পাটুয়া যুদ্ধ (নরসিংদী সদর)
পাটুয়া যুদ্ধ (নরসিংদী সদর) সংঘটিত হয় ১২ই ডিসেম্বর। এতে ২১ জন পাকসেনা আত্মসমর্পণ করে।
নরসিংদীতে প্রথমে যুদ্ধ শুরু হয় নিয়মিত পদ্ধতিতে। পরবর্তীতে গণবাহিনী গড়ে ওঠে এবং মুক্তিযুদ্ধ গণযুদ্ধে পরিণত হয়। এ-যুদ্ধে সাবেক ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, সেনাবাহিনী, আনসার, মুজাহিদ ও পুলিশ বাহিনীর জওয়ানরা এবং ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক-জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা হানাদারদের বিরুদ্ধে একের পর এক আক্রমণ চালাতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক সাফল্য ও তৎপরতায় হানাদারদের মনোবল ভেঙ্গে পড়ে। তারা সর্বদা সন্ত্রস্ত অবস্থায় দিন কাটাতে থাকে। এদিকে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের দিনও দ্রুত এগিয়ে আসতে থাকে। ৮ই ডিসেম্বরের মধ্যে নরসিংদী সদর ব্যতীত জেলার সমস্ত এলাকা সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়ে যায়। পাকবাহিনী নরসিংদী শহরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
প্রথম থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা এত ব্যাপক ছিল যে, একটু সময়ের জন্যও হানাদাররা বিশ্রাম পায়নি। যেদিন কিছুই করা সম্ভব হয়নি, সেদিন অন্তত তাদের বাংকারে কিছু গুলি ছুড়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে তারা দিনরাত গুলি ছুড়তে থাকত। ১১ই ডিসেম্বর শিবপুরের মজনু মৃধার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা নরসিংদী শহরের টেলিফোন এক্সচেঞ্জটি উড়িয়ে দেন। পরের দিন ১২ই ডিসেম্বর সকাল বেলা সংঘটিত হয় নরসিংদীর মুক্তিযুদ্ধের শেষ যুদ্ধ। সিরাজ উদ্দিন আহমেদ- ওরফে ন্যাভাল সিরাজ ও মুহম্মদ ইমাম উদ্দিনের নেতৃত্বে জিনারদীর কাছে পাটুয়া গ্রামে সংঘটিত এক ঘণ্টাব্যাপী প্রচণ্ড যুদ্ধে ২১ জন হানাদার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অস্ত্রশস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। ফলে ১২ই ডিসেম্বর নরসিংদী সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়।
নরসিংদী মুক্ত হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গেই ন্যাভাল সিরাজ, ইমাম উদ্দিন ও হাকিমের নেতৃত্বে নরসিংদীতে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে পাঁচদোনা এলাকায় বিজয় মিছিল বের করা হয়। এলাকার সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং হাজার-হাজার জনতা এ মিছিলে অংশগ্রহণ করে। এ মিছিলের সংবাদ পাওয়া মাত্র মনির, মান্নান, মোতালেব পাঠান এবং অন্যদের নেতৃত্বে শেখের চর, মাধবদী ও আশপাশের এলাকায়ও বিজয় মিছিল বের করা হয়। ক্রমান্বয়ে নরসিংদীর সকল এলাকায় বিজয় মিছিল করা হয়। এমনিভাবে নরসিংদীতে নয় মাসের শ্বাসরুদ্ধকর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। সর্বস্তরের জনসাধারণ মুক্তির আনন্দে উচ্ছল হয়ে ওঠে নরসিংদী মুক্ত হওয়ার পর ঐদিনই বিকেলে ৪ গার্ড রেজিমেন্ট ও মিত্রবাহিনীর ৩১১ মাউন্টেন ব্রিগেড নরসিংদীর চরাঞ্চলে পৌঁছে যায় এবং ১৩ তারিখ তারা ঢাকার দিকে অগ্রসর হয়। ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ হানাদারমুক্ত হয়। ২০শে ডিসেম্বর নরসিংদী থানার মুক্তিযুদ্ধের প্রধান দুর্গ নেহাব গ্রামের স্কুল মাঠে আয়োজিত এক বিরাট সমাবেশে সিরাজ-ইমাম বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের গণসংবর্ধনা দেয়া হয়। [মুহম্মদ ইমাম উদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড