You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশিষ্ট ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ পিটার শোর

পিটার শোর (১৯২৪-২০০১) বিশিষ্ট ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ, লেবার পার্টির প্রভাবশালী নেতা, ৩৪ বছর যাবৎ (১৯৬৪-১৯৯৭) পার্লামেন্ট সদস্য, হ্যারল্ড উইলসন সরকারের সাবেক মন্ত্রী (১৯৬৭-১৯৭০), বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে এর বলিষ্ঠ সমর্থক, ব্রিটিশ জনমত গঠন এবং পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সঠিক অবস্থান গ্রহণ ও বাংলাদেশ প্রশ্নে সক্রিয় ভূমিকা পালনে এডওয়ার্ড হীথের রক্ষণশীল সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিকারীদের অন্যতম, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ Friends of Liberation War সম্মাননায় ভূষিত। ১৯২৪ সালের ২০শে মে ইংল্যান্ডের গ্রেট ইয়ারমাউথে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্ণ নাম পিটার ডেভিড শোর। লন্ডনের লিভারপুল থেকে হাইস্কুল পর্যায়ের শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ইতিহাসে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটিশ রয়েল এয়ারফোর্সে যোগ দেন এবং যুদ্ধের অধিকাংশ সময় ভারতে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৫৮ সাল থেকে তিনি পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। ১৯৬৪ সালে তিনি সর্বপ্রথম পূর্ব লন্ডনের স্টেপনি নির্বাচনী এলাকা থেকে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। লেবার পার্টির নেতা ও একাধিকবার ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসনের সঙ্গে তিনি খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। হ্যারল্ড উইলসনের কেবিনেটে মন্ত্রী হওয়া ছাড়াও তিনি লেবার পার্টি ও পার্লামেন্টে বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন। পিটার শোর পূর্ব লন্ডনের নির্বাচনী এলাকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী বাঙালি ছিল। তাদের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি তাঁর মনে এক ধরনের বিশেষ মমত্ববোধ সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশের পক্ষে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের যেসব প্রভাবশালী সদস্যদের নিয়ে শুরু থেকেই একটি শক্তিশালী গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছিল, পিটার শোর ছিলেন তাঁদের অন্যতম। গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে তিনি বাঙালিদের ন্যায্য সংগ্রামের পক্ষে ও পাকিস্তানি সামরিক জান্তার গণহত্যাসহ বর্বরোচিত আচরণের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সার্বক্ষণিক তৎপরতা চালিয়ে যেতে থাকেন। এর মধ্যে ছিল সভা-সমাবেশে বক্তব্য দান, পত্রিকায় সাক্ষাৎকার প্রদান ও নিবন্ধ লেখা, পার্লামেন্টের অভ্যন্তরে একের পর এক প্রশ্ন তুলে সরকারকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা, পাকিস্তান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে সরকারি অবস্থান স্পষ্টীকরণ ইত্যাদি।
পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা শুরুর পরপর পিটার শোর সে বিষয়ে ব্রিটিশ জনগণের তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণার কথা পাকিস্তানি সামারিক সরকারকে অবহিত করার জন্য ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব স্যার এলেক ডগলাস হিউমকে অনুরোধ করেন। বাংলাদেশের গণহত্যার প্রতিবাদে ২৫শে মার্চ থেকেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের রাস্তার ফুটপাতে যে ২ জন বাঙালি ছাত্র (শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও আফরোজ আফগান চৌধুরী) অনশন শুরু করেন, কয়েকদিন পর পিটার শোর তাঁদের অনশন ভঙ্গ করান। ৪ঠা এপ্রিল লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড টাউন হলে অনুরূপ আরেকটি প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হলে সেখানে অন্যান্যের মধ্যে পিটার শোর পাকিস্তানের তীব্র সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, ‘পূর্ব বাংলার হত্যাকাণ্ডকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে মেনে নেয়া যায় না।’ মে মাসে পূর্ব বাংলায় যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানিয়ে ব্রুস ডগলাস-ম্যান- উত্থাপিত ৩০০ পার্লামেন্ট সদস্যের স্বাক্ষরযুক্ত প্রস্তাব ও জুন মাসে স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানে ২১৬ জন ব্রিটিশ এমপি-র পার্লামেন্টে প্রস্তাব পেশ উভয়টির পিটার শোর অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। প্রথম প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন যে, ৭০-এর নির্বাচনের ফলাফল বাঞ্চাল করে পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গণহত্যা-নির্যাতন ও নির্বাচনে মেজরিটি পার্টির নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- (যাঁকে স্বয়ং ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করেন)-এর গ্রেপ্তার ‘হচ্ছে অপরাধ এবং সে অপরাধ হচ্ছে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে’ (বঙ্গানুবাদ)। তিনি পাকিস্তানের জন্য সর্বপ্রকার সাহায্য বন্ধ এবং এ ব্যাপারে একযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বৃহৎ শক্তির সঙ্গে মিলে সক্রিয় হতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এও বলেন যে, ১ হাজার মাইলেরও অধিক দূরত্বে ভারতীয় ভূখণ্ড দ্বারা বিভক্ত পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাই ছিল একটি অদ্ভূত ঘটনা। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার নিরস্ত্র মানুষের ওপর আক্রমণ, হত্যা ও ধ্বংস ইত্যাদির পর দুই অংশের আর জোড়া লাগার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটিই বাস্তব সত্য এবং তা মেনে নিয়ে পূর্ব বাংলার মানুষের গণ-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সমস্যার সমাধানই একমাত্র পথ। জুন মাসে প্রথম দিকে ভারতের সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ বিশ্ব জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সফর শেষে লন্ডনে এলে ৪ঠা জুন একশন বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে পল কনেট ও মেরিয়েটা প্রকোপ- লন্ডনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। জয়প্রকাশ নারায়ণ বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতির আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। একই অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে পিটার শোরও বক্তব্য রাখেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। ১৯শে জুন হাইড পার্কে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সভায় পিটার শোর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা পালনে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন যে, পূর্ব বাংলায় বেসামরিক ও প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানকে সর্বপ্রকার সাহায্য দেয়া বন্ধ রাখা হোক। জুন মাসে পাকিস্তানের কট্টর সমর্থক ব্রিটিশ কনজার্ভেটিভ পার্টির এমপি ড্যামি জীল নাইট-এর নেতৃত্বে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সফর শেষে ব্রিটিশ মিডিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার পক্ষে সাপাই গেয়ে বিবিসি ও অন্যান্য মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার প্রদান করলে প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। পিটার শোর নির্বাচনী এলাকার প্রবীণ সমাজকর্মী আবদুল মালেক ও অন্যান্যরা বিষয়টি তাঁর দৃষ্টিতে আনলে তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এধরনের অপপ্রচার বন্ধের দাবি জানান। জুলাই মাসে বাংলাদেশে ত্রাণ তৎপরতা পরিচালনার নামে পাকিস্তান সরকার ব্রিটিশ সরকারের কাছে কয়েকটি মোটর চালিত নৌযান সরবরাহের অনুরোধ জানায় এবং ব্রিটিশ সরকার নীতিগতভাবে তাতে সম্মতি জ্ঞাপনও করে। প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার উদ্দেশ্য ছিল নদীমাতৃক বাংলাদেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নৌপথে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অপারেশন পরিচালনা। এটি জানার পর পিটার শোর- সহ কয়েকজন এমপি ব্রিটিশ সরকারের উপর্যুক্ত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে পার্লামেন্টে প্রস্তাব পেশ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার মোটরযান সরবরাহের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে। ১লা আগস্ট পল কনেটের নেতৃত্বাধীন Action Bangladesh-এর উদ্যোগে বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীনতার স্বীকৃতিদানের দাবিতে ট্রাফালগার স্কোয়ারে স্মরণকালের যে বৃহত্তম জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে ঐ দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে অন্যান্যের মধ্যে পিটার শোর বক্তব্য রাখেন। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সামরিক আদালতে কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গোপন বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করলে ২রা আগস্ট বেশকিছু ব্রিটিশ এমপি এর প্রতিবাদ এবং বঙ্গবন্ধুর অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব আনেন। পিটার শোর ছিলেন এ প্রস্তাবের অন্যতম উদ্যোক্তা। ১১ই আগস্ট সামরিক আদালতে পাকিস্তানে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বিচারকার্য শুরু হলে একই দিন লন্ডনের হাইড পার্কে এক বিরাট জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অন্যান্যের মধ্যে পিটার শোর বক্তব্য রাখেন। সভা শেষে পিটার শোর, জন স্টোনহাউজ, বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বিশাল শোভাযাত্রা সহকারে জনতা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট ভবনে বঙ্গবন্ধুর বিচার বন্ধ ও তাঁর আশু মুক্তির দাবিতে স্মারকলিপি পেশ করেন। ৩০শে অক্টোবর লন্ডনের হেনরী থর্নটন স্কুলে বাংলাদেশ স্টুডেন্ট একশন কমিটির যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে অন্যান্যের মধ্যে পিটার শোর যোগদান করেন এবং বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ প্রশ্নে মুক্তিবাহিনীর পাশাপাশি ৩রা ডিসেম্বর থেকে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দ্রুত চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। একের পর এক শহর পাকিস্তানি হানাদারদের দখলমুক্ত হতে থাকে। এরূপ অবস্থায় ১২ই ডিসেম্বর হাইড পার্কে প্রায় ১৫ হাজার প্রবাসী বাঙালিদের এক জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তাতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের আহ্বান জানিয়ে অন্যান্যদের মধ্যে পিটার শোর বক্তব্য রাখেন। একই দিন সন্ধ্যাবেলা লন্ডনের মহাত্মা গান্ধী হলে ইন্ডিয়া লীগ আয়োজিত এক সভায় পিটার শোর তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের জন্য ইংল্যান্ডের প্রস্তুতি থাকা উচিত।’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২৭শে মার্চ ২০১২ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পিটার শোর-কে Friends of Liberation War সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর ১৯৮২ সালে লন্ডনে সর্ব ইউরোপীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হলে শন ম্যাকব্রাইড- ও টমাস উইলিয়ামস কিউসি-র পর পিটার শোর এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ব্রিটেনের রাজনীতিতে অসাধারণ ভূমিকা পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ রানি কর্তৃক তাঁকে Life Peer বা লর্ড করা হয়। ২০০১ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ও বাঙালির অকৃত্রিম বন্ধু পিটার শোর জীবনাবসান ঘটে মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। তাঁর স্ত্রীর নাম এলিজাবেথ ক্যাথেরিন। এ দম্পতি ২ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক-জননী। [হারুন-অর-রশিদ]
তথ্যসূত্র: আবদুল মতিন, স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রবাসী বাঙালী, লন্ডন, র্যাডিকেল এশিয়া পাবলিকেশন্স ১৯৮৯; আবু সাঈদ চৌধুরী, প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি, ঢাকা, ইউপিএল ১৯৯০; শেখ আবদুল মান্নান, মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাজ্যের বাঙালীর অবদান, ঢাকা, জ্যোৎস্না পাবলিশার্স, ১৯৯৮; Harun-or-Rashid, “British perspectives, pressures and publicity regarding Bangladesh, 1971″, Contemporary South Asia 1995, Oxford, 4(2), 139-149; https://en.wikipedia.org/wiki/ Peter_Shore; 14 May 1971, Hansard

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!