করে হত্যা করে।
পাকিস্তানি সেনারা একই দিন অর্ধ কিলোমিটার দূরের ঘোড়াবন্দ পাল্টাপুর গ্রামেও গণহত্যা চালায় এবং অভয় কান্তি সরকার, খগেন্দ্র রায় ও ও আফাজউদ্দিন (উত্তর পাল্টাপুর) নামে ৩ জনকে গুলি করে হত্যা করে। অভয় ও খগেন্দ্র ছিলেন মামা-ভাগ্নে। আফাজউদ্দিন দোকান থেকে বাড়ি যাবার সময় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়েন। তাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়।
পাকিস্তানি বাহিনীর নারকীয় অভিযানে পাল্টাপুর ইউনিয়নের একাধিক স্থানে অসংখ্য মানুষ হতাহত হয়। এর মধ্যে রয়েছে শিশু, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষসহ নানা জায়গা থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আগত মানুষজন। পাল্টাপুর গণহত্যার শিকার অসংখ্য শহীদের মধ্যে ১৫ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- হরি বর্মণ (৫৮) (পিতা তারাকান্ত বর্মণ, বানিয়াপাড়া দক্ষিণ পাল্টাপুর), চিকারাম বর্মণ (৬১) (পিতা শান্তরাম বর্মণ, বানিয়াপাড়া দক্ষিণ পাল্টাপুর), উপেন্দ্রনাথ রায় ওরফে পঞ্চানন (৩৫) (পিতা যোগেশ চন্দ্র রায়, বানিয়াপাড়া দক্ষিণ পাল্টাপুর), হেমবাবু রায় (৪৭) (বানিয়াপাড়া দক্ষিণ পাল্টাপুর), অভয় কান্তি সরকার (পিতা শ্রীকান্ত সরকার, ঘোড়াবন্দ সরকারপাড়া), খগেন্দ্র রায় (পিতা বিশাতু রায়, ঘোড়াবন্দ সরকারপাড়া), মো. আফাজউদ্দিন (পিতা এবার আহমেদ, উত্তর পাল্টাপুর), তমিজউদ্দিন শাহ্ (পিতা ইউসুফ আলী শাহ্, সেনগ্রাম), ডা. পূর্ণ চন্দ্র রায় (পিতা তেরিমোহন রায়, ধুলট), মাহবুব হোসেন বুলু (পিতা মুসলিমউদ্দিন শাহ্, সেনগ্রাম), মো. ইসমাইল (সুন্দইল), মো. নুরুল হক (ভাতগাঁও), মো. মেহের আলী (মাকলাফাটা), বজির দেওয়ানী (পিতা রেজ্জাক আলী শাহ্, সেনগ্রাম) এবং মিজানুর রহমান (পিতা আফতাব উদ্দিন, সেনগ্রাম)। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!