বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাংস্কৃতিক কর্মী পার্থ ঘোষ
পার্থ ঘোষ (জন্ম ১৯৪১) ভারতের সাংস্কৃতিক কর্মী। তিনি ১৯৪১ সালের ৩১শে ডিসেম্বর অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক (১৯৬১) ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। অল্প বয়স থেকেই কবিতার প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল এবং কলেজে তিনি কবিতা আবৃত্তি করতেন। হাওড়ার একটি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি আকাশবাণী কলকাতায় যোগদান করেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই তাঁকে শিশুবিষয়ক কিংবদন্তি অনুষ্ঠান গল্প দাদুর আসর পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করা হয়, যা সবার কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তাছাড়াও আকাশবাণী কলকাতার বহু অনুষ্ঠানের জনপ্রিয় উপস্থাপক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। কণ্ঠমাধুর্য ও উপস্থাপন দক্ষতার কারণে ধীরে- ধীরে তাঁর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। আকাশবাণীতে কাজ করার পাশাপাশি তিনি দেশ-বিদেশের বহু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করতেন। ২০১২ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি ‘উপমা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন, যেখানে তিনি বাগ্মিতা ও বেতার ঘোষণার শিল্প বিষয়ে শিক্ষা দান করেন
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে আকাশবাণী কলকাতার ঘোষক ও পাঠক পার্থ ঘোষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার বিবরণ তুলে ধরে নিয়মিত প্রবন্ধ লিখে তা পাঠ করতেন। চিঠিপত্র অনুষ্ঠানের মাধ্যমেও তিনি বাংলাদেশের গণহত্যার বিভিন্ন তথ্য ও সংবাদ বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিতেন। বিভিন্ন সংবাদপত্রে তিনি গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করতেন। এছাড়া সভা-সমিতির আয়োজন ও তাতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও অর্থ সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। বিভিন্ন শরণার্থী শিবির-এ গিয়ে সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তিনি বেতার অনুষ্ঠানে প্রচার করতেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১লা অক্টোবর ২০১৩ পার্থ ঘোষ-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড