বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাংবাদিক ও সমাজসেবী পান্নালাল দাশগুপ্ত
পান্নালাল দাশগুপ্ত (১৯০৮-১৯৯৯) ভারতের সাংবাদিক ও সমাজসেবী, ১৯০৮ সালে পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) শরিয়তপুর জেলার পালং থানার কুয়ারপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শরিয়তপুরের ডোমসার উচ্চবিদ্যালয় ও বরিশালের বিএম কলেজে অধ্যয়ন করেন। বিদ্যমান উত্তাল রাজনৈতিক পারিপার্শ্বিক অবস্থা, মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন, বিভিন্ন বিদ্রোহী দলের কার্যক্রম ইত্যাদি শৈশবেই তাঁর মনে রেখাপাত করে। তিনি তাঁর পিতামহের কাছ থেকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিষয়ে জ্ঞানার্জন করেন। ১৯৩৬- ৩৭ সালের দিকে তিনি বীরভূম এলাকায় দরিদ্র গ্রামবাসীর মধ্যে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। পরবর্তীকালে গ্রামীণ অবকাঠামো পুনর্গঠন কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ভারতের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টিতে (আরসিপিআই) যোগদান করেন এবং ১৯৩৯ সালে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনৈতিক কারণে তাঁকে একাধিকবার কারাবরণ করতে হয়েছে। ১৯৫২ থেকে আগস্ট ১৯৬২ পর্যন্ত ছিল তাঁর দীর্ঘ কারাজীবন। গান্ধীর মতাদর্শে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পরবর্তীকালে তিনি আরসিপিআই থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। ১৯৬২ সালে মুক্তিলাভের পর তিনি নানাবিধ কাজে মনোনিবেশ করেন, যেমন কম্পাস নামে একটি বাংলা পত্রিকা সম্পাদনা, রাষ্ট্রের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সামাজিক পুনর্গঠন, গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে বেসরকারি উদ্যোগের পথ অনুসন্ধান ও সমষ্টিগত কর্মের জন্য সমাজতান্ত্রিক প্রগতির পথ অনুসন্ধান ইত্যাদি। তিনি ১৯৯৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধকালে পান্নালাল দাশগুপ্ত বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন সভা-সমাবেশের আয়োজন করেন। তাঁর সম্পাদিত সাপ্তাহিক কম্পাস পত্রিকায় তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়গাথা সম্পর্কিত তথ্য, প্রতিবেদন ও প্রবন্ধ প্রকাশ করতেন। এছাড়া তিনি শরণার্থী শিবির-এ স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করনে। তাঁর বাড়িটি একটি শরণার্থী শিবিরে পরিণত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১লা অক্টোবর পান্নালাল দাশগুপ্ত-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড