You dont have javascript enabled! Please enable it!

পাঁচপীর যুদ্ধ (উলিপুর, কুড়িগ্রাম)

পাঁচপীর যুদ্ধ (উলিপুর, কুড়িগ্রাম) ১২ই সেপ্টেম্বর সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এ-যুদ্ধে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
কুড়িগ্রাম-উলিপুরের মধ্যবর্তী স্থান পাঁচপীর, যা দুর্গাপুর নামেও পরিচিত। এখানে রেলস্টেশন, নতুন ও পুরাতন দুর্গাপুর বাজারে পাকিস্তানিদের ক্যাম্প ছিল। এ ক্যাম্পে ডাগগিল মওলানা হিসেবে খ্যাত রাজাকারদের শিরোমণি আব্দুল হামিদের সরব উপস্থিতি ছিল। উর্দু-ফার্সিতে পারদর্শী থাকায় ডাগগিল মওলানা সহজেই পাকিস্তানিদের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠে। কথিত আছে, স্বাধীনতাবিরোধীদের নেতা আব্দুল হামিদ ওরফে ডাগগিল মওলানা ৭১-এ প্রতিদিন সকালে একজন বাঙালিকে হত্যা না করে সকালের নাস্তা খেত না। দুর্গাপুর হয়ে পাকিস্তানি বাহিনী রেল ও সড়ক পথে খাদ্য ও সামরিক দ্রব্য সরবরাহ করত। তারা চিলমারী পর্যন্ত এ রেলপথ ব্যবহার করে নানা অভিযান পরিচালনা করত। ফলে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীকে দমন করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা রেললাইন অকেজো করার জন্য ট্রেন উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সাহেবগঞ্জ সাব-সেক্টরের আকরাম কোম্পানির অধিনায়ক কমান্ডার আকরাম হোসেনের নেতৃত্বে ২০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল কুড়িগ্রাম সদরের মোঘলবাসার দক্ষিণ দিক থেকে ধরলা নদী অতিক্রম করে দুর্গাপুর রেল স্টেশনের উত্তর পাশের একটি ঝোপে অবস্থান নেয়। একই সঙ্গে এ সেক্টরের কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল হাই, বীর প্রতীক ও অংশগ্রহণ করেন। আব্দুল হাই ও আকরাম হোসেনের কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা রেল লাইনের কাঠের স্লিপারের নিচে এন্টিট্যাঙ্ক মাইন স্থাপন করে নিরাপদ দূরত্বে চলে যান। ভোরবেলা রসদ ও পাকিস্তানি সৈন্যদের নিয়ে একটি ট্রেন চিলমারী অভিমুখে যাওয়ার সময় দুর্গাপুরের কাছে মাইন বিস্ফোরণের শিকার হয়। এতে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ দুটি বগি পার্শ্ববর্তী খাদে পড়ে যায়। পাকিস্তানিদের বিপুল পরিমাণ খাদ্য ও সামরিক দ্রব্য এ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর সেখানে পাকিস্তানিরা ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে। উভয় পক্ষের যুদ্ধে কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয়। অপরদিকে হানাদার বাহিনীর গুলিতে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা নওয়াব আলী, আবুল কাশেম কাচু, মোন্তাজ আলী, হীতেন্দ্র নাথ ও গোলজার হোসেন শহীদ হন। বুড়াবুড়ী ইউনিয়নের সাদী মৌজায় এঁদের কবর রয়েছে।
এ-যুদ্ধের পর সমগ্র দুর্গাপুর এলাকায় পাকিস্তান সৈন্য ও -রাজাকা-রা বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা করে এবং শতশত বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। পাকিস্তানিরা এরপর মুক্তিযোদ্ধা জোবায়ের আনছারী, মুক্তিযোদ্ধা মুকুল আনছারীর পিতা আব্দুল জব্বার আনছারী (নতুন দুর্গাপুর বাজারের বিশিষ্ট ব্যক্তি) ও তাঁর জামাতাকে ধরে নিয়ে যায় রাজারহাট ঠাঁটমারী ব্রিজ পাকিস্তানি ক্যাম্পে। সেখানেই তাদের হত্যা করে বধ্যভূমিতে ফেলে দেয়। [এস এম আব্রাহাম লিংকন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!