পাতরাইল যুদ্ধ (ভাঙ্গা, ফরিদপুর)
পাতরাইল যুদ্ধ (ভাঙ্গা, ফরিদপুর) সংঘটিত হয় ৮ই ডিসেম্বর পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে। মাদারীপুর থেকে ফরিদপুর যাওয়ার পথে পাকসেনাদের একটি দল পাতরাইল গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। তারাও পাল্টা-আক্রমণ করে। ফলে দুপক্ষের মধ্যে এ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ৩৯ জন পাকসেনা হতাহত হয় এবং বাকিরা আত্মসমর্পণ করে। অপরপক্ষে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
পাকসেনারা পাতরাইল গ্রামের একটি বাড়িতে ওঠে এবং খাবার চায়। গৃহকর্তা তার ব্যবস্থা করেন। সেই সঙ্গে তিনি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে খবর পাঠান। মুক্তিযোদ্ধাদের পরামর্শক্রমে পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ত্যাগ করেন। মিয়াপাড়া গ্রাম থেকে সানোয়ার মোল্লা ও দরশাহ বাজার থেকে আবদুল জব্বার মাতুব্বরের নেতৃত্বে যথাক্রমে ২৫ ও ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা বাড়িটির চারপাশে অবস্থান গ্রহণ করেন। পরে আবদুল খালেকের নেতৃত্বে আরো ২৫ জনের একটি দল এসে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয়। তাঁরা খুব সাবধানে বাড়ির বৈঠকখানার পেছনের ঝোপে আশ্রয় নেন। গোপনীয়তা সত্ত্বেও পাকসেনারা তাঁদের উপস্থিতি টের পেয়ে যায়। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের সবাই পজিশন নিতে-না-নিতেই বৈঠকখানার দিক থেকে গুলি শুরু হয়। প্রায় আধঘণ্টা ধরে দুপক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হওয়ার পর পাকসেনারা বিপর্যস্ত হয়। তাদের তুলনায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান ছিল সুবিধাজনক। এক সময় পাকসেনাদের দিক থেকে গুলিবর্ষণ বন্ধ হয়ে যায়।
ততক্ষণে মুক্তিযোদ্ধারা তিনদিক থেকে বৈঠকখানা ঘিরে ফেলেন। কয়েকজন রাইফেল হাতে দরজার দিকে এগিয়ে যান। পাকিস্তানি সেনাদের বাধা দেয়ার আর ক্ষমতা ছিল না। সঙ্গীদের রক্তাক্ত মৃতদেহের পাশে হাতের অস্ত্র রেখে মাথার ওপর দুহাত তুলে সবাই দাঁড়িয়ে যায়। তখন পর্যন্ত অক্ষত অবস্থায় ছিল ১১ জন, গুরুতর আহত ছিল ৯ জন এবং বাকিরা মৃত অথবা মুমূর্ষু ছিল। আহতদের কেউ-কেউ গ্রামের লোকজনের দা-কুড়ালের আঘাতে মারা যায়।
এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর শহীদ হন। জব্বার গ্রুপের এ কে এম সুলতানুল আলম, মোহাম্মদ আবুল হোসেন, দুলাল চন্দ্র রায়, ইসকেন্দার আলী, বেনজীর, আবুল বাসার মিয়া ও সরোয়ার গ্রুপের কোরণউদ্দিন মোল্লা, বেলায়েত হোসেন, হারুন মিয়া, নরুল হক, রেজাউল ইসলাম মোল্লা, গিয়াসউদ্দিন এবং খালেক গ্রুপের আনোয়ার হোসেন, শেখ ইয়াদ আলী, বাকী মিয়া, আজিজুল হক, সাহাবুদ্দিন বাহার, সোবাহান খান, ইসকেন্দার প্রমুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৮ই ডিসেম্বর ফরিদপুর পুলিশ লাইন্সে বন্দি পাকিস্তানি সেনাদের ভারতীয় বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হয়। [আবু সাঈদ খান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড