You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে পার্বতীপুর উপজেলা (দিনাজপুর)

পার্বতীপুর উপজেলা (দিনাজপুর) রেল শহর হিসেবে পরিচিত। দেশের অন্যতম রেলওয়ে জংশন এখানে অবস্থিত। পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ভারত থেকে আগত বিহারিদের পার্বতীপুর ও দিনাজপুর সদর উপজেলায় সরকারিভাবে পুনর্বাসিত করা হয়। থানা সদরে বাঙালিদের চেয়ে বিহারিদের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। পাকিস্তানি শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় এখানে অবাঙালি বিহারিদের চেয়ারম্যান করে টাউন কমিটি করা হয়, যা পৌর পরিষদের ন্যায় ভূমিকা পালন করত।
পার্বতীপুরে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি রচনার ক্ষেত্রে ১৯৬৮ সালের দুটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রথমটি ঘটে ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস পালনকে কেন্দ্র করে। ঐদিন জ্ঞানাংকুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। ঐ মিছিলের স্লোগান ছিল ‘শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দিব না, ভাষা সৈনিকদের রক্ত বৃথা যেতে দিব না, মহান একুশ অমর হোক অমর হোক, রক্তঝরা একুশ অমর হোক অমর হোক’ ইত্যাদি। মিছিলটি পুরাতন বাজার এলাকায় এলে হঠাৎ বিহারিদের নেতা বাচ্চা খান, মো. কামারুজ্জামান, ইকবাল কন্ট্রাক্টর, এম এ শোয়েব কন্ট্রাক্টর, জাকির খান, সাত্তার কসাই, নইম গুন্ডা, বদরু চেয়ারম্যান প্রমুখের নেতৃত্বে বিহারিরা মিছিলে হামলা চালায় এবং অনেককে ছুরিকাহত করে। এর জের ধরে এখানে বাঙালি-বিহারি দাঙ্গা বেঁধে যায়। এই দাঙ্গা চলে বেশ কদিন। এ ঘটনা বাঙালিদের মধ্যে বিহারি ও পাকিস্তানিদের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষোভ ও ঘৃণার সৃষ্টি করে।
স্কুল ছাত্রদের ওপর হামলার জের ধরে সৃষ্ট দাঙ্গা পরিস্থিতি যখন শান্ত হয়ে আসে, তখন আইয়ুব খানের শাসনের ‘দশ বছর পূর্তি’ (১৯৬৮ সালের ২৭শে অক্টোবর) উদযাপনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুনরায় বিহারিরা সেখানে দাঙ্গা বাঁধায়। তারা তখন পার্বতীপুর কলেজেও অগ্নিসংযোগ করে। এ- সময় বিক্ষুব্ধ বাঙালিরা বিহারিদের জিন্নাহ স্কুলে উড়তে থাকা পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এভাবেই বাঙালি- বিহারি দ্বন্দ্বে পার্বতীপুরে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি তৈরি হয়। বিহারি অধ্যুষিত পার্বতীপুর শহর ও জংশনের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে থাকা সত্ত্বেও অসহযোগ আন্দোলন- সেখানে শতভাগ সফল ছিল। রেল যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ ছিল। সরকারি অফিসেও কাজ-কর্ম হতো না। পার্বতীপুর উপজেলা চলতে থাকে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের নির্দেশনা অনুযায়ী।
১৯৭০ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান – পার্বতীপুর এসে ইপিআর মাঠে আয়োজিত বিশাল জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের কথা তুলে ধরে জনগণকে অধিকার প্রতিষ্ঠায় নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। নির্বাচনে পার্বতীপুর এলাকা (দিনাজপুর-৮) থেকে প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. খতিবুর রহমান বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। পার্বতীপুরের আরেক নেতা ভবানীপুরের সরদার মোশাররফ হোসেন দিনাজপুর ৯ আসন থেকে এমপিএ নির্বাচিত হন। নির্বাচনের ফলাফল এখানকার অবাঙালি বিহারিদের হতাশ করে। তারা নানা ষড়যন্ত্রের ছক কষতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ-এর পর বিহারিরা হিংস্র হয়ে ওঠে। এর পরপর সান্তাহার ও সৈয়দপুর থেকে বিপুল সংখ্যক বিহারি পাকিস্তানি পতাকা ও ব্যানার সহকারে পার্বতীপুরে আসে এবং রেলজংশনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে পার্বতীপুরকে ‘নিউ বিহার’ এবং সৈয়দপুরকে ‘মুজাহিদাবাদ’ নামে ঘোষণা করে। এভাবে তারা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক নস্যাৎ করতে উত্তেজনা ছড়ায়।
আওয়ামী লীগের সভাপতি খতিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে সর্দার মোশাররফ হোসেন (ভবানীপুর), আব্দুল আউয়াল (বিত্তিপাড়া), জহুরুল হক (নয়াপাড়া), নিজামউদ্দিন আহমেদ (চন্ডীপুর), মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, কুদ্দুস বিশ্বাস, ডা. মো. খলিল, শামসুদ্দিন আহমেদ (পুরাতন বাজার), আব্দুল ওহাব সরকার, ডা. মফিজউদ্দিন (নতুন বাজার), আব্দুল খালেক, জসিমউদ্দিন মাস্টার, আজিজার রহমান, হাজী মহিউদ্দিন, মো. তফিরউদ্দিন (কাজীপাড়া), ইউসুফ আলী (কালাইহাটি), ডা. আবু এহিয়া সরকার, ডা. আলতাফ হোসেন, এ এস এম ইউনুস হাক্কানী, এম এ শাফী, মো. মহিরউদ্দিন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ পার্বতীপুরে সকল আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ৭ই মার্চের পর পার্বতীপুর এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য শামসুল ইসলাম ও মোফাজ্জল হোসেন এবং মোজাহিদ বাহিনীর আব্দুল করিমের নেতৃত্বে এখানকার ছাত্র-যুবকদের ট্রেনিং প্রদান করা হয়। পাকসেনাদের সঙ্গে প্রতিরোধযুদ্ধে পিছু হটে অনেক মুক্তিযোদ্ধা উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ভারত গমন করেন। সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে তারা চান্দোয়া আমবাগান, হাবড়া আমবাগান, দুবাই গ্রাম, বাসুপাড়া হাইস্কুল, পাটিকাঘাট আনন্দবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প স্থাপন করেন। বিত্তিপাড়ার আনসার বাহিনীর ট্রেনিংপ্রাপ্ত আব্দুল জব্বার (ধোপাকল), শামসুল হুদা (সাঁকোয়াপাড়া)সহ বিপুল সংখ্যক যুবক মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় তৎপর ছিলেন।
পার্বতীপুর উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধকালে ফিল্ড কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন মো. আবু বকর সিদ্দিক হোসেন, মো. আলাউদ্দিন, মো. সাইদুর রহমান, মো. আফজাল হোসেন, মো. আবু মুসা সরদার, ইঞ্জিনিয়ার মো. আবু এহিয়া সরকার, মো. আমজাদ হোসেন, মো. আহাম্মদ আলী মংগুলু, মো. মজিবুর রহমান, মো. সাইদুর রহমান, মো. ইব্রাহীম, সাখাওয়াত হোসেন, মো. তমেজউদ্দিন, মো. আনোয়ারুল হক প্রমুখ।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পার্বতীপুরবাসী প্রাথমিকভাবে ধারালো অস্ত্র, লাঠি-সোঁটা, বাঙালি ইপিআরদের স্বল্প সংখ্যক অস্ত্র ও আদিবাসীদের তীর-ধনুক দ্বারা খোলাহাটি, ইপিআর ক্যাম্প, হাবড়া, বাসুপাড়া, নয়াপাড়া প্রভৃতি এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সৈয়দপুর ও বদরগঞ্জ দিয়ে স্থানীয় বিহারিদের সহযোগিতায় পার্বতীপুরের দিকে পাকহানাদার বাহিনী অগ্রসর হওয়ার খবর মানুষের কানে আসতেই তারা বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার ওপরে গাছ ফেলে, মেঠো রাস্তায় খানা-খন্দক বানিয়ে, কোথাও ইট, পাথরসহ বিভিন্ন ভারী বস্তু ফেলে তাদের প্রতিরোধের চেষ্টা করে। খোলাহাটি ও বদরগঞ্জে প্রতিরোধ করতে গিয়ে বহু সংখ্যক বাঙালি পাকসেনাদের গুলিতে শহীদ হন। ব্যাপক প্রতিরোধ সত্ত্বেও বিহারিদের সহায়তায় সব বাধা অপসারণ করে হানাদাররা অগ্রসর হতে সমর্থ হয়।
পাকবাহিনী এপ্রিলের প্রথমদিকে পার্বতীপুর শহর দখলে নিয়ে তিলাই নদীর দিকে অগ্রসর হয়। তিলাই নদীর তীরে নয়াপাড়া নামক স্থানে শহর থেকে পালিয়ে আসা কয়েকজন ইপিআর সদস্য অবস্থান নেন। অপরদিকে চণ্ডীপুর এলাকার দুই ভাই শরীফ চৌধুরী ও জব্বার চৌধুরীর দুটি বন্দুক নিয়ে জসীমউদ্দিন ও ইব্রাহিম খলিল মেম্বরসহ চণ্ডীপুরের প্রায় ৪- ৫শ লোক রাইফেল, তীর, ধনুক ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র সহকারে তিলাই নদীর পশ্চিম পাড়ের নয়াপাড়ায় পজিশন নেয়। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় চণ্ডীপুর ইউনিয়নের বারকোনার শতাধিক সাঁওতাল। এলাকার মেম্বর মোফাজ্জল হোসেনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সাঁওতাল নেতা সাবা সরেন, হারু সরেন, ভাইয়া বেসরা এবং মংলা সরেনের নেতৃত্বে বয়লা সরেন, সরকার সরেন, সুন্দর সরেন, বাবুই সরেন, রিন্টু বেসরা, বাপই মুর্মু, ধুমা মার্ডি, রাজা হাসদা, চান্দু টুডু, ফজল মুর্মু, মাঝি টুডু, জ্যাঠা টুডু, বয়লা টুডু প্রমুখ প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেয়। দুটি ট্রাকে করে পাকবাহিনী পার্বতীপুর শহর থেকে নদীর পূর্ব প্রান্ত দিয়ে পশ্চিমে আসার চেষ্টা করলে বাঙালিরা তাদের প্রতিরোধ করে। পাকবাহিনীর তীব্র গুলিবর্ষণের মুখে টিকতে না পেরে পশ্চিম প্রান্তে পজিশন নেয়া বাঙালি ও আদিবাসীরা পিছু হটে। তবে সেদিনের মতো পাকসেনাদের অগ্রাভিযান সেখানে থেমে যায়।
পরদিন হানাদারদের অভিযান আবারো শুরু হয়। বাঙালি যোদ্ধারাও প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। যুদ্ধের শুরুতে সৈয়দপুর থেকে বিপুল সংখ্যক বাঙালি ইপিআর হানাদারদের মোকাবেলা করতে পার্বতীপুর শহর হয়ে দক্ষিণপাড়া, হাবড়া, বিত্তিপাড়া, হলদীবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। হাবড়ায় সংঘর্ষ চলাকালে ১৭ জন ইপিআর সদস্য পাকসেনাদের হাতে শহীদ হন। বিত্তিপাড়ায় অবস্থানকালে ১লা এপ্রিল ভোররাতে ইপিআর বাহিনী মর্টার বসিয়ে পার্বতীপুর শহরের দিকে শেল নিক্ষেপ করে।
অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার নামে পাকসেনা কর্মকর্তারা সৈয়দপুর সেনানীবাস থেকে বাঙালি অফিসার সুবেদার রহমতুল্লাহ ও অবাঙালি মেজর শাফায়েত হোসেনকে এক প্লাটুন সৈনিকসহ পার্বতীপুরে পাঠায়। সুবেদার রহমতুল্লাহ ১লা এপ্রিল মেজর শাফায়েতকে হত্যা করেন এবং সমস্ত জোয়ান নিয়ে ফুলবাড়িতে এসে অবস্থান নেন। তিনি ৭ই এপ্রিল ফুলবাড়ি থেকে শত্রুদের মোকাবেলা করতে আবারো পার্বতীপুরে এসে অবস্থান নেন। অপরদিকে মেজর আনোয়ার হোসেন তার কোম্পানি নিয়ে ৬ই এপ্রিলের মধ্যে খোলাহাটিতে অবস্থান গ্রহণ করেন। পরে বদরগঞ্জে এগিয়ে ডিফেন্স নেন। কিন্তু হানাদার বাহিনী সেখানে তাদের ওপর হামলা চালায়। মেজর আনোয়ার গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ফুলবাড়ি যান, তাঁর কোম্পানি পিছিয়ে খোলাহাটিতে অবস্থান নেয়। পাকবাহিনী খোলাহাটিতেও হামলা চালায়। হামলায় টিকতে না পেরে প্রতিরোধ যোদ্ধারা ফুলবাড়িতে ডিফেন্স নেন।
এদিকে সুবেদার আরব আলীর নেতৃত্বে এক প্লাটুন সৈনিক ফুলবাড়ি হাসপাতালের সামনে পাকবাহিনীর গতিরোধ করলে সেখানে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। পাকসেনারা গাড়ি ফেলে মাঠের মধ্য দিয়ে পার্বতীপুরের দিকে পালিয়ে যায়। পার্বতীপুরে বিহারিরা নিকটবর্তী বাঙালি গ্রামগুলোতে ব্যাপকহারে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও লোকজনকে নির্মমভাবে হত্যা করছে এমন খবর পেয়ে সুবেদার আরব আলী তাঁর প্লাটুন নিয়ে ৭ই এপ্রিল পার্বতীপুরের দিকে অগ্রসর হন। বিহারিদের অত্যাচার চরম পর্যায়ে পৌছলে তিনি ১০ই এপ্রিল কয়েক হাজার জনতাকে সঙ্গে নিয়ে বিহারিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। বাঙালি সৈনিকদের তীব্র গোলাগুলির মুখে টিকতে না পেরে বিহারিরা সৈয়দপুরের দিকে পালাতে থাকে। পালানোর সময় বহু সংখ্যক বিহারি বিভিন্ন স্থানে জনতার হাতে নিহত হয়।
১৬ই এপ্রিল ভবানীপুরের হাবড়া গ্রামের প্রতিরোধযুদ্ধে ৩ জন অনসারসহ ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মো. হোসেন নামে একজন সৈনিকের মাথায় ট্যাংকের গোলা এসে পড়লে তাঁর মাথা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এ অবস্থায় আরব আলীর নেতৃত্বাধীন সৈনিকরা হানাদার বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করতে- করতে ফুলবাড়ির দিকে পিছিয়ে গিয়ে ভারতে চলে যান।
পাকবাহিনী মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই পার্বতীপুরে অনুপ্রবেশ করলেও ৭ই এপ্রিল তারা পার্বতীপুর দখল করে। তাদের একটি গ্রুপ রংপুর থেকে বদরগঞ্জ-খোলাহাটি হয়ে এবং আরেকটি গ্রুপ সৈয়দপুর সেনা ক্যাম্প থেকে পার্বতীপুরে আসে। অনুপ্রবেশকালে পাকবাহিনী ও বিহারিদের হাতে অনেকে গণহত্যা ও বর্বরোচিত হত্যার শিকার হয়। শহর দখলের পর তারা থানা পরিষদ ভবন এবং ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ভবনে ক্যাম্প স্থাপন করে। এরপর গ্রামে-গ্রামে গিয়ে অত্যাচার, নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনা ঘটায় এবং পর্যায়ক্রমে ইপিআর ক্যাম্প, জিন্নাহ মাঠ, আমেরিকান ক্যাম্প, পার্বতীপুর কলেজ, জ্ঞানাংকুর হাইস্কুল, ভবানীপুর ও আমবাড়িতে ক্যাম্প স্থাপন করে।
পাকবাহিনীর দোসর বিহারিদের নেতৃত্বে ছিল নতুন বাজারের মো. কামারুজ্জামান (বেসামরিক প্রশাসন ও শহর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য হানাদার বাহিনীর মেজর কমর তাকে পার্বতীপুর টাউন এডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ করেছিল), তার বড় ভাই এম এ শোয়েব (শোয়েব কন্ট্রাক্টর হিসেবে অধিক পরিচিত। সামরিক বাহিনীর লোক না হলেও পাকিস্তানি হানাদাররা তাঁকে পার্বতীপুরে মার্শাল ল প্রশাসক নিযুক্ত করেছিল), বাচ্চু খান (বাচ্চা খান নামে অধিক পরিচিত), মতিউর রহমান ও মিসেস খুরশিদ বানু, পুরাতন বাজারের গুলু মেম্বার, ইকবাল কন্ট্রাক্টর, মো. বদরউদ্দিন ওরফে বদরু (রামপুর) চেয়ারম্যান, জাকির খান, আব্দুস সাত্তার কসাই, নইম গুন্ডা প্রমুখ।
মুক্তিযুদ্ধকালে বিহারিদের পাশাপাশি কিছু সংখ্যক বাঙালি রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তৎপরতায় জড়িত ছিল। তাদের মধ্যে ২নং মন্মথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা এমাদউদ্দিন, গোবিন্দপুরের মো. তফুরউদ্দিন, ৩নং রামপুর ইউনিয়নের কাজী নঈমউদ্দিন, ৫নং চণ্ডীপুর ইউনিয়নের হাজী আছিরউদ্দিনের পুত্র মজিবর রহমান, ৬নং মমিনপুর ইউনিয়নের মাহতাবউদ্দিন চৌধুরী, তেরোআনিয়ার মাতা চৌধুরী, তাজনগরের রহিমউদ্দিন মণ্ডল, ভবানীপুরের জবেদ আলী, মো. জহিরউদ্দিন বুদু মিয়া উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে কাজী নঈমউদ্দিন পার্বতীপুর থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান এবং জহিরউদ্দিন বুদু মিয়া রাজাকার বাহিনীর প্রধান ছিল। মাহতাবউদ্দিন চৌধুরীও রাজাকার বাহিনীর একজন কমান্ডার ছিল। এছাড়াও পার্বতীপুর কলেজ এলাকার আব্দুল্লাহ আল কাফী, রাজারামপুরের নুরুল হুদা চৌধুরী, রাজাবাসরের আব্দুস সামাদ ও নুরুল হক, খেয়াখালের আব্দুল কাদের, মমিনপুরের মো. মহিরউদ্দিন, সৈয়দপুরের তমিজউদ্দিন, মন্মথপুরের মতিয়ার রহমান ও মো. শামসুদ্দিন, মণ্ডলপুরের সরফরাজ সোনার, সুখদেবপুরের মোকসেদ আলী, পার্বতীপুরের মোহাম্মদ গফুর, মো. সাব্বির ও আব্দুল ওয়াদুদ, দুর্গাপুরের সেরাজুল ইসলাম, আবু এহিয়া ও মো. আলাউদ্দিন, মোফাজ্জল হক, তহুরা, আব্দুর নওশাদ আলী, আব্দুল হান্নান, আহমেদ আলী মণ্ডল, আফজার আলী প্রমুখ এখানকার উল্লেখযোগ্য রাজাকার ছিল। দুর্গাপুর শান্তি কমিটির দুই প্রধান ছিল খলিলুর রহমান ও আজিজুর রহমান। শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা মুসলিম লীগ- ও জামায়াতে ইসলামী-র সক্রিয় নেতা-কর্মী ছিল। তারা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনকে ধরে এনে নির্যাতন, হত্যা ও পাকসেনাদের হাতে তুলে দেয়ার কাজ করত।
মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে হানাদার পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা পার্বতীপুরে নজীরবিহীন ধ্বংসযজ্ঞ, হত্যা, গণহত্যা, নারীনির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন করেছে। বিহারিরা ৭ই মার্চের পরই একের পর এক হত্যাকাণ্ড চালাতে থাকে। ২৩শে মার্চ তাদের গুলিতে নিহত হয় কালাইঘাটির রইচউদ্দিন, আটরাই গ্রামের দুখু, বেলাইচণ্ডীর মোজাম্মেল হক ও শফিসহ কয়েকজন। এদিন বাঙালিরাও সংঘবদ্ধ হয়ে জাহানাবাদের সিদ্দিক মহল্লায় কয়েকটি বিহারি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিহারিরা ২৪ ও ২৫শে মার্চ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী ইমাম মোল্লাসহ ১১ জনকে, ব্যবসায়ী এম আহমেদের ৪ জন কর্মচারীকে, কাশিয়াতরীর ৪ জন, পার্বতীপুর থানার এএসআই গোলামের পরিবারের সদস্যদের এবং হাবড়া ইউনিয়নের ভবানীপুরের হাকিম চেয়ারম্যানকে ট্রেনের জ্বলন্ত ব্রয়লারে নিক্ষেপ করে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে। ২৮শে মার্চ একইভাবে হত্যা করা হয় আব্দুল লতিফ নামের একজন ছাত্রকে। ২৯শে মার্চ বিহারিরা পাকবাহিনীর সহায়তায় পুরাতন বাজার গণহত্যা চালায়। তারা এ গণহত্যায় পুরাতন বাজারের গোপাল চন্দ্র শীলের পিতা উপেন্দ্র নাথ শীল, বড় ভাই শুভাস চন্দ্র শীল, কাকা হরিপদ শীল ও ললিত চন্দ্র শীল, প্রতিবেশী রাজকুমার মেহতার পিতা, ৪ ভাই ও ৩ বোন, মামি এবং বাড়িতে আসা আত্মীয়সহ ১৪ জনকে একসঙ্গে গুলি করে হত্যার পর সমস্ত লাশ একটি পরিত্যক্ত কুয়ায় ফেলে দেয়।
৭ই এপ্রিল মেজর দুররানী ও ক্যাপ্টেন চীমার নেতৃত্বে পাকবাহিনী পার্বতীপুর দখল করে নিলে বিহারিদের অপতৎপরতা আরো বেড়ে যায়। তারা হলদীবাড়ি, দরগাপাড়া, কালাইঘাটি, মণ্ডলপাড়া, বাসুপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া, সরকারপাড়া, নামাপাড়া, পোড়ারভিটা, জাহানাবাদ, চণ্ডীপুরসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অগ্নিসংযোগ করে। আগুনে বাঙালিদের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছিল জাহানাবাদ থেকে চণ্ডীপুর পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার, যেখানে সমস্ত বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তারা ৮ই এপ্রিল, ২২শে এপ্রিল ও ১৫ই মে ৩ দফায় খোলাহাটিতে বড় ধরনের গণহত্যা সংঘটিত করে। খোলাহাটি গণহত্যায় ৩ শতাধিক মানুষ শহীদ হয়।
৯ই এপ্রিল বিহারি নেতা বাচ্চা খানের ভাতিজা জাকির খানের নেতৃত্বে ৯ জন পাকসেনা ডা. শামসাদ (পিতা ডা. ক্যাপ্টেন আবুল হোসেন, নতুন বাজার)-কে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে ধরে এনে টর্চার সেল শোয়েব ভবনে নির্যাতন করে জীবন্ত অবস্থায় তাঁর দু হাত কেটে ফেলা হয়। পরে তাঁকে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ছয় দফার প্রতীক হিসেবে ছয় টুকরা করে জ্বলন্ত বয়লারে নিক্ষেপ করা হয়। তারা ফকিরবাজার এলাকার রঘুনাথপুর গ্রামের শফিউদ্দিনের পুত্র খায়রুল আনামকে রেলওয়ের ডাকবাংলোয় নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করে। জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে তার মুখমণ্ডল পুড়িয়ে দেয়া হয়।
পাকসেনা ও বিহারিরা ৯ই এপ্রিল বিধাপাড়া ও বসুপাড়ায়, ১১ই এপ্রিল কলকাবাড়ি, ১৩ই এপ্রিল হুগলীপাড়া, ভবানীপুর, ২৪শে এপ্রিল মন্মথপুরে অপারেশন চালিয়ে বহু লোককে হত্যা করে। পাকবাহিনী মে মাসে ৭নং মোমিনপুর ইউনিয়নে খড়িবাড়ি গণহত্যা চালায়। এ গণহত্যায় দুই ভাই ইসমাইল হোসেন ও মহিরউদ্দিন (পিতা ওসমান হোসেন, জাহানাবাদ)সহ বেশ কয়েকজন মানুষ শহীদ হন। হলদীবাড়ি-দোলাপাড়া গণহত্যায় ৫ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়।
পাকসেনা ও বিহারি নেতা বাচ্চা খানের নেতৃত্বে বুড়িদলা বিলপাড় গণহত্যা—য় ২৭ জন গ্রামবাসী শহীদ হন। এ গণহত্যায় আইয়ুব নামের এক ব্যক্তি, তার গর্ভবতী স্ত্রী, মা ও বোন নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। হানাদাররা রামপুর ইউনিয়নের খিয়ারপাড়া, চৈতাপাড়া, চণ্ডীপুরের জাহানাবাদ ও বাজারপাড়ায় গণহত্যা সংঘটিত করে। খিয়ারপাড়া গণহত্যায় ৮-১০ জন গ্রামবাসী, চৈতাপাড়া গণহত্যায় একজন গ্রামবাসী এবং জাহানাবাদ গণহত্যায় অনেক সাধারণ মানুষ শহীদ হন। বাজারপাড়া গণহত্যায় বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ শহীদ হন। রামপুর ইউনিয়নের সাঁকোয়াপড়ায় একদিনে নিরাশা, খতিবর রহমান (পিতা আফাজউদ্দিন) ও মোজাম্মেল হক (পিতা জফারউদ্দিন)সহ ৩ জনকে হত্যা করা হয়। তারা জয়পুর, হরিরামপুর, দেগলাগঞ্জ, আমবাড়ি, ভবানীপুর, খোরাখাইসহ আরো অনেক এলাকায় হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন চালায়। পাকবাহিনীর সবগুলি ক্যাম্পই ছিল এক-একটি নির্যাতনকেন্দ্র। এছাড়া বিহারি নেতা এম এ শোয়েবের বাড়ি, বাচ্চা খানের বাড়ি, রেলওয়ে ডাকবাংলো ছিল নির্যাতনকেন্দ্র। এসব জায়গায় স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে নির্যাতন ও হত্যা করা হতো। মেয়েদের পাশবিক নির্যাতন করা হতো।
পাবর্তীপুর উপজেলার প্রায় পুরোটাই বধ্যভূমি ছিল। পার্বতীপুর রেল স্টেশনের পাশে ইসলামপুর এলাকায়। রেললাইন সংলগ্ন খাল, শহর সংলগ্ন তিলাই নদী, পাওয়ার হাউস কলোনি, রেলের হোম সিগন্যাল এলাকা ছিল বধ্যভূমি। এছাড়া ইসলামপুর, বিধাপাড়া, বসুপাড়া, কলকাবাড়ি, হুগলীপাড়া, খোলাহাটি, ভবানীপুর, মন্মথপুর, মোমিনপুর ইউনিয়নের খড়িবাড়ি, বুড়িডোলা, রামপুর ইউনিয়নের খিয়ারপাড়া, সাঁকোয়াপাড়া, হরিরামপুর, দেগলাগঞ্জ, আমবাড়ি, ভবানীপুর, খোরাখাই, চণ্ডীপুরের জাহানাবাদ-বাজারপাড়া, চৈতাপাড়ায় গণকবর রয়েছে। পার্বতীপুরে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন গেরিলা পদ্ধতিতে। তাঁরা ভারত থেকে গোপনে পার্বতীপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করতেন এবং দ্রুত অপারেশন চালিয়ে পুনরায় চলে যেতেন। তাঁদের আক্রমণের কৌশল ছিল ‘হিট এন্ড রান’, অর্থাৎ শত্রুকে আঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যাওয়া। গেরিলা কৌশল নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা খোলাহাটি রেল স্টেশনের পূর্ব পাশে করতোয়া নদীর ওপর রেলব্রিজ অপারেশন চালান। এতে ব্রিজটি ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে পার্বতীপুর-রংপুর রুটে ৩ দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।
সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি মুক্তিযোদ্ধারা ভবানীপুর রেল স্টেশনের দক্ষিণ দিকে শাহগ্রাম রেল ব্রিজ অপারেশন- পরিচালনা করেন। তাঁরা এক্সপ্লোসিভ দিয়ে ব্রিজটি উড়িয়ে দেন। এর ফলে ৩দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এভাবে ‘হিট এন্ড রান’ কৌশল নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা নারায়ণপুর, হাবড়া, দেউল, মন্মথপুর, রাজাবাসর, পাটিকাঘাট, খায়েরপুকুর, আনন্দবাজার, মধ্যপাড়া, পলাশবাড়ি, দুর্গাপুর, রামপুর, বোটেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ছোট-ছোট অপারেশন পরিচালনা করে লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ হন। নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে পার্বতীপুর থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান কাজী নঈমউদ্দিন ও রাজাকার কমান্ডার জহিরউদ্দিন বুদু মিয়া অস্ত্রসহ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে অন্য রাজাকাররাও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং শহর ব্যতীত পার্বতীপুরের গ্রাম এলাকা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। ১৫ই ডিসেম্বর পার্বতীপুর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হলেন- মো. মোহসীন আলী সরদার, বীর প্রতীক (পিতা আমিরউদ্দিন সরদার, নারায়ণপুর, মন্মথপুর)।
পার্বতীপুরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাঁদের নাম জানা যায়, তাঁরা হলেন- আব্দুস সবুর (পিতা বছিরউদ্দিন, নামাপাড়া), আজিজুল হক (মাতা আবেদা খাতুন, নামাপাড়া), সিদ্দিক আলী (পিতা তমিরউদ্দিন, খয়েরপুর), আব্দুল হামিদ (পিতা এবারউদ্দিন মুন্সী, বাঘাচোড়া, বেলাইচন্ডী), আবেদ আলী (পিতা নাসিরুদ্দিন, মন্মথপুর), আব্দুল মজিদ সরকার (পিতা মো. নেজামুদ্দিন সরকার, তাজনগর), আব্দুল হামিদ (পিতা আফিরৎ আলী প্রামানিক), হাজিরউদ্দিন সরকার (পিতা মজরউদ্দিন সরকার), মো. আনোয়ারুল হক (পিতা আব্দুল হক, সাকোয়াপাড়া, রঘুনাথপুর, রামপুর) মফলেউদ্দিন (পিতা রহিমউদ্দিন, রামপুর), মো. ইসমাইল (পিতা সরফরাজ, হুগলীপাড়া), ফাহিরউদ্দিন (পিতা নাছিরউদ্দিন, রামপুর), আব্বাছ আলী (পিতা বছিরউদ্দিন, দারিখমার), আব্দুল লতিফ (পিতা লালু মোহাম্মদ সরদার, হযরতপুর, মমিনপুর), আব্দুল বারী (পিতা জেহারউদ্দিন, দুর্গাপুর), জয়নাল আবেদীন (পিতা মসিরুদ্দিন, ঝিনাইকুড়ি, হাবড়া), আব্দুল জলিল (পিতা আরিফউদ্দিন প্রামানিক, শুকদেবপুর, হামিদপুর), ফজলার রহমান (পিতা মোহাম্মদ আলী, মধ্যপাড়া, হরিরামপুর), আব্দুস সবুর (পলাশবাড়ি) ও মো. রিয়াজউদ্দিন (পলাশবাড়ি)।
ইসলামপুরের বধ্যভূমি গণকবর এলাকাটিকে বাউন্ডারি দিয়ে সংরক্ষণ করে সেখানে শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন বাজার থেকে বাস স্টেশন পর্যন্ত সড়কটি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এডভোকেট খতিবুর রহমানের নামে এবং রেলওয়ের ওভার ব্রিজ থেকে কাপড়হাটি পর্যন্ত সড়কটি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মহিউদ্দিনের নামে নামকরণ করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাবের নামে আব্দুল ওহাব কিন্ডার গার্টেন স্কুল, নতুন বাজার এলাকায় বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয় এবং রিয়াজনগর এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জিন্নাহ মাঠের নামকরণ করা হয়েছে শহীদ মাঠ এবং জিন্নাহ স্কুলটি বিলুপ্ত করে পার্বতীপুর ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। খোলাহাটি সেনানীবাসের নামকরণ করা হয়েছে বীর উত্তম মাহবুব সেনানীবাস। এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বীর উত্তম মাহবুব ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ। নতুন বাজারের শহীদ মিনার সংলগ্ন এলাকায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মুক্তিযোদ্ধা হোটেল নামে একটি খাবার হোটেল পরিচালনা করছে। মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলামের নামে পারিবারিক উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল মার্কেট নামে একটি সুপার মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা সদরে নির্মিত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!