You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.18 | পারুলিয়া গণহত্যা (দেবহাটা, সাতক্ষীরা) - সংগ্রামের নোটবুক

পারুলিয়া গণহত্যা (দেবহাটা, সাতক্ষীরা)

পারুলিয়া গণহত্যা (দেবহাটা, সাতক্ষীরা) সংঘটিত হয় ১৮ই মে। এতে শতাধিক লোক শহীদ হয়।
দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ও সখিপুর গ্রামের মধ্য দিয়ে সাপমারা খাল চলে গেছে। খালটি শাঁকরা নামক স্থানে ইছামতি নদীর সঙ্গে মিশেছে। ইছামতি নদী ঘেঁষে ভারতে প্রবেশ করেছে। তাই এ খাল দিয়ে খুব সহজেই ভারতে প্রবেশ করা যেত। এপথে সাতক্ষীরার আশাশুনি, বড়দল, ব্যাংদহ, তালা; খুলনার দাকোপ, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, শাহপুর এবং বাগেরহাটের রামপালসহ পিরোজপুর মহকুমার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শরণার্থীরা (বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ) নৌকাযোগে ভারতে যাওয়ার জন্য মরিচ্চাপ ও খোলপেটুয়া হয়ে সাপমারা খালে ঢোকে। জীবন বাঁচাতে পলায়নপর এসব মানুষকে নিয়ে নৌকার দীর্ঘ সারি চলতে-চলতে এক সময় পারুলিয়া কাঠের পুলের নিচে আসে। সময়টা এপ্রিল-মে মাসের কোনো একদিন। ঐ সময় নিয়মিত টহলের অংশ হিসেবে সাতক্ষীরা থেকে পাকসেনাদের ৩-৪টি গাড়ি পারুলিয়ায় আসে। তারা পুলের নিচে লোকভর্তি সারি-সারি নৌকা দেখতে পেয়ে গাড়ি থেকে নেমে মেশিনগান চালায়। অগণিত মানুষের আর্তচিৎকারে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। খালের পানি নিরীহ মানুষের রক্তে লাল হয়ে যায়। নৌকার মধ্যে কেবল কান্নার আওয়াজ আর ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার। একজন পাকসেনা দৌড়ে পুলের নিচে গিয়ে একখানা নৌকার পাটাতন সরিয়ে তার মধ্যে ৪- ৫ জন ব্যক্তিকে দেখতে পায়। সে তাদের নৌকা থেকে নামিয়ে খালপাড়ে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এদিন এখানে শতাধিক শরণার্থীর মৃত্যু হয়। পাকসেনারা চলে গেলে শরণার্থীদের মধ্যে যারা বেঁচে ছিলেন তারা তাদের স্বজনদের লাশ নিয়ে ভারত অভিমুখে রওনা হয়। কয়েকটি লাশ কিছুদিন ধরে খালের মধ্যে ও চরে পড়ে ছিল। [সিরাজুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড