You dont have javascript enabled! Please enable it!

পাটকেলঘাটা-পুটিখালি গণহত্যা (সাতক্ষীরা সদর)

পাটকেলঘাটা-পুটিখালি গণহত্যা (সাতক্ষীরা সদর) সংঘটিত হয় ২৩শে এপ্রিল সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পাটকেলঘাটা বাজার ও পুটিখালি এলাকায়। মনু কসাইয়ের সহযোগিতায় পাকবাহিনী এ ঘটনা ঘটায়।
কপোতাক্ষ নদের একটি ব্রিজ-সংলগ্ন এলাকা পাটকেলঘাটা নদীতীরবর্তী হওয়ায় স্থানটি বাণিজ্যিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মনু বিহারি মাংসের ব্যবসা করে অল্পদিনে বেশ ধন- সম্পদের মালিক হয়ে যায়। এ কারণে এলাকায় সে মনু কসাই নামে পরিচিত। অবাঙালি এ কসাই মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি নিধনের কসাই হিসেবে অবতীর্ণ হয়।
২৩শে এপ্রিল শুক্রবার লোকজন জুমার নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। হঠাৎ খবর আসে যে, সাতক্ষীরা সদর থেকে পাকসেনারা আসছে পাটকেলঘাটা আক্রমণ করতে। এ খবর শুনে সাধারণ মানুষ যখন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ব্যস্ত, তখন স্থানীয় কয়েকজন রাজাকার ও মনু কসাই তৎপর হয়ে ওঠে তারা ৩০-৩৫ জন লোককে গরুবাঁধা দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে এবং বাজার এলাকায় লুটপাট চালায়। ততক্ষণে কয়েকজন পাকসেনা পাটকেলঘাটায় এসে গেছে। তাদের সহায়তায় মনু ও তার দোসররা বাঁধা মানুষগুলোকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করে। তাদের আর্তচিৎকারে পাটকেলঘাটার আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এরপর চলে সংখ্যালঘু নিধনযজ্ঞ। তারা বৈদ্যনাথ পাল, নিতাইচন্দ্র সাধু ও হরেন্দ্রনাথ সাধুকে বাজারের ওপর প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে। হায়দার বিশ্বাস নামে একজনকে ধরে তার হাতে কেরোসিন ও ম্যাচ দিয়ে রাজাকাররা নির্দেশ দেয় কুণ্ডপাড়ার হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দিতে। তিনি অস্বীকার করলে রাজাকাররা তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে শরীরে পাট জড়িয়ে তাতে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়। জীবন্ত দগ্ধ হায়দার বিশ্বাসের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে, অন্যদিকে রাজাকাররা পৈচাশিক উল্লাসে মেতে ওঠে। তারপর হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ব্যাপক লুটপাট চালানোর পর বাজারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে পুরো বাজারটি এক ধ্বংস্তূপে পরিণত করে। এ খবর শুনে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক ও তার কয়েকজন সহযোগী এসে হায়দারের লাশ তার নিজের বাড়িতে কবর দেন।
পাটকেলঘাটায় তাণ্ডব চালানোর পর হানাদাররা পুটিখালি গ্রামে হত্যাকাণ্ড চালায়। সেখানে তারা হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে হত্যা করে ও লুটপাট চালায়। দুটি স্থানেই নিহত হওয়ার পাশাপাশি অনেকে গ্ররুতর আহত হন। তাদের কেউ-কেউ পরে মারা যান।
পাটকেলঘাটা-পুটিখালি গণহত্যায় কতজন শহীদ হন, তা বলা কঠিন। তবে যাদের সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে, তারা হলেন- বৈদ্যনাথ পাল (পিতা জ্ঞানেন্দ্রনাথ পাল, পাটকেলঘাটা), নিতাইচন্দ্র সাধু, হরেন্দ্রনাথ সাধু (পাটকেলঘাটা), হায়দার বিশ্বাস (পিতা কায়েম বিশ্বাস, পাটকেলঘাটা), শামসুর রহমান (পিতা করম শেখ, পুটিখালি), তার ভাই আব্দুর রহমান, আব্দুল মজিদ মজি (পুটিখালি), আব্দুর রহমান আদর (ঐ), জামাল (ঐ), ছিদাম (পিতা শাহাবুদ্দিন, ঐ), বদরউদ্দিন বুদো (পুটিখালি), ফজা শেখ (পিতা সাইফুর শেখ, ঐ), আজিজার রহমান (পুটিখালি) এবং হাজরা ঋষি (ঐ)। গুরুতর আহতদের মধ্যে একজন হলেন মোহর আলী শেখ। [মিজানুর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!