You dont have javascript enabled! Please enable it!

পাঁচবিবি বাজার গণহত্যা (পাঁচবিবি, জয়পুরহাট)

পাঁচবিবি বাজার গণহত্যা (পাঁচবিবি, জয়পুরহাট) ২০শে এপ্রিল সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ গণহত্যায় বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী নিহত হয়।
জয়পুরহাট জেলায় পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা শুরু হয় পাঁচবিবি বাজার গণহত্যার মাধ্যমে। ২০শে এপ্রিল উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর হাটের দিন বেলা ৩টার দিকে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা থেকে পাকিস্তানি বাহিনী ৬টি গাড়িতে করে ভারী অস্ত্র নিয়ে পাঁচবিবিতে অনুপ্রবেশ করে। পাঁচবিবি আসার পথে পাকিস্তানি সৈন্যরা হাটুরে ভজন বর্মণ (খেজুরপাড়া গ্রাম), অফির উদ্দিন ও সুকটাকে (সাড়াপাড়া গ্রাম) হত্যা করে। এরা জয়পুরহাট জেলার প্রথম শহীদ। তিনজনই পাঁচবিবি উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের বাসিন্দা। এরপর তারা পাঁচবিবি হাটে প্রবেশ করে নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে। বারোয়ারি মন্দিরের সামনে ননীগোপাল কুণ্ডুর দোকানে তখন স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ছিল। তারা বাংলাদেশের পতাকাসহ ননীগোপালকে মুহূর্তের মধ্যে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেয়। একই সঙ্গে গুরুতর আহত হন ননীগোপালের ভগ্নিপতি নীলমণি কুণ্ডু। ‘জয় বাংলা” বলে চিৎকার দেয়ায় ছাত্তার নামে দানেজপুরের এক অপ্রকৃতিস্থ : ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে। পাকিস্তানি হানাদাররা প্রাণভয়ে ছোটা ভীত-সন্ত্রস্ত মানুষদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া পাঁচবিবি বাজার গণহত্যার শিকার আরো যাদের নাম জানা যায়, তারা হলেন- পাঁচবিবি থানার দারোগা আফছার ও দুজন কনস্টেবল, কলেজের ছাত্র নজরুল ইসলাম এবং রমজান নামে অপর একজন। আয়মা রসুলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী বিমল কুমার কুণ্ডু এদিন নিখোঁজ হন। তিনি আর কোনোদিন ফিরে আসেননি। পাঁচবিবিতে প্রবেশের পর পাকিস্তানি সৈন্যরা মানুষ হত্যার পাশাপাশি মর্টারের গোলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। তারা পাঁচবিবি থানা, ইপিআর কোয়ার্টার্স, পাঁচবিবি নছির মণ্ডল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পাঁচবিবি লালবিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্মিত শহীদ মিনার, ছাত্র ইউনিয়ন- কার্যালয়সহ আরো ঘরবাড়ি ও প্রতিষ্ঠান মর্টারের গোলায় বিধ্বস্ত করে। এছাড়া পাঁচবিবি বাজারে দোকানপাট, তুরিপাড়া (রেল স্টেশনের কাছে), দমদমা হিন্দুপাড়া, মাতাইশ মঞ্জিল, সীতা-মাদখুর মাদ্রাসা, মালঞ্চাসহ অনেক গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে। পরে পাকিস্তানি বাহিনী সিও অফিস (সার্কেল অফিস) ও স্টেডিয়ামে ক্যাম্প স্থাপন করে। মেজর আফজাল ও মেজর পিটার পাকিস্তানি বাহিনীর ইনচার্জ হিসেবে গণহত্যায় নেতৃত্ব দেয়। [রেহানা পারভীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!