পাঁচলাইশ থানা ডাম্পিং ডিপো গণকবর (চট্টগ্রাম)
পাঁচলাইশ থানা ডাম্পিং ডিপো গণকবর (চট্টগ্রাম) চট্টগ্রাম শহরে পাঁচলাইশ থানা থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে অবস্থিত। এখানে তখন কোনো জনবসতি ছিল না। এটি ছিল চট্টগ্রাম পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলার একটি স্থান। পুরো শহরের ময়লা এখানে ডাম্প করা হতো। তাই এলাকাটি ‘ময়লার ডিপো’ নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে এটি ‘সুগন্ধা আবাসিক এলাকা’ এবং অভিজাত শ্রেণির অন্যতম আবাসস্থল।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাঁচলাইশ থানাকে কেন্দ্র করে ষোলশহর রেলগেইট, ওয়াজেদিয়া প্রভৃতি এলাকায় পাকবাহিনী ও রাজাকারদের অনেকগুলো ক্যাম্প ছিল। এসব ক্যাম্পে যাদের নির্যাতন ও হত্যা করা হতো, তাদের লাশ এই ডাম্পিং ডিপোতে ফেলা হতো। এছাড়া নিজাম রোড, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, শুলকবহর, কাপাসগোলা প্রভৃতি এলাকায়ও লোকজনদের হত্যা করে তাদের লাশ এখানে ফেলা হতো।
পাঁচলাইশ থানার সার্সন রোডে ছিল অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের বাংলো। এই বাংলোগুলো পাকসেনাদের বড় কর্মকর্তারা বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করত। বিভিন্ন স্থান থেকে নারীদের ধরে এনে এখানে দিনের পর দিন নির্যাতন করা হতো। তারপর তাদের হত্যা করে লাশগুলো এই ডাম্পিং ডিপোতে ফেলা হতো। প্রবর্তক সংঘ হত্যাকাণ্ডে নিহতদের লাশও এখানে ফেলা হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকেও কখনো-কখনো এখানে লাশ ফেলা হয়েছে। এভাবে প্রায় পুরো শহর থেকেই বাঙালিদের লাশ এনে এখানে ফেলা হতো। যেহেতু পৌরসভার গাড়ি প্রতিদিনই ডাম্পিং ডিপোতে ময়লা-আবর্জনা ফেলত, সেহেতু লাশগুলো ময়লা- আবর্জনায় চাপা পড়ে যেতো। তাই এ স্থানটিকে গণকবর বলা হতো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বজনহারানো অনেকেই এই ডাম্পিং ডিপোতে তাদের স্বজনদের খুঁজেছেন, কিন্তু পাননি। [সাখাওয়াত হোসেন মজনু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড