You dont have javascript enabled! Please enable it!

পাহাড়পুর নৌযুদ্ধ (আজমিরীগঞ্জ, হবিগঞ্জ)

পাহাড়পুর নৌযুদ্ধ (আজমিরীগঞ্জ, হবিগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১৭ই আগস্ট। এতে বেশ কয়েকজন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। অন্যদিকে কয়েকজন গ্রামবাসী হতাহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ হস্তগত করেন।
আজমিরীগঞ্জ থানার বদলপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম পাহাড়পুর। ভাটি এলাকার এ গ্রামটি বানিয়াচঙ্গ থানার মাকালকান্দি গ্রামের নিকটবর্তী। আগস্ট মাসের মধ্যভাগে জগৎজ্যোতির দাসপার্টি শাল্লা থানা সদরের পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামে অবস্থানকালে জানতে পারে যে, মাকালকান্দি গ্রামে পাকবাহিনী হামলা করে অসংখ্য লোককে হত্যাসহ নারীদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছে। জগৎজ্যোতি দাস, বীর বিক্রম- তখন ৫নং সেক্টরের অধীন একটি নৌকমান্ড ইউনিটের অধিনায়ক। তিনি এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেন। রাতেই সংবাদ আসে পরদিন হানাদাররা পাহাড়পুর গ্রামে অপারেশন চালাবে। তাৎক্ষণিকভাবে জগৎজ্যোতি পাহাড়পুর গ্রামে শত্রুদের মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ১৭ই আগস্ট সেখান থেকে তিনটি নৌকায় করে দাসপার্টির ১২ জন দুঃসাহসী যোদ্ধা রওনা করেন পাহাড়পুর গ্রামের উদ্দেশে। গ্রামের পাশে নির্জন একটি স্থানে নৌকাগুলো বেঁধে শত্রুর গতিবিধি লক্ষ করার জন্য জগৎজ্যোতি নিজেই ফেরিওয়ালার বেশে বের হন। ঘণ্টা দু-এক অপেক্ষার পর শত্রুপক্ষের উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। প্রায় ৫০ জন পাকসেনা ও শতাধিক রাজাকার নৌকাযোগে তখন পাহাড়পুরে এসে নামে। তারা এসেই রাজাকারদের নির্দেশ দেয় গ্রামের সব লোককে একত্র করার জন্য। রাজাকাররা
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে গ্রামের মানুষদের জড়ো করার পর পাকবাহিনী তাদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার মানসে নারীদের আলাদা করার জন্য পুনরায় নির্দেশ দেয়। নিজেদের সোর্স মারফত এ সংবাদ অবগত হয়ে জগৎজ্যোতি সহযোদ্ধাদের নিয়ে পরামর্শ করে সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, যেহেতু ওরা সংখ্যায় অনেক বেশি সেহেতু অত্যন্ত কৌশলে এবং সতর্কতার সঙ্গে তাদের ওপর হামলা চালাতে হবে। এজন্য স্থির হয়, পাকসেনারা যখন তাদের অস্ত্র রেখে নারীদের সম্ভ্রমহানির চেষ্টা চালাবে তখনই আক্রমণ করা হবে।
ওঁৎ পেতে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা এক সময় লক্ষ করেন যে, পাকসেনারা তাদের অস্ত্রশস্ত্র একটি নৌকায় রেখে সে নৌকা পাহাড়ার জন্য কয়েকজন রাজাকার নিয়োগ করে নারীদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যখন নরপশুরা তাদের বিকৃত বাসনা চরিতার্থ করতে শুরু করে ঠিক সে সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্রপূর্ণ নৌকায় আক্রমণ চালান। আকস্মিক এ হামলায় নৌকার রাজাকাররা গুলিবিদ্ধ হয়ে পানিতে পড়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত নৌকার সব অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে নৌকাগুলো নদীতে ডুবিয়ে দেন। ওদিকে গুলির শব্দ শুনে হায়েনাদের অস্ত্রধারী সীমিত কয়েকজন পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করলেও শক্ত প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হয়নি। প্রায় দুঘণ্টা লড়াই করে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এ-যুদ্ধে শত্রুসেনাদের বহু সদস্য নিহত হয়। ক্রসফায়ারে পড়ে অনেক নিরীহ গ্রামবাসীও হতাহত হন। যুদ্ধ শেষে উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দিরাই ক্যাম্পের দিকে চলে যান। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!