You dont have javascript enabled! Please enable it!

পাকবাহিনীর নান্দিনা ক্যাম্প অপারেশন (জামালপুর সদর)

পাকবাহিনীর নান্দিনা ক্যাম্প অপারেশন (জামালপুর সদর) পরিচালিত হয় আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে। এ অপারেশনে ৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য ও ১ জন আলবদর নিহত, ১ জন আলবদর আহত হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। ২-৩ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।
জামালপুর সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার পূর্বে নান্দিনার অবস্থান। ভৌগোলিকভাবে নান্দিনার অবস্থান ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থানটি ১১ নম্বর সেক্টরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ঘাঁটি কামালপুর ও পুরকাশিয়ার অতি নিকটবর্তী এবং জামালপুর, ময়মনসিংহ ও শেরপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর রসদ সরবরাহের সংযোগস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখান থেকে এ তিনটি অঞ্চলের ওপর নজর রাখা সম্ভব ছিল। তাই পাকিস্তানি বাহিনী নান্দিনা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন নান্দিনা মহারানী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্যাম্প স্থাপন করে। এ সময় বিদ্যালয়ের রাস্তার পাশে একটি ভবনের ছাদ ঢালাই চলছিল। এ ভবনের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙ্কার তৈরি করে। দিনের বেলায় তারা এখানেই অবস্থান করত। মাঝে-মধ্যে রাতেও থাকত। রাতে আলবদর রাজাকাররা থাকত নান্দিনা কলেজে।
আগস্ট মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কিছু বাঙালি সৈনিক চাকরি ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- রোজ মাহমুদ মণ্ডল, মোহাম্মদ খসরু ও গোলাম মোহাম্মদ হামিদ। এঁদের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি গেরিলা গ্রুপ গড়ে ওঠে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহে স্থায়ী সেনা ইউনিট স্থাপন করায় এ অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী-র পক্ষে স্থায়ী কোনো হাইড আউট সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্তের বাইরে অবস্থান করতেন এবং অতর্কিতে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে গেরিলা কায়দায় আক্রমণ করে ফিরে যেতেন।
সেক্টর কমান্ডারের নির্দেশে গেরিলা গ্রুপটি নান্দিনা ক্যাম্প আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। নান্দিনায় সোমবার ও শুক্রবার হাট বসত। মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা রেকি করার জন্য হাটে লোক পাঠিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁরা পাকবাহিনীর ক্যাম্পের ওপর গেরিলা আক্রমণ চালান। অতর্কিত আক্রমণে পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকারআলবদররা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। এতে ৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য ও ১ জন আলবদর নিহত, ১ জন আলবদর আহত হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। এ অপারেশনে পাকবাহিনীর ক্যাম্পের যথেষ্ট ক্ষতি সাধিত হয়। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে ২-৩ জন আহত হন। [সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!