You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.07 | পানিশ্বর বাজার গণহত্যা (সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) - সংগ্রামের নোটবুক

পানিশ্বর বাজার গণহত্যা (সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

পানিশ্বর বাজার গণহত্যা (সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংঘটিত হয় ৭ই আগস্ট। এতে ২৫ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাকবাহিনী সরাইল সদর এলাকা দখল করে নেয়। মে মাসে স্থানীয় মুসলিম লীগ, পিডিপি-ও জামায়াতে ইসলামী সহ পাকিস্তানপন্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের উদ্যোগে শান্তি কমিটি গঠিত হয়। শান্তি কমিটির উদ্যোগে গঠিত হয় রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী। এসব বাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যায় অংশগ্রহণ করে।
সরাইল থানা শান্তি কমিটির আহ্বায়ক ছিল স্থানীয় মুসলিম লীগ নেতা মন্নাফ ঠাকুর। বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়েও শান্তি কমিটি গঠিত হয়। সরাইলের বিভিন্ন ইউনিয়নে যারা এ দায়িত্ব পালন করে, তারা হলো- নান্না মিয়া (শাহবাজপুর), ফরিদ ঠাকুর (শাহবাজপুর), এমদাদউল্লাহ (নোয়াগাঁও), আবদুল হাকিম (কালীকচ্ছ), ময়দর আলী (পাকশিমুল), মোবারক মাস্টার (পানিশ্বর দক্ষিণ), এমদাদুল হক টাক্কাবালী (চুন্টা) প্রমুখ।
পানিশ্বর বাজারে গণহত্যাটি সংঘটিত হয় ৭ই আগস্ট। তখন শ্রাবণ মাস। ভরা বর্ষাকাল। বাজারের চারদিকে পানি। অপেক্ষাকৃত নিরাপদ মনে করে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুস সাত্তারের নেতৃত্বে আবদুল আলী, জিল্লুর রহমান ও আবদুল্লাহসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা পানিশ্বরের পার্শ্ববর্তী শোলাবাড়ি গ্রামে অবস্থান করছিলেন। চুন্টার হরমুজ আলী (পিতা রবিউল্লাহ) এবং মলাই মিয়া (পিতা তরিকত উল্লাহ)-র কাছ থেকে খবর পেয়ে পাকবাহিনীর ভৈরব বাজার ক্যাম্প থেকে গানবোট নিয়ে ৫০-৬০ জনের একটি দল পানিশ্বর যায়। পাকসেনারা পানিশ্বর বাজারে পৌছেই বাজারের দোকান-পাটে অগ্নিসংযোগ করে। এতে সমস্ত বাজার পুড়ে যায়। এর মধ্যে স্থানীয় রাজাকাররা লুটপাট চালায়। অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি পাকসেনারা এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। দোকানদার ও আশপাশের গ্রাম থেকে বাজার করতে আসা লোকেরা তখন প্রাণভয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে। পাকসেনাদের গুলিতে এখানে ২৫ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন। তাদের মধ্যে স্থানীয় পাঁচজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- ময়দর আলী (পিতা মদন আলী, শাখাইতি; ব্যবসায়ী), কুদ্দস মিয়া (পিতা মন্নর আলী, শাখাইতি; ব্যবসায়ী), বজলু মিয়া (পিতা হাজি গণি মিয়া, শোলাবাড়ি; ব্যবসায়ী), আবদুল জলিল (পিতা চান্দালি মিয়া, শোলাবাড়ি; কৃষক) এবং আবদুল আলিম মাস্টার (দেওবাড়িয়া, শিক্ষক)।
অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পাকসেনারা চলে যায়। এরপর বাজার করতে আসা মানুষজনের আত্মীয়-স্বজনরা এই নির্মম ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসেন এবং স্বজনদের লাশ সনাক্ত করে নিজ-নিজ বাড়িতে নিয়ে দাফন করেন। [মানবর্দ্ধন পাল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড