পার ফরিদপুর যুদ্ধ (ফরিদপুর, পাবনা)
পার ফরিদপুর যুদ্ধ (ফরিদপুর, পাবনা) সংঘটিত হয় ১১ই ডিসেম্বর। এতে পাকসেনারা পরাজিত হয়ে পালিয়ে যায়। তবে তাদের হাতে দুজন মুক্তিযোদ্ধা ধড়া পড়েন। পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার বড়াল নদীর অপর পাড়ের গ্রাম পার ফরিদপুর। ১১ই ডিসেম্বর এ গ্রামের বিলের কাছে পাকসেনা, রাজাকার এবং আলবদর বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের আগে ১০ই ডিসেম্বর নারায়ণপুর গ্রামের আলাউদ্দিন সরকারের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা গোপন বৈঠক করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঐ রাতেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পার ফরিদপুর গ্রামের হায়দার খাঁর বাড়িতে তাঁরা আশ্রয় নেন। সেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধারা কে কোথায় কীভাবে ফরিদপুর থানা আক্রমণের জন্য এগুবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পার ফরিদপুর গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ১১ই ডিসেম্বর অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা ফরিদপুর থানার দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের অপর একটি গ্রুপ ফরিদপুর থানা আক্রমণ করে। তাঁদের একটি গ্রুপ পার্শ্ববর্তী কাশিপুর গ্রামে এবং অপর একটি গ্রুপ চিকনাই ও বড়াল নদীর মিলিত স্থানে অবস্থান করছিলেন। স্থানীয় রাজাকাররা পার ফরিদপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের কথা পাকসেনাদের জানিয়ে দেয়। আলবদর বাহিনীর কমান্ডার সোলেমান কসাই পাকবাহিনীকে পথ দেখিয়ে এ গ্রামে নিয়ে আসে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিভ্রান্ত করার জন্য তারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে এগুতে থাকে। স্লোগান শুনে মুক্তিযোদ্ধারা মনে করেছিলেন উল্লাপাড়ার লতিফ মির্জার পলাশডাঙা বাহিনী তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসছে। কিন্তু পাকসেনাদের অতর্কিত আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন এবং হানাদারদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু অতর্কিত আক্রমণের কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ বিলের দিকে চলে যায়। বিলের ঘাট থেকেই পাকবাহিনীর হাতে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ মাস্টার (ফরিদপুর) এবং শামসুল ইসলাম (উল্লাপাড়া) ধরা পড়েন। হানাদাররা হাত-পা বেঁধে তাদের ২ জনকে ফরিদপুর থানা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা ফরিদপুর থানা আক্রমণ করে চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকলে পালিয়ে যাবার সময় পাকসেনারা শামসুল ইসলামকে পাবনা সেনা ক্যাম্পে এবং আব্দুল লতিফ মাস্টারকে উল্লাপাড়া সেনা ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে।
পার ফরিদপুর যুদ্ধে যে-সকল মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, (মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নানের ভাই), পাবনার মুক্তিযোদ্ধা মনসুর, খ ম কামরুজ্জামান মাজেদ (ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র) হাসেম, কামাল প্রমুখ। [মো. আশরাফ আলী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড