You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.16 | পাকহানাদার বাহিনীর নওগাঁ থানা দখল (নওগাঁ সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

পাকহানাদার বাহিনীর নওগাঁ থানা দখল (নওগাঁ সদর)

পাকহানাদার বাহিনীর নওগাঁ থানা দখল (নওগাঁ সদর) ১৬ই এপ্রিল পাকবাহিনী রাজশাহী শহর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেয়। ইতঃপূর্বে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে রাজশাহীতে অবস্থানরত পাকবাহিনী প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে পাকিস্তানি কর্নেল তাজ-এর নেতৃত্বে ঢাকা থেকে সৈন্য ও রসদ সংগ্রহ করে তারা শক্তি বৃদ্ধি করে। এরপর ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের পাকিস্তানি সৈন্যরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে একটি রেলপথে এবং অন্যটি নওগাঁর নওহাটা-মান্দা সড়কপথে অগ্রসর হয়। রেলপথের দলটি ২১শে এপ্রিল বিশেষ ট্রেনযোগে আত্রাই রেলস্টেশনের পাশে নদীর তীরে অবস্থান নেয়। রেলস্টেশন ও আশপাশের ঝোঁপঝাড়ে গরিব অসহায় মানুষজন ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে বসবাস করত। বেলা ৩টার দিকে পাকবাহিনী তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে অনেক নিরীহ মানুষ নিহত হয়।
হানাদার বাহিনীর একটি দল মুক্তিবাহিনীর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত আহসানগঞ্জ রেলসেতু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। অপর একটি দল নিকটবর্তী সাহেবগঞ্জ বাজারে গিয়ে আগুন লাগায়। তখন সাহেবগঞ্জ বাজার জনশূন্য ছিল। পাকসেনারা ট্রেনের মধ্যে রাত কাটিয়ে ২২শে এপ্রিল সকালে রেলপথে রাণীনগরের কাছাকাছি চকের ব্রিজের নিকট পৌঁছে। সেখান থেকে তারা রাণীনগর রেলস্টেশনের দিকে শেল নিক্ষেপ করে। আগের রাতে নওগাঁ থেকে এসে মুক্তিকামী আনসার ও মুজাহিদ বাহিনীর একটি দল রাণীনগর গিয়ে চকের রেলব্রিজ নষ্ট করে দেয়। ব্রিজটি ভাঙ্গা দেখে পাকসেনা বহনকারী ট্রেনটি সেখানে থামে। একদল সৈন্য ট্রেন থেকে নেমে নিকটস্থ চক বলরাম, বেলবাড়ি, দাউদপুর প্রভৃতি গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং সামনে যেসব ব্যক্তিকে পায় তাদের গুলি করে হত্যা করে। এরপর তারা ব্রিজটি মেরামত করে সকাল ৯টায় চকের ব্রিজ অতিক্রম করে এবং সান্তাহার রেলস্টেশনের দিকে অগ্রসর হয়। পথে রাণীনগর স্টেশনের পূর্বপাশে অবস্থিত পুকুরপাড়ে রাজাপুর গ্রামের সফিউদ্দিন খলিফা ও কায়েম উদ্দিনকে তারা গুলি করে হত্যা করে। রাণীনগর রেলস্টেশনের নিকটস্থ দোকানগুলোতে হানাদাররা আগুন লাগায়। রাণীনগর-সান্তাহার রেলপথের পূর্বদিকে বগুড়া জেলার কেল্লাপাড়া গ্রামের এক বৃদ্ধ ও তার স্ত্রীকে তারা হত্যা করে। ট্রেনটি ২২শে এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে সান্তাহার রেলওয়ে জংশনে প্রবেশ করে। অতঃপর দুপুর দেড়টায় হানাদাররা শেল নিক্ষেপ করতে-করতে তাদের একটি দল নওগাঁ শহরের দিকে অগ্রসর হয়। অপর দলটি সান্তাহারে অবস্থান নেয়। নওগাঁ শহরে এসে গাড়িতে তারা শহর প্রদক্ষিণ করে। এরপর নওগাঁ থানা দখল করে নেয়। [আইয়ুব হোসেন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড