You dont have javascript enabled! Please enable it!

পাথরঘাটার যুদ্ধ (বাসাইল, টাঙ্গাইল)

পাথরঘাটার যুদ্ধ (বাসাইল, টাঙ্গাইল) সংঘটিত হয় ২৫শে জুলাই। টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল উপজেলার অন্তর্গত এ গ্রামে জুন মাসে পাকবাহিনী একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। তাদের উৎখাতের জন্য ২৫শে জুলাই মুক্তিবাহিনীর ৯০ সদস্যের একটি দল এ ক্যাম্পে অভিযান চালায়। আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ছয়টি নৌকায় পাকিস্তানি পতাকা উড়িয়ে পাথরঘাটার দিকে যাত্রা করেন। পাকবাহিনীকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রত্যেক নৌকার সামনে ও পেছনে পাকসেনাদের পোশাক ও হেলমেট পরিহিত দু-তিন জন মুক্তিযোদ্ধাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। বিকেলের দিকে নৌকাগুলো ক্যাম্পের কাছাকাছি পৌঁছলে পাহারারত একজন পাকসেনার সন্দেহ হয়। সে রাইফেল উঁচিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের চ্যালেঞ্জ করে। সঙ্গে-সঙ্গে দুজন মুক্তিযোদ্ধা নৌকা থেকে নেমে সৈনিকটির মাথায় আঘাত করেন এবং দ্রুত ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের সীমানার মধ্যে ঢুকে পড়েন। হানাদাররা তখন বিশ্রাম নিচ্ছিল। হঠাৎ প্রচণ্ড গুলি ও গ্রেনেড আক্রমণে ভীত- সন্ত্রস্ত হয়ে কোনোরূপ প্রতিরোধ ছাড়াই তারা পালাতে শুরু করে। মাত্র ২০ মিনিটের অভিযানে গোটা ক্যাম্প খালি হয়ে যায়। এ-যুদ্ধে হানাদারদের ১২ জন নিহত, ৬ জন আহত এবং ৮ জন বন্দি হয়। প্রচুর পরিমাণে রেশন সামগ্রী, দুটি আড়াই ইঞ্চি মর্টার, ১০টি কারবাইন, একটি ৮২ ব্লান্ডার সাইট, দুটি এলএমজি ও ২০টি রাইফেল মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়। এভাবে মুক্তিবাহিনী পাথরঘাটা দখল করে সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে।
পরবর্তীতে সেপ্টেম্বর মাসে পাকবাহিনী ক্যাম্পটি পুনর্দখল করে। অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে কাদের সিদ্দিকী পাকবাহিনীকে পাথরঘাটা থেকে উচ্ছেদ করার জন্য কোম্পানি কমান্ডার লোকমান হোসেনকে নির্দেশ দেন। তিনি একটি মর্টার গ্রুপসহ এক কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আক্রমণ চালান। মর্টার গ্রুপে ছিলেন ভূঞাপুরের তেঘরির হামিদুল হক খান আলতাফ, সরইয়ের আবদুল মালেক, বামনহাটার রোস্তম আলী, চরাঞ্চলের রানু ও সখিপুর পাহাড়ের অপর এক মুক্তিযোদ্ধা। শেষ রাতের দিকে আক্রমণ শুরু হয়। মর্টার গ্রুপ পূর্বদিক থেকে আক্রমণ পরিচালনা করে। এক পর্যায়ে কাদের সিদ্দিকীও এসে যোগ দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ছোড়া শেল হানাদার ক্যাম্পে আঘাত হানে। একই সঙ্গে এলএমজি ও এসএলআর থেকেও গোলাবর্ষণ চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের এই সাঁড়াশি আক্রমণে টিকতে না পেরে এক পর্যায়ে পাকবাহিনী ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যায়। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!